নারী পাচার: ঘরে ফেরা হয় না
![](https://bangla.thedailystar.net/sites/default/files/styles/big_202/public/images/2024/01/01/dy-ddeili-sttaar-anusndhaan.jpg?itok=TE50whzw×tamp=1704093114)
বিদেশে উন্নত জীবনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রতি বছর হাজারো মেয়েকে বাংলাদেশ থেকে পাচার করা হয় ভারতের মুম্বাই ও পুনের মতো শহরে। দ্য ডেইলি স্টারের অনুসন্ধানে উভয় সীমান্তের দালাল ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংশ্লিষ্টতাসহ অন্ধকার এই জগতের নানা বিষয় উঠে এসেছে। চার পর্বের ধারাবাহিক প্রতিবেদনের শেষ পর্ব এটি।
পাচারের শিকার নারীদের উদ্ধারের পর তাদের আশ্রয়কেন্দ্রে না পাঠিয়ে ভারতীয় পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি আইনে মামলা করেন।
২০১৭ সালে আগ্রায় পুলিশের অভিযানে বাংলাদেশের সুমনাকে (ছদ্মনাম) একজন গ্রাহকসহ আটক করা হয়। সুমনাকে পাচারের পর প্রথমে দিল্লি এবং তারপর আগ্রায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল
তাকে রক্ষা করার পরিবর্তে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ তার বিরুদ্ধে মামলার পর কারাগারে পাঠায়। জেলার যখন জানতে পারেন যে সুমনা পাচারের শিকার, তখন তাকে সরকারি একটি আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠিয়ে দেন। তবে আশ্রয়কেন্দ্রের সুপারিন্টেনডেন্ট বৈধ কাগজপত্র ছাড়া ভারতে অনুপ্রবেশের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা করে দেন।
দক্ষিণখান থানায় দায়ের করা মামলার নথি থেকে জানা যায়, ২০১৭ সালের ২ মে তাকে পাচার করা হয়েছিল।
এর দুই সপ্তাহ পর ২০১৭ সালের ২০ মে আগ্রা সিটি পুলিশ একটি ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানে অবস্থিত যৌনপল্লিতে অভিযান চালায় এবং সেখান থেকে সুমনাসহ পাঁচ জনকে গ্রেপ্তার করে।
মামলার নথি অনুসারে, সুমনাকে একজন গ্রাহকের সঙ্গে একটি ঘরে পাওয়া যায়।
বাণিজ্যিকভাবে যৌন নির্যাতনের জন্য পাচারের শিকার হওয়া সত্ত্বেও ভারতের উত্তর প্রদেশের আগ্রার সিকান্দ্রা থানায় আটককৃত বাকিদের সঙ্গে সুমনার বিরুদ্ধেও দ্য ইমমোরাল ট্রাফিক (প্রিভেনশন) অ্যাক্টের পাশাপাশি ভারতীয় দণ্ডবিধি ১৮৬০ এর অধীনে থানায় এফআইআর তৈরি করা হয়।
পুলিশ সুমনার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনে যে তিনি পাবলিক প্লেসে অশালীন কাজ করেছেন।
দ্য ইমমোরাল ট্রাফিক (প্রিভেনশন) অ্যাক্ট অনুযায়ী, যৌনপল্লি থাকা বা প্রাঙ্গণকে যৌনপল্লি হিসেবে ব্যবহার করার অনুমতি দেওয়া, যৌনবৃত্তির উপার্জনে জীবনযাপন করা, যৌনকর্মী হিসেবে কাউকে নিয়ে আসা বা প্ররোচিত করা এবং যেখানে যৌনপল্লি পরিচালিত হয় সেখানে কাউকে আটকে রাখা আইনত দণ্ডনীয়।
মানবপাচার প্রতিরোধের লক্ষ্যে এই আইন করেছে ভারত। আইনের বিধানগুলো অভিযান পরিচালনা ও তল্লাশি, নারীদের আটক ও আশ্রয়কেন্দ্রে রাখার অনুমতি দেয়।
