ভৈরবে ট্রেন দুর্ঘটনা

‘বিকট শব্দ হয়, ট্রেনের দরজা ভাইঙা আমার ওপর পড়ে’

ভৈরবে রেল দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ট্রেনের একটি বগি। ছবি: সংগৃহীত

'আমি ছিলাম ট্রেনের শেষ বগিতে। ভৈরব রেলস্টেশন থেকে ট্রেন ছাড়ার মিনিট পাঁচেকের মধ্যে বিকট শব্দ পাইলাম। এরপর ট্রেনের বগি ছিটকে দূরে গিয়া পড়ল। ট্রেনের লোহার দরজা ভাইঙা আমার ওপর পড়ে। ব্যথার যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিলাম। আমার ডান পাশে একজনের ও বুকের ওপর পড়ে ছিল আরও এক যাত্রীর লাশ। আশপাশের লোকজন আইসা লাশ সরায়ে আমাকে উদ্ধার করে।'

দ্য ডেইলি স্টারকে কথাগুলো বলছিলেন ভৈরবে ট্রেন দুর্ঘটনায় আহত আব্দুল খালেক (৫৫)। বর্তমানে রাজধানী ঢাকার জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে (পঙ্গু হাসপাতাল) চিকিৎসাধীন তিনি।

খালেক জানান, তার স্ত্রী ও দুই মেয়ে থাকে কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরে গ্রামের বাড়িতে। তিনি ঢাকায় রিকশা চালান। ১৩ দিন আগে বাড়িতে গিয়েছিলেন। জীবিকার তাগিদে আজ ঢাকায় ফিরছিলেন।

তিনি বলেন, 'আমি স্বরারচর থেকে ট্রেনে উঠেছি। শেষ বগিতে ছিলাম। সেখানে অনেক ভিড় ছিল। সবাই গাদাগাদি করে দাঁড়াইছিল। আমি ট্রেনের রড ধরে দাঁড়াইছিলাম। ভৈরব রেলস্টেশনে এসে আরও অনেক যাত্রী উঠে। ভিড় আরও বাড়ে। তখন দাঁড়ানোই কষ্টকর হইয়া পড়ে। সেখান থেকে ট্রেন ছাড়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই চোখের পলকে দুর্ঘটনা ঘইটা গেল। কিছুক্ষণের মধ্যেই স্থানীয়রা আইসা উদ্ধারকাজ শুরু করে।'

'ট্রেনের লোহার দরজা ভাইঙা আমার কোমরের ওপর পড়ে। রক্ত দেখে ভয় পাইয়া যাই। প্রচণ্ড ব্যথায় চিৎকার করছিলাম। ভাবছিলাম কখন আমারে হাসপাতালে নেবে', যোগ করেন খালেক।

আহত আব্দুল খালেক। ছবি: স্টার

আহত অবস্থায় উদ্ধারের পর প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালেই নেওয়া হয় খালেকসহ সবাইকে। সেখান থেকে খালেকসহ নয়জনকে পাঠানো হয় পঙ্গু হাসপাতালে।

পঙ্গু হাসপাতালের প্রধান নার্স সাবেত্রী রানি চক্রবর্তী ডেইলি স্টারকে জানান, আজকের ট্রেন দুর্ঘটনায় আহত রিকশাচালক খালেকসহ নয়জন বর্তমানে সেখানে চিকিৎসাধীন। খালেকের ডান পা থেঁতলে গেছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তার অস্ত্রোপচার করা হবে।

খালেকের পা কেটে ফেলতে হবে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, এক্সরেসহ বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর চিকিৎসক দেখে এই বিষয়ে বলতে পারবেন যে, তার পা কেটে ফেলতে হবে নাকি সার্জারি করে পা রক্ষা করা যাবে।

কিশোরগঞ্জের ভৈরব রেলস্টেশনের আউটার পয়েন্টে আন্তঃনগর এগারসিন্দুর এক্সপ্রেস ট্রেন ও একটি মালবাহী ট্রেনের মধ্যে সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত ১৭ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে দুই জন নারী ও ১৫ জন পুরুষ।

Comments

The Daily Star  | English

Wait for justice: 21 years and counting

The final judgment in the cases is now pending with the Appellate Division as trial proceedings have been completed at the lower court and HC Division

11h ago