আইএমএফের কাছ থেকে ১.১৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ পাচ্ছে পাকিস্তান

আন্তর্জাতিক মুদ্রা সংস্থা (আইএমএফ) পাকিস্তানের বেলআউট প্রকল্পের সপ্তম ও অষ্টম কিস্তির অনুমোদন দিয়েছে। গতকাল সোমবার দেশটির অর্থমন্ত্রী মিফতাহ ইসমাইল জানান, এই সিদ্ধান্তের ফলে অর্থনৈতিক সংকটে জর্জরিত পাকিস্তানে ঋণ হিসেবে ১ দশমিক ১৭ বিলিয়ন ডলার আসার পথ সুগম হয়েছে।
পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী মিফতাহ ইসমাইল। ফাইল ছবি: রয়টার্স
পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী মিফতাহ ইসমাইল। ফাইল ছবি: রয়টার্স

আন্তর্জাতিক মুদ্রা সংস্থা (আইএমএফ) পাকিস্তানের বেলআউট প্রকল্পের সপ্তম ও অষ্টম কিস্তির অনুমোদন দিয়েছে। গতকাল সোমবার দেশটির অর্থমন্ত্রী মিফতাহ ইসমাইল জানান, এই সিদ্ধান্তের ফলে অর্থনৈতিক সংকটে জর্জরিত পাকিস্তানে ঋণ হিসেবে ১ দশমিক ১৭ বিলিয়ন ডলার আসার পথ সুগম হয়েছে।

গতকাল কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।

ইসমাইল আরও জানান, আইএমএফ প্রকল্পের মেয়াদ ১ বছর বাড়াতেও রাজি হয়েছে। ফলে বাড়তি ১ বিলিয়ন ডলার তহবিল পাওয়া যাবে।

উল্লেখ্য, সাবেক প্রেসিডেন্ট ইমরান খানের আমলে ষষ্ঠ রিভিউয়ের পর 'শর্ত মেনে না চলার' কারণ দেখিয়ে এই প্রকল্প স্থগিত করে আইএমএফ।

বিশ্লেষকদের মতে, এই অর্থ পাকিস্তানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশটিতে চলমান বন্যায় প্রাণ হারিয়েছেন ১ হাজারেরও বেশি মানুষ। বিবিসির এক প্রতিবেদনে দেশটির জলবায়ু মন্ত্রী শেরি রেহমানের বরাত দিয়ে জানানো হয়েছে, ইতোমধ্যে পাকিস্তানের ৩ ভাগের ১ ভাগ পানিতে তলিয়ে গেছে।

পাকিস্তানের ভয়াবহ বন্যায় মানুষ ও অবোধ প্রাণী সহ সবাই দুর্দশাগ্রস্ত। ছবি: রয়টার্স
পাকিস্তানের ভয়াবহ বন্যায় মানুষ ও অবোধ প্রাণী সহ সবাই দুর্দশাগ্রস্ত। ছবি: রয়টার্স

পাশাপাশি, পাকিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও একেবারে তলানিতে পৌঁছে গেছে। বর্তমান রিজার্ভ দিয়ে শুধু ১ মাসের আমদানি বিল মেটানো সম্ভব। চলতি হিসাবে বড় আকারের ঘাটতি ও উচ্চ পর্যায়ের মূল্যস্ফীতির কারণে সার্বিকভাবে দেশটির অর্থনীতির অবস্থায় খুবই করুণ আকার ধারণ করেছে।

টুইটার বার্তায় অর্থমন্ত্রী ইসমাইল বলেন, 'আইএমএফের বোর্ড আমাদের ইএফএফ প্রকল্প (বেলআউট) পুনরুজ্জীবিত করার অনুমোদন দিয়েছে। আমরা এখন সপ্তম ও অষ্টম কিস্তিতে ১ দশমিক ১৭ বিলিয়ন ডলার পাবো।'

২০১৯ সালে পাকিস্তানের জন্য ৩ বছরের কিস্তিতে ৬ বিলিয়ন ডলারের সম্প্রসারণযোগ্য ঋণ দিতে সম্মত হয় আইএমএফ। তবে এ বছরের শুরুর দিকে শর্ত মানতে না পারার কারণ দেখিয়ে কিস্তির অর্থ দেওয়া বন্ধ রাখে সংস্থাটি।

আইএমএফের প্রধান কার্যালয় ভবনের বাইরে প্রতিষ্ঠানটির লোগো দেখা যাচ্ছে। ছবি: এপি

গত কয়েক মাসে শাহবাজ শরীফের সরকার বাধ্য হয়েছে বেশ কিছু অজনপ্রিয় সিদ্ধান্ত নিতে। এপ্রিলে ক্ষমতায় আসার পর জ্বালানি খাতের সব ভর্তুকি প্রত্যাহার করেন ইমরান খানের স্থলাভিষিক্ত প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ। এছাড়াও, কর অন্তর্ভুক্তি বাড়াতে নতুন কিছু উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি। 

ইসমাইল জানান, আইএমএফের প্রকল্পকে আবারও সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে সরকারকে বিভিন্ন অর্থনৈতিক সংস্কার করতে হয়েছে, যা জনমানুষের জন্য বেদনাদায়ক হয়েছে। তবে এসব উদ্যোগ পাকিস্তানকে দেউলিয়া হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করেছে।

অর্থনৈতিক সংকটে আক্রান্ত পাকিস্তানের বাসিন্দারা স্বস্তা খাবার কেনার জন্য সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। ছবি: রয়টার্স
অর্থনৈতিক সংকটে আক্রান্ত পাকিস্তানের বাসিন্দারা স্বস্তা খাবার কেনার জন্য সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। ছবি: রয়টার্স

আইএমেফের কাছ থেকে সবুজ সংকেত পাওয়াতে পাকিস্তানের জন্য অন্যান্য দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক উৎস থেকে ঋণ পাওয়ার পথ খুলেছে।

গত মাসে আইএমএফের সঙ্গে হওয়া চুক্তি মতে, পাকিস্তান সরকারকে বাজেট নির্ধারিত সব পরিকল্পনা বাস্তবায়নে এগিয়ে যেতে হবে।

এছাড়াও দেশটি বিদ্যুৎ উৎপাদন খাতের সংস্কার, মূল্যস্ফীতির মোকাবিলায় নতুন আর্থিক নীতিমালা, সুশাসন কায়েম, দুর্নীতি দমন ও সামাজিক সুরক্ষা বলয়ের উন্নয়ন করার বিষয়ে আইএমএফের কাছে অঙ্গীকার করেছে।

তবে আইএমএফ জানিয়েছে, কর্তৃপক্ষকে যেকোনো বাড়তি উদ্যোগ নেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।

 

Comments