দুঃখজনকভাবে সুমনাকে অভিযুক্ত হিসেবে বিবেচনা করে আগ্রা আদালতের ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে হাজির করা হয় এবং তাকে আগ্রা জেলা কারাগারে রিমান্ডে পাঠানো হয়। ২০১৭ সালের ৫ জুন তাকে জামিন দেওয়া হলেও তিনি বন্দী ছিলেন।
এর প্রতিক্রিয়ায় ২০১৮ সালের ১০ ডিসেম্বর উত্তরপ্রদেশের এলাহাবাদ হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দাখিল করা হয় তাকে রাষ্ট্রকর্তৃক বেআইনিভাবে বন্দী রাখাকে চ্যালেঞ্জ করে।
যদিও ২০২১ সালের ১৭ মার্চ কোনো সন্তোষজনক আদেশ ছাড়াই মামলাটি নিষ্পত্তি করা হয়।
২০১৭ সালের ১০ জুন সুমনাকে আগ্রায় পরিচালিত একটি আশ্রয়কেন্দ্রে স্থানান্তর করে উত্তরপ্রদেশ সরকার। ক্রমাগত যৌন সহিংসতার ফলে গুরুতর শারীরিক ও মানসিক আঘাতে নিজের আসল পরিচয় তখন পর্যন্ত প্রকাশ করতে পারেননি সুমনা। তিনি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের একটি ঠিকানা দিয়ে দেন।
পরবর্তীতে ২০১৮ সালের ১০ জুলাই আশ্রয়কেন্দ্রে কাউন্সেলিং চলার সময় সুপারিন্টেনডেন্ট ঊর্মিলা গুপ্তার কাছে নিজের পরিচয় জানান সুমনা। তিনি সুপারিন্টেনডেন্টকে বাংলাদেশে তার বাড়ির ঠিকানা এবং তাকে পাচার ও একাধিক স্থানে জোরপূর্বক যৌনকাজে বাধ্য করার সব ঘটনা তাকে বলেন।
পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, আশ্রয়কেন্দ্রের সুপারিন্টেনডেন্টও এইসব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানাতে অবহেলা করেছেন, সুমনার বিরুদ্ধে হওয়া নৃশংসতার কথা আদালত ও সিকান্দ্রা থানার তদন্ত কর্মকর্তাকে জানাতে ব্যর্থ হয়েছেন এবং ভারত ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে হওয়া চুক্তি অনুযায়ী তার প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াও শুরু করতে পারেননি।
দুঃখজনকভাবে উল্লিখিত আশ্রয়কেন্দ্রের সুপারিন্টেনডেন্ট প্রাসঙ্গিক সব আইনি প্রক্রিয়া উপেক্ষা করেছেন এবং ২০১৯ সালের ৪ আগস্ট উত্তরপ্রদেশের আগ্রার ইতমাদৌলা থানায় দ্বিতীয় এফআইআর দাখিল করেছেন। সেখানে সুমনার বিরুদ্ধে ফরেনার্স অ্যাক্ট ১৯৪৬ এর অধীনে অনুপ্রবেশ করে ভারতে অবৈধ অবস্থানের অভিযোগ আনা হয়।
ফলস্বরূপ, সুমনা আবারও আগ্রা আদালতের ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে হাজির হন এবং আগ্রা জেলা কারাগারে তাকে রিমান্ডে পাঠানো হয়, যেখানে তিনি তখন থেকেই আটক ছিলেন।
আগ্রার দায়রা আদালতে সুমনা জামিন আবেদন করলেও ২০১৯ সালের ৪ ডিসেম্বর তা খারিজ করে দেওয়া হয়। উভয় এফআইআরের জন্য আগ্রার মুখ্য বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে সংশ্লিষ্ট তদন্ত কর্মকর্তারা চার্জশিট জমা দিয়েছেন।
গত ৫ এপ্রিল এলাহাবাদ হাইকোর্টে জামিন আবেদন জমা পড়ে।
