গাজীপুরে সিলিন্ডারের আগুন

এত মৃত্যুর শোক সইতে পারছে না শ্রমিক কলোনির বাসিন্দারা

গাজীপুরের কালিয়াকৈরে শ্রমিক কলোনিতে শোকের ছায়া। ছবি: স্টার

কালিয়াকৈরে গ্যাস সিলিন্ডারের আগুনে দগ্ধ হয়ে একে একে ১১ জনের মৃত্যুর শোক সইতে পারছে না টপ স্টার পোশাক কারখানার শ্রমিক কলোনির বাসিন্দারা। ভয়াবহ এই আগুনের ঘটনার পর থেকে নতুন মৃত্যুর খবর শোনার আতঙ্কে দিন পার করছেন সেখানকার বাসিন্দারা।

আজ সোমবার বিকেলে শ্রমিক কলোনিতে গিয়ে দেখা যায়, কলোনির ছোট ছোট টিন শেডের ঘরে তালা ঝুলছে। স্বজন হারানোর শোকে অনেকেই বাকরুদ্ধ হয়ে রয়েছেন। অ্যাম্বুলেন্স বা কোনো গাড়ির শব্দ পেলেই মনে করছেন লাশ এসেছে। বাসা থেকে দৌড়ে যাচ্ছেন সড়কে। কেউ মুখ ঢেকে কাঁদছেন, আবার কেউ টিনের ঘরে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। অনেকের ঘরেই রান্নার কাজ বন্ধ হয়ে আছে। কোলের শিশুরা খাবারের জন্য কাঁদছে। প্রতিবেশীরা কিছু দিলে খাচ্ছেন।

বাড়ির দরজার ফাঁক দিয়ে মাথা বের করে একজন বলছিলেন, সেদিন সন্ধ্যায় গলিতে খেলছিল তিন বছরের শিশু তায়েবা ও তার ভাই শিশু তাওহীদ। হঠাৎ আগুনের ফুলকি ছিটকে এসে তাদের শরীরের কাপড়ে লেগে আগুন ধরে যায়।

শিশু তায়েবার নানি হাসনা বেগম বলেন, 'আমার দুইটাই নাতনি৷ রাক্ষুসে আগুন আমার ফুটফুটে নাতনিটাকে কেড়ে নিল। তায়েবার মৃত্যুর শোক আমি সইব কেমন করে। তায়েবার ভাই তাওহীদ হাসপাতালে ভর্তি আছে। কখন কি হয় বলতে পারি না।'

আগুনে দগ্ধ হয়ে মারা যাওয়া মোতালেবের ভাগনী রোজিনা বলেন, 'আমি আগুনের খবর শুনে দৌড়ে বাসা থেকে আসি। মামাকে বাঁচাতে পারিনি। মামি গার্মেন্টসে কাজ করত। দগ্ধ হয়ে তারও দুই পা চলে গেছে। সিলিন্ডারের গ্যাস নিষিদ্ধ করে আমাদের মতো গরিবদের জন্য লাইনের গ্যাস দেওয়া হোক।'

কথা হচ্ছিল দগ্ধ হওয়া ইয়াসিন মিