নরসিংদী

পোড়া কাপড়ের স্তূপের সামনে দোকান মালিকদের আর্তনাদ

নরসিংদীর বাবুরহাটে কাপড়ের বাজার পুড়ে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ছবি: জাহিদুল ইসলাম/স্টার

কাপড়ের পাইকারি বাজার হিসেবে খ্যাত নরসিংদীর বাবুরহাটে ৭৫টি দোকান পুড়ে গেছে। এই দোকানগুলোর ভেতরে থাকা প্রায় সব মালামালই নষ্ট হয়ে গেছে। বাজার থেকে বহুদূর পর্যন্ত পোড়া কাপড়ের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।

দোকান মালিক, কর্মচারীদের পাশাপাশি তাদের স্বজনরাও বাজারে এসে ভিড় জমাচ্ছেন, তাদেরকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য।

বাজার সমিতির তথ্য অনুযায়ী, এখানে প্রায় পাঁচ হাজার পাইকারি দোকান রয়েছে। প্রতি সপ্তাহে চার-পাঁচ কোটি টাকার কাপড় কেনাবেচা হয়। তবে আগুনে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনও নির্ধারণ করা যায়নি।

আগুন নেভাতে দেরি হওয়ার জন্য বাজার সমিতির অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করছেন দোকান মালিকরা। তারা বলছেন, রাস্তা থেকে বাজারে প্রবেশের সেতুটি দিয়ে সরাসরি প্রবেশ করা গেলে ক্ষয়ক্ষতি কম হতো।

পুড়ে যাওয়া একটি দোকানের মালিক কাজল মিয়া বলেন, 'রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে গত শনিবার ও রোববার বাজারে ক্রেতা কম ছিল। এ কারণে দোকানে অবিক্রিত কাপড়ের পরিমাণ কম ছিল। ফলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও বেশি হয়েছে।'

কান্না ভেজা চোখে তিনি আরও বলেন, 'আমার দোকান প্রায় ১৬ হাজার পোশাক ছিল। প্রতিটির বাজার মূল্য ৮০০-১২০০ টাকা। প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ টাকার মালামাল পুড়ে আমি এখন নিঃস্ব। আর ব্যবসায় ফিরতে পারব না। আমার জীবনের সব স্বপ্ন, অর্জন ছাই হয়ে গেছে। ব্যাংক ঋণ আর পাওনাদারের টাকা এখন কিভাবে পরিশোধ করবেন তা নিয়েই এখন তার মূল দুশ্চিন্তা।

মা ফেব্রিক্সের মালিক মাওলানা আবুল হোসেন বলেন, 'আমি গত ১৫ বছর ধরে থ্রি পিছ ও শাড়ী বিক্রি করি। এক রাতের আগুনে সব কিছু হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছি। বিভিন্ন জায়গা থেকে কাপড় বাকিতে এনেছি। তাদের কি জবাব দেব? আমার ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৭০ লাখ টাকার বেশি।'

পুড়ে যাওয়া কাপড়ের ওপর বসে বিলাপ করছেন এক দোকান মালিক। ছবি: জাহিদুল ইসলাম/স্টার

তিনি আরও বলেন, 'প্রতিটি দোকানে ৪-৬ জন করে ব্যবসায়ী এবং প্রায় ৭৫ টি দোকানের ২৫০ জন ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সে হিসেবে প্রায় ১০০ কোটি টাকার বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।'

পুড়ে যাওয়া দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে আর্তনাদ করে আরেকজন বলছিলেন, আমার ২৩ বছরের জমানো সব কিছু এক রাতেই শেষ।

খোরশেদ উইবিনের মালিক খোরশে আলম বলেন, 'আমার দোকানে সালোয়ার কামিজ ছিল প্রায় দুই হাজার পিস। এর প্রতিটির দাম ১২০০-২৫০০ টাকা। থান কাপড় ছিল পাঁচ হাজার গজের বেশি। সব কাপড়ের বাজার মূল্য ২০ লাখ টাকার বেশি। আমার ব্যাংক ঋণ আছে। সেই সঙ্গে মহাজনরা টাকা পাবেন। কীভাবে ঋণ পরিশোধ করব জানি না। সরকার বিশেষ কোনো ব্যবস্থা না করলে আমাদের পক্ষে ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব নয়।'

বাবুরহাট বণিক সমিতির সভাপতি মো. গিয়াস উদ্দিন বলেন, 'আমাদের এখানে প্রায় ২৫০ জন ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাদের ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১০০ কোটি টাকা। ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি কর্মচারীরাও রয়েছেন। ঘটনাস্থলের পাশের সেতু দিয়ে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি প্রবেশ করতে পারলে ক্ষয়ক্ষতি কম হতো। দীর্ঘ দিন ধরে সেতুটি বেহাল অবস্থায় পড়ে আছে।'

আজ ঘটনাস্থলে পরিদর্শনে যান স্থানীয় সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম হিরো।

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, 'এখানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তাদেরকে সরকারের পক্ষ থেকে সহায়তা করা হবে। ব্যবসায়ীদের ক্ষয়ক্ষতি দেখে আমার খুব খারাপ লাগছে। ঘটনাস্থলের পাশের সেতু দিয়ে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঢুকতে পারলে ক্ষয়ক্ষতি কম হতো।'

আগুন লাগার ঘটনায় বাজার সমিতিকে দায়ী করে তিনি বলেন, 'বাজারের অব্যবস্থাপনার কারণে এটা হয়েছে। তারা দায় এড়াতে পারেন না। তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

Comments

The Daily Star  | English

Awami League tenure: ACC probing 15yrs of financial irregularities

The Anti-Corruption Commission (ACC) has launched an investigation into alleged corruption by individuals, financial institutions, industrial groups, and loan defaulters during the Awami League’s 15-year tenure, which it claims led to the destruction of the country’s financial system.

5h ago