ইরানে আরও ২ বিক্ষোভকারীর ফাঁসি, বিশ্বব্যাপী নিন্দা

ইরানের আদালতে একজন বিচারক তার বক্তব্য দিচ্ছেন। আসামীর কাঠগড়ায় সাইয়েদ মোহাম্মদ হোসেইনি। ছবি: রয়টার্স।
ইরানের আদালতে একজন বিচারক তার বক্তব্য দিচ্ছেন। আসামীর কাঠগড়ায় সাইয়েদ মোহাম্মদ হোসেইনি। ছবি: রয়টার্স।

পুলিশি হেফাজতে কুর্দি নারী মাহসা আমিনির মৃত্যুর ঘটনায় ইরানজুড়ে বিক্ষোভের সময় নিরাপত্তা বাহিনীর ১ সদস্যকে হত্যার অভিযোগে ২ জনকে ফাঁসি দিয়েছে দেশটির সরকার।

গতকাল শনিবার কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

কারাতে চ্যাম্পিয়ন মেহদি কারামি (২১) ও শিশুদের স্বেচ্ছাসেবক ক্রীড়া প্রশিক্ষক সাইয়েদ মোহাম্মদ হোসেইনির (২০) বিরুদ্ধে ইরানের আধাসামরিক বাহিনী বাসিজের এক সদস্যকে হত্যার অভিযোগ আনা হয়। একই মামলায় আরও ৩ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও ১১ জনকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম আইআরএনএতে প্রকাশিত বিবৃতিতে ইরানের বিচার বিভাগ জানিয়েছে, 'যে অপরাধের কারণে রুহুল্লাহ আজমাইনকে অন্যায়ভাবে শাহাদাত বরণ করতে হয়েছে, তার পেছনে দায়ী প্রধান অপরাধী মোহাম্মাদ মেহদি কারামি ও সাইয়েদ মোহাম্মাদ হোসেইনিকে আজ সকালে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে।'

বিক্ষোভের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কারণে এ নিয়ে মোট ৪ জনকে ফাঁসি দেওয়া হলো।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ কূটনীতিক জোসেপ বোরেল গতকাল ২ জনকে ফাঁসি দেওয়ার ঘটনার নিন্দার পাশাপাশি ইরানকে তাৎক্ষণিকভাবে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া বন্ধ ও কারাদণ্ড বাতিলের আহবান জানান।

বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, 'এটা বেসামরিক ব্যক্তিদের বিক্ষোভ দমাতে ইরান সরকারের সহিংস প্রচেষ্টার আরও এক নমুনা।'

ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ প্রতিনিধি রবার্ট ম্যালে ফাঁসির ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বলেন, তারা 'প্রহসনমূলক বিচারের সম্মুখীন হয়েছেন' এবং 'এ ধরনের মৃত্যুদণ্ড বন্ধ হওয়া উচিত'।

যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেমস ক্লেভারলি এ ঘটনায় নিন্দা জানান। তিনি ইরানকে 'শিগগির তাদের নিজ দেশের নাগরিকদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বন্ধের' আহবানও জানান।

ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় ইরানে ফাঁসির ঘটনাটিকে 'আপত্তিকর' অভিহিত করে ইরান সরকারকে দেশের নাগরিকদের বৈধ দাবি মেনে নেওয়ার আহবান জানিয়েছে।

নেদারল্যান্ডস সরকার জানিয়েছে, তারা ইরানের রাষ্ট্রদূতকে এ মাসে দ্বিতীয়বারের মতো ডেকে পাঠিয়ে বিক্ষোভকারীদের ফাঁসি দেওয়ার বিষয়ে উদ্বেগের কথা জানাবে। দেশটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্য দেশগুলোকে একই উদ্যোগ নেওয়ার আহবান জানিয়েছে।

আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থনের চেষ্টা চালাচ্ছেন স্বেচ্ছাসেবক হোসেইনি। ছবি: রয়টার্স
আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থনের চেষ্টা চালাচ্ছেন স্বেচ্ছাসেবক হোসেইনি। ছবি: রয়টার্স

মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল গত মাসে জানায়, ইরান সরকার অন্তত ২৬ জনকে ফাঁসি দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। সংস্থাটি এই উদ্যোগকে 'অন্য বিক্ষোভকারীদের ভয় দেখানোর জন্য প্রহসনমূলক বিচারিক কার্যক্রম' বলে অভিহিত করেছে।

সংস্থাটি আরও জানায়, যাদেরকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হচ্ছে, তাদের সবাইকে পছন্দ অনুযায়ী আইনজীবী বেছে নিতে দেওয়া হয়নি। তারা আইনি সুরক্ষাও পাননি।

মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে, বিবাদীদের সরকারের নিয়োগ দেওয়া আইনজীবীদের ওপর নির্ভর করতে হয়েছে, যারা তাদেরকে সুরক্ষা দিতে তেমন কিছুই করেননি।

অ্যামনেস্টি জানিয়েছে, ২২ বছর বয়সী কারাতে চ্যাম্পিয়ন ও অভিযুক্ত আসামি কারামির কাছ থেকে জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়েছে।

আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থনের চেষ্টা চালাচ্ছেন কারাতে চ্যাম্পিয়ন কারামি। ছবি: রয়টার্স
আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থনের চেষ্টা চালাচ্ছেন কারাতে চ্যাম্পিয়ন কারামি। ছবি: রয়টার্স

হোসেইনির আইনজীবী আলি শরিফজাদেহ আরদাকানি ১৮ ডিসেম্বর টুইট বার্তায় জানান, হোসেইনির ওপর অমানবিক নির্যাতন চালানো হয়েছে। নির্যাতনের পর দেওয়া স্বীকারোক্তির আইনি ভিত্তি নেই।

তিনি আরও জানান, হোসেইনির হাত-পা বেঁধে নির্যাতন চালানো হয়। জ্ঞান না হারানো পর্যন্ত মাথায় লাথি মারা হয়। শরীরে বৈদ্যুতিক শক দেওয়া হয়।

ইরান সরকার নির্যাতনের মাধ্যমে স্বীকারোক্তি আদায়ের অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

গত ৮ ডিসেম্বর প্রথম বিক্ষোভকারী হিসেবে ২৩ বছর বয়সী মোহসেন শেকারিকে ফাঁসি দেওয়া হয়। তিনি ৩ মাস কারারুদ্ধ ছিলেন। তার বিরুদ্ধে ডাস্টবিনে আগুন দেওয়া, সড়ক অবরোধ, বাসিজ বাহিনীর এক সদস্যকে দা দিয়ে কোপ দেওয়া ও জননিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলার অভিযোগ আনা হয়।

গত ১২ ডিসেম্বর মাজিদ রেজা রাহনাভার্দকে (২৩) মাশহাদ শহরে জনসম্মুখে ফাঁসি দেওয়া হয়। তার বিরুদ্ধে মাশহাদে বাসিজের ২ সদস্যকে কুপিয়ে হত্যা ও আরও ৪ জনকে আহত করার অভিযোগ আনা হয়েছিল।

 

Comments

The Daily Star  | English

Exporters fear losses as India slaps new restrictions

Bangladesh’s exporters fear losses as India has barred the import of several products—including some jute items—through land ports, threatening crucial trade flows and millions of dollars in earnings.

5h ago