‘চোখের সামনে ভাই ১১ তলা থেকে ঝাঁপ দিলেন’
গুলশানে গতকাল রোববার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ভবনের ১১ তলা থেকে ঝাঁপ দিয়েছিলেন রাজীব পিরিচ (৩০)। সিকদার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
নিহত রাজীব ওই ভবনের ১২ তলায় বাবুর্চি হিসেবে কাজ করতেন। তার গ্রামের বাড়ি গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার নাগরী ইউনিয়নের পাওরান গ্রামে।
খবর পেয়ে তার ছোট ভাই সজীব পিরিচ রাতেই ঢাকা পৌঁছান। রাজীব তার চোখের সামনেই ভবনের ১১ তলা থেকে ঝাঁপ দিয়েছিলেন বলে জানান তিনি।
সজীব দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আগুন লাগার পরপরই ভাই আমাকে ফোন করে জানিয়েছিলেন। তখন সন্ধ্যা আনুমানিক ৭টা বাজে। খবর শোনামাত্র আমি বাড়ি থেকে সেখানে চলে যাই।'
'পৌঁছানোর পর দেখি ভাই ১১ তলার বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছেন। সেখান থেকে আমাকে ফোন দেন। বলছিলেন ফ্যামিলিকে দেখিস। এরপর আরও কথা হয়, কীভাবে বাঁচতে পারে, আগুন কোন দিক দিয়ে বেশি উঠছে, কোনদিকে ছড়িয়ে পড়ছে। কিন্তু ১১ তলা থেকে ঝাঁপ দেবে বাঁচার জন্য একবারও বলেননি,' যোগ করেন সজীব।
পরিবারে দুই ছেলের মধ্যে রাজীব বড় ছিলেন বলে জানান তিনি।
সজীব বলেন, 'আমার চোখের সামনে ১১ তলার বেলকনি থেকে লাফ দিলেন ভাই। নিচে পড়ার সময় আমি তাকে দেখলাম, কিন্তু কিছুই করার ছিল না।'
'রাত আনুমানিক ৮টা পর্যন্ত চেষ্টা করেন আগুন থেকে বাঁচার জন্য। আমি ভবনের ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করি। গেট বন্ধ থাকায় পারিনি। ভেতরে থেকে তাকে অ্যাম্বুলেন্সে বের করার সময় সময় দেখি তার কোনো জ্ঞান নেই। হাসপাতালে নেওয়ার পর তিনি মারা যান,' বলেন সজীব।
আজ সোমবার দুপুর ২টার দিকে কালীগঞ্জ উপজেলার নাগরী খ্রিস্টান মিশনে তাকে সমাহিত করা হয়।
রাজীব ওই ভবনে বাবুর্চির চাকরি করতেন। তার স্ত্রী এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। তাদের বাবা বানাথ পিরিচ কৃষিকাজ করেন। সজীব পিরিচ এলাকায় ইজিবাইক চালিয়ে উপার্জন করেন।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মাসুদ পারভেজ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'রাজীবের রান্নার সুনাম ছিল। নবম শ্রেণী পর্যন্ত তিনি পড়াশোনা করেছিলেন। তার মনে মানুষকে রান্না করে খাওয়ানোর ইচ্ছা কাজ করত।'
গতকাল সন্ধ্যা ৭টার দিকে গুলশান-২ এর একটি ভবনে আগুন লাগে। এই অগ্নিকাণ্ডে রাজীবসহ ২ জন নিহত ও ৭ জন আহত হন। ফায়ার সার্ভিসের ১৯টি ইউনিটের চেষ্টায় রাত ১১টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
ফায়ার সার্ভিসের ধারণা, ভবনটির লিফটের শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত।
Comments