আদালত স্বীকার করেছে যে সুমনা জামিনের জন্য একটি বৈধ মামলা পেশ করেছে এবং তার আবেদনটি চলতি বছরের ৯ মে মঞ্জুর করা হয়। এলাহাবাদের হাইকোর্ট সুমনার ওপর এমন কোনো বিধিনিষেধ আরোপ করেনি, যার কারণে তিনি আনুষ্ঠানিক প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তার বাড়িতে ফিরে যেতে পারবেন না।
আগ্রার আদালত ২৬ সেপ্টেম্বর তাকে এক ব্যক্তির হেফাজতে মুক্তি দেয়। যিনি মূলত তার পাচারকারী কিন্তু ভারতে বসবাসকারী তার আত্মীয় হিসাবে পরিচয় দিয়েছিলেন।
প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া ব্যর্থ হওয়ার পর গত ৮ নভেম্বর সুমনা তার পাচারকারীর সহায়তায় অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন বলে গতকাল দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন পাচারের শিকার ভুক্তভোগীদের সহায়তাকারী এনজিও জাস্টিস অ্যান্ড কেয়ারের কান্ট্রি ডিরেক্টর মো. তরিকুল ইসলাম।
তিনি জানান, ২০১৭ সালের মার্চ থেকে ২০২৩ সালের অক্টোবর পর্যন্ত এনজিওটি ভারতে ১৪ থেকে ৩৫ বছর বয়সী প্রায় ৮০০ নারী ও শিশুকে উদ্ধার করে বাংলাদেশে ফিরিয়ে এনেছে।
তিনি গতকাল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এখন পর্যন্ত, আমরা বাংলাদেশের বিভিন্ন আদালতে প্রায় ৩৫০টি পাচারের মামলায় আইনি সহায়তা দিয়েছি। এর মধ্যে ১০০টি নিষ্পত্তি হয়েছে এবং সাতটি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছে। উল্লেখযোগ্যভাবে, দোষী সাব্যস্ত সবাই দালাল ছিলেন।
ভিকটিমদের অপরাধী করা
ইতোমধ্যে যৌনকর্মীদের সংগঠনগুলো এই ধরনের অভিযান এবং উদ্ধার অভিযানের নিন্দা জানিয়ে বলেছে, পাচারের বিরুদ্ধে লড়াই না করে উল্টো যৌনকর্মীদের যথাযথ প্রক্রিয়া ছাড়াই গ্রেপ্তার এবং আশ্রয়কেন্দ্রে আটকে রাখার জন্য একটি বিধান তৈরি করা হয়েছে, যেখানে তারা আরও বেশি নির্যাতন ও সহিংসতার মুখে পড়েন।
২০০৫ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে মহারাষ্ট্রের কয়েকটি জায়গা থেকে উদ্ধার করা ২৪৩ জন নারীর ওপর একটি সমীক্ষা চালায় ন্যাশনাল নেটওয়ার্ক অব সেক্স ওয়ার্কার্সের সঙ্গে যুক্ত সংস্থা ও সংগঠনগুলো। ২০১৮ সালে প্রকাশিত সেই সমীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই নারীদের মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশ তাদের 'উদ্ধার' করা হোক এটি চাননি।
যৌনকর্মীদের সংগঠনগুলো 'ইমমোরাল ট্রাফিক (প্রিভেনশন) অ্যাক্ট' আ আইএটিএর সমালোচনা করে বলছে, এটি তাদের কাজ, তাদের পরিবার ও তাদের সন্তান ধারণের অধিকারকে অপরাধ হিসেবে পরিগণিত করছে। এ ছাড়া, এই আইন প্রাপ্তবয়স্কদের সম্মতি দেওয়ার অধিকার বাতিল করে দিচ্ছে এবং অন্যায্য ও জোরপূর্বক উচ্ছেদের বিধান তৈরি করেছে।
মুম্বাইয়ের একটি আশ্রয়কেন্দ্রের প্রশাসনিক দপ্তরে একজন কর্মী একটি কাগজ নিয়ে হন্তদন্ত হয়ে এসে আরেক কর্মীকে বললেন, 'নতুন এই আদেশটি দেখুন!' কাগজটি ছিল একজন ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশের অনুলিপি। সেখানে বলা হয়েছে যে আইটিপিএর অধীনে অভিযানে আটক সাত নারীকে এক বছরের জন্য আশ্রয়কেন্দ্রে রাখা হবে। আশ্রয়কেন্দ্রের কর্মীদের জন্য আশ্চর্যের বিষয় ছিল যে ওই আদেশটি প্রবেশন অফিসারের প্রতিবেদন ছাড়াই অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
