‘আমাদের একমাত্র সম্বল ঘড়ির দোকানটি পুড়ে গেল, কীভাব বাঁচব!’

সন্ধ্যা ৬টার দিকে কৃষি মার্কেটে দেখা যায়, মার্কেটের ভেতর থেকে এখনো ধোঁয়া বের হচ্ছে। ছবি: গোলাম মোর্তোজা/স্টার

কৃষি মার্কেটে ঘড়ির দোকান চালাতেন বাবা ও ৩ ছেলে। আজ বৃহস্পতিবার ভোররাতে লাগা আগুনে বাকি সব দোকানের মতো তাদের দোকান ও সব মালামাল পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।

আজ সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে এক ছেলে ঢুকরে কেঁদে ওঠেন। বলেন, 'এখন আমাদের কী হবে? আমাদের একমাত্র সম্বল ঘড়ির দোকানটি পুড়ে গেল, কীভাবে বাঁচব! আগুনে আমাদের সব শেষ, পরিবার নিয়ে চলব কীভাবে?'

কৃষি মার্কেটে আগুন লাগার খবর পেয়ে ভোররাত ৪টার সময়ই ছুঁটে এসেছিলেন তারা ৪ জন। কিন্তু, লেলিহান আগুনের তাপ আর ধোঁয়ার কারণে নিজেদের দোকানটি খুলতে পারেননি, সরাতে পারেননি কোনো মালামাল। তাদের চোখের সামনেই পুড়ে গেছে সব। কেবল অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকিয়ে দেখেছেন।

কৃষি মার্কেটের সবচেয়ে বড় ঘড়ির দোকানটি ছিল তাদের। সেখানে ঘড়ি বিক্রির পাশাপাশি মেরামতও করা হতো।

সন্ধ্যা ৬টার দিকে কৃষি মার্কেটে দেখা যায়, মার্কেটের ভেতর থেকে এখনো ধোঁয়া বের হচ্ছে। পোড়া গন্ধে পুরো এলাকা ছেয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত দোকান মালিক ও কর্মচারীদের কান্নায় ভারি হয়ে আছে কৃষি মার্কেট এলাকা।

দোকান মালিক ও কর্মচারীরা তাদের দোকানের ভেতর থেকে পুড়ে ভস্ম হয়ে যাওয়া মালামাল বের করে আনছেন। ধোঁয়ার কারণে এই কাজটিও কঠিন হয়ে পড়েছে তাদের জন্য।

কৃষি মার্কেট এলাকায় কৌতূহলী মানুষ ভিড় জমিয়েছেন। কখন, কীভাবে আগুন লেগেছে, দোকান মালিকদের কতটা ক্ষতি হয়েছে—সবকিছু জানতে তারা সেখানে গেছেন।

দোকান মালিক ও কর্মচারীরা তাদের দোকানের ভেতর থেকে পুড়ে ভস্ম হয়ে যাওয়া মালামাল বের করে আনছেন। ছবি: গোলাম মোর্তোজা/স্টার

কিন্তু, এই ভিড়ের কারণে দোকান মালিক ও কর্মচারীরা যেসব মালামাল বের করছেন, সেগুলোকে সরিয়ে নিতে পারছেন না।

আজ ভোররাত সাড়ে ৩টার পর আগুনের সূত্রপাত হয় এই মার্কেটে। ভয়াবহ এ আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ১৭টি ইউনিট যোগ দেয়। ফায়ার সার্ভিসকে সহায়তায় যোগ দেয় সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর বিশেষ দল। প্রায় ৫ ঘণ্টার চেষ্টায় সকাল সাড়ে ৯টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।

ব্যবসায়ীদের ভাষ্য, এই মার্কেটে দোকানের সংখ্যা সাড়ে চারশর বেশি। মার্কেটে মুদি, স্টেশনারি, কনফেকশনারি, জুয়েলারি, প্লাস্টিকের সামগ্রী, চাল, মসলা, ক্রোকারিজ, কাপড় ও জুতার দোকান ছিল। প্লাস্টিকের দোকানে আগুন লাগায় তা দ্রুত চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এ কারণে তারা কেউ ভেতরে ঢুকতে পারেননি। তাই ৫ ঘণ্টারও বেশি সময় পর আগুন যতক্ষণে নিভেছে, ততক্ষণে ভেতরে উদ্ধার করে আনার মতো অবশিষ্ট কিছুই ছিল না।

তবে আগুনে মার্কেটের ৩ ভাগের ২ ভাগ পুরোপুরি ভস্মীভূত হয়ে গেলেও সম্মিলিত প্রচেষ্টায় রক্ষা পেয়েছে পূর্বপ্রান্তের কাঁচাবাজার, মুরগির বাজার ও মাংসপট্টির দোকানগুলো।

আজ সকাল পৌনে ১০টার দিকে কৃষি মার্কেটের সামনে তাৎক্ষণিক ব্রিফিংয়ে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল তাজুল ইসলাম চৌধুরী মার্কেটটিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করেন।

তিনি জানান, মার্কেটের একটি মুদি দোকান থেকে এই আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট বা মশার কয়েল থেকে এই আগুন লাগতে পারে। এ ঘটনায় কেউ নিহত হননি, তবে আগুন নেভাতে গিয়ে ফায়ার সার্ভিসের কয়েকজন কর্মী আহত হয়েছেন।

এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় প্রাথমিকভাবে ২১৭টি দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার তথ্য দিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। দুপুর ১২টার দিকে মার্কেটটি পরিদর্শনে এসে সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা।

তার ভাষ্য, এই মার্কেটে ডিএনসিসির বরাদ্দ দেওয়া দোকানের সংখ্যা ৩১৭টি। তবে মার্কেট-সংলগ্ন ফুটপাতে অনেক অবৈধ দোকান ছিল।

ঢাকার জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের তালিকা করে সরকারের পক্ষ থেকে মানবিক সহায়তার চেষ্টা করা হবে বলে জানান।

ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, মার্কেটে অগ্নিনিরাপত্তাব্যবস্থা ছিল না। প্রাথমিক ফায়ার ফাইটিংয়েরও কোনো ব্যবস্থা ছিল না। ফুটপাত-সড়কে অবৈধ দোকান থাকাসহ উৎসুক মানুষের ভিড়ের কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে সমস্যা হয়েছে। আগুন নেভানোর পানি আনতে হয়েছে অন্য জায়গা থেকে।

 

Comments

The Daily Star  | English

Students to resist AL event today

Meanwhile, the interim government has sounded a stern warning against the Awami League taking to the street

11m ago