আইএমএফের ঋণের শর্তে রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা কমানোর অনুরোধ বাংলাদেশের

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল, আইএমএফ, ডলার,
রয়টার্স ফাইল ফটো

বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে কিছু শর্ত অর্জনযোগ্য না হওয়ায় সফররত আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) স্টাফ মিশনকে কয়েকটি লক্ষ্যমাত্রা সংশোধনের অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ।

আইএমএফের ঋণের শর্ত অনুযায়ী, এ বছরের ডিসেম্বর শেষে বাংলাদেশকে অন্তত ২৬ দশমিক ৮১ বিলিয়ন ডলার নিট বৈদেশিক মুদ্রার মজুত রাখতে হবে।

সংশ্লিষ্ট বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে দ্য ডেইলি স্টার জানতে পেরেছে, সরকার এখন আইএমএফের এই লক্ষ্যমাত্রা ২০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নামিয়ে আনার অনুরোধ জানিয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেনের হিসাব অনুযায়ী, দেশের নিট বৈদেশিক রিজার্ভ ১৮ বিলিয়ন ডলারেরও কম।

এদিকে ডলারের মজুত বাড়াতে গত বছর থেকে বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হলেও এখন পর্যন্ত কোনোটিই ফলপ্রসূ হয়নি।

যেমন- ১৩ জুলাই থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আইএমএফের হিসাব অনুযায়ী মোট বৈদেশিক রিজার্ভ প্রকাশ করতে শুরু করে, তখন রিজার্ভ দাঁড়িয়েছিল ২৩ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলারে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ১১ অক্টোবর পর্যন্ত বাংলাদেশের মোট রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২১ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলারে।

তার মানে ডলারের মজুত ধরে রাখতে সরকারের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা সত্ত্বেও গত তিন মাসে রিজার্ভ ২ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলার কমেছে।

এই প্রেক্ষাপটে কেন্দ্রীয় ব্যাংক রাহুল আনন্দের নেতৃত্বাধীন আইএমএফ মিশনকে আগামী বছরের ডিসেম্বর ও জুনের জন্য নিট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের শর্ত সীমা কমিয়ে আনার অনুরোধ জানিয়েছে, যেন বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে তা অর্জন করা সম্ভব হয়।

আইএমএফ মিশন এই অনুরোধে সম্মতি প্রকাশ করেছে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

আইএমএফের দেওয়া আরেকটি শর্ত হলো, চলতি বছরের শেষ নাগাদ জ্বালানি তেলের স্বয়ংক্রিয় দাম নির্ধারণ করা।

অর্থ মন্ত্রণালয় এই শর্তের সময়সীমা আগামী বছরের মার্চ পর্যন্ত পিছিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে দ্য ডেইলি স্টার জানতে পেরেছে, আইএমএফ মিশন এই অনুরোধেও সম্মত হয়েছে।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সম্প্রতি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেছিলেন, 'জ্বালানি তেলের উচ্চ মূল্য ও মূল্যস্ফীতির চাপ বিবেচনায় আমরা স্বয়ংক্রিয় মূল্য নির্ধারণের ফর্মুলা বাস্তবায়ন করছি না। আমরা হোমওয়ার্ক করেছি এবং একটি খসড়াও প্রস্তুত। জ্বালানি তেলের দাম স্থিতিশীল হলে তা বাস্তবায়ন করব।'

আইএমএফ মিশনের সফরের শেষ দিন আগামী ১৯ অক্টোবর বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও অর্থ সচিবের সঙ্গে সমাপনী বৈঠক করবেন। সেখানে আগামী বছরের ডিসেম্বর ও জুনের জন্য নতুন পরিমাণগত শর্ত চূড়ান্ত করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এরপর রাহুল আনন্দের নেতৃত্বাধীন স্টাফ মিশন আইএমএফের ম্যানেজমেন্ট ও বোর্ডের সামনে বাংলাদেশের প্রস্তাবগুলো উপস্থাপন করবে। তারাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।

প্রস্তাবগুলোর মধ্যে আছে- জুনে ছয়টি পরিমাণগত লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে দুটি পূরণ করতে ব্যর্থ হওয়ায় একটি মওকুফ করা। জুনের শেষের পারফরম্যান্সের ওপর ভিত্তি করে দ্বিতীয় কিস্তির ঋণ অনুমোদনের সিদ্ধান্ত নেওয়া।

ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি অনুমোদনের জন্য তিনটি বাধ্যতামূলক শর্তের মধ্যে একটি ছিল ন্যূনতম ২৪ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলার নিট রিজার্ভ রাখা। কিন্তু, তা ছিল প্রায় ২১ বিলিয়ন ডলার ছিল।

আরেকটি শর্ত ছিল ২০২২-২৩ অর্থবছরে ন্যূনতম ৩ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা কর আদায়, যা করতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার।

Comments

The Daily Star  | English
How artistes flamed cultural defiance in July

How artistes flamed cultural defiance in July

From stage to street, artistes and activists led a cultural revolt against brutality and censorship

7h ago