ওই কর্মী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'যে সাতজন নারীকে আটক করা হয়েছিল, তাদের মধ্যে শুধুমাত্র একটি অপহরণ ও পাচারের ঘটনা ছিল। বাকি ছয় জনের পরিবারের সদস্যরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন। তারপরও তাদের মুক্তি দেওয়া হয়নি। এখন তাদের এক বছর আশ্রয়কেন্দ্রে থাকতে হবে এবং এই সময়ে তাদের কোনো আয় নেই। এই নারীদের অনেকেরই সন্তান আছে। আশ্রয়কেন্দ্রে থাকার সময়টাতে নিজের সন্তানদের নিয়ে চিন্তা করবেন এবং আশ্রয়কেন্দ্রের কোনো কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবেন না।'
এখান থেকে আগে বেরোতে চাইলে নারীদের একটি আপিল করতে হয়, যার জন্য কয়েক মাস সময় এবং অন্তত ৬০ হাজার রুপি দরকার। ওই কর্মী বলেন, 'এর জন্য তাদের ঋণ করতে হবে এবং তারপর সেই ঋণ শোধ করতে আরও কাজ করতে হবে।'
বাংলাদেশি নারীদের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে। যেহেতু অনেক নারী অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করে, তারাও ফরেনার্স অ্যাক্টে অভিযুক্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকেন। পাচার হওয়া অনেক নারী এখন ভারতে যৌনকর্মী হিসেবে কাজ করছেন এবং ভারতেই স্থায়ী হয়েছেন। তাদের কাছে 'আধার কার্ড' বা অন্যান্য ভারতীয় কাগজপত্র আছে। এসব নথির কিছু আসল, কিছু জাল।
পুনেতে যৌনকর্মীদের একমাত্র সংগঠন সাহেলির ফ্যাসিলিটেটর তেজস্বী সেভেকারি বলেন, 'মানবপাচার গুরুতর উদ্বেগের বিষয়।'
'কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, ট্রানজিটের সময় নারী ও মেয়েদের নিরাপত্তার বিষয়ে কেউই দৃষ্টি দিচ্ছে না। সেটা বাংলাদেশই হোক, আর ভারত। একবার কাউকে রেড লাইট এরিয়া বা যৌনপল্লিতে নামিয়ে দিয়ে এবং সেখানে যৌনকর্মী হিসেবে কাজ করার কয়েক বছর পর তাকে উদ্ধার করতে যাওয়ার কোনো মানে হয় না। সীমান্ত নিরাপত্তার বিষয়টি যথাযথভাবে বিবেচনা করা দরকার। উদ্ধার অভিযানের সময় একজন নারীর বর্তমান অবস্থাও বিবেচনা করা প্রয়োজন। বেশিরভাগ সময় উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয় তার সম্মতি না নিয়েই।'
এমনকি যারা স্বেচ্ছায় ফিরে আসতে চায়, তাদেরকেও দীর্ঘ অপেক্ষায় থাকতে হয়। ১৯ বছর বয়সে আশ্রয়কেন্দ্রে আসা খুশি প্রায় তিন বছর ধরে সেখানেই আছেন।
আশ্রয়কেন্দ্র পরিচালনা ও উদ্ধার অভিযানে পুলিশকে সহায়তাকারী এনজিও রেসকিউ ফাউন্ডেশনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ত্রিবেণী আচার্য বলেন, 'একজন নেপালি মেয়েকে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া খুব সহজ এবং দ্রুতই সব হয়ে যায়। কিন্তু বাংলাদেশি মেয়েদের ক্ষেত্রে এই প্রক্রিয়াটি বেশ দীর্ঘ ও জটিল।'
এ কারণে উদ্ধার পাওয়া নারীদের দেশে ফিরতে অনেক দেরি হয় এবং দীর্ঘ সময় আশ্রয়কেন্দ্রে থাকতে বাধ্য হন।
জাল কাগজপত্রসহ ভারতীয় আইডি
পুনে পুলিশ এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
তবে পুনে পুলিশের অ্যান্টি-হিউম্যান ট্রাফিকিং সেলের একজন সিনিয়র অফিসার বলেছেন, 'শহরের কেন্দ্রস্থল বুধওয়ার পেঠের রেডলাইট এলাকায় ১১০টি যৌনপল্লি রয়েছে। এখানে অন্তত ৮০০ থেকে ৯০০ নারী যৌনকর্মী হিসেবে কাজ করেন।'
নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, 'এই যৌনকর্মীরা নেপাল, কর্নাটক ও বাংলাদেশ থেকে এসেছে। তাদের বেশিরভাগেরই আধার কার্ড ও প্যান কার্ড (স্থায়ী অ্যাকাউন্ট নম্বর) রয়েছে।'
ভারতে কীভাবে নারীদের পাচার করা হয় তা ব্যাখ্যা করে ওই কর্মকর্তা বলেন, 'বাংলাদেশের সব নারীই দালালের মাধ্যমে অবৈধভাবে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত অতিক্রম করে। সীমান্তে অনেক ফাঁকফোকর আছে। এরপর ওই নারীদের কলকাতার বিভিন্ন লজ বা হোটেলে কয়েকদিন আটকে রাখে দালালরা। এ সময় জাল ও বানোয়াট নথি জমা দিয়ে তাদের প্যান কার্ড ও আধার কার্ড তৈরি করা হয়।'
তিনি বলেন, 'দালালরা সাধারণত ঢাকা, খুলনা ও অন্যান্য জেলার দরিদ্র পরিবারের অশিক্ষিত নারী বা স্কুল থেকে ঝরে পড়া কিশোরীদের প্রস্তাব দেয় যে তাদের দিল্লি ও মুম্বাইয়ে ভালো ও সম্মানজনক চাকরি দিয়ে দেবে।'
তিনি আরও বলেন, 'কলকাতায় তাদের কয়েকদিন রাখার পর অন্যান্য দালালদের কাছে তুলে দেওয়া হয়, যারা এই নারীদের পুনে বা মুম্বাই এক্সপ্রেস ট্রেনে করে নিয়ে যায়। এক্সপ্রেস ট্রেনে এই নারীদের সঙ্গে যোগাযোগ করার সময় দালালরা সাধারণত জাল পরিচয় ব্যবহার করে। ট্রেনে চলার সময় কারো সঙ্গে কথা বলাও নিষেধ নারীদের।'
'ট্রেন পুনে রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছে গেলে দালালরা এই নারীদের যৌনপল্লিন ম্যানেজারদের হাতে তুলে দেয়। ম্যানেজাররা ৮ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকায় এই নারীদের কিনে নেয়', যোগ করেন তিনি।
আনুষ্ঠানিক মন্তব্যের জন্য পুনে, মুম্বাই ও মহারাষ্ট্র পুলিশের কাছে আরটিআই দায়ের করা হয়েছিল। কিন্তু তাদের কেউই এখন পর্যন্ত কোনো সাড়া দেয়নি। এখন পর্যন্ত মুম্বাই পুলিশ তাদের প্রতিক্রিয়ায় দাবি করেছে যে তারা ২০২২ ও ২০২৩ সালে একজন বাংলাদেশিকে উদ্ধার করেছে। তবে এর আগে কাউকে উদ্ধার করতে পারেনি।
রেসকিউ ফাউন্ডেশনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ত্রিবেণী আচার্য বলেন, তারা বছরে প্রায় ৫০০ মেয়েকে উদ্ধার করেন এবং তাদের মধ্যে ২০ শতাংশই বাংলাদেশি। এমনকি মুম্বাইয়ের যৌনপল্লিতে অনেক বাংলাদেশি 'গুরু মা' (যৌনপল্লি ম্যানেজার) আছেন।
ত্রিবেণী বলেন, 'অবৈধ অনুপ্রবেশের আইনি জটিলতা এড়াতে ভারতীয় হিসেবে নিজেদের পরিচয় দিতে এই নারীদের শিখিয়ে দেয় পাচারকারীরা।'
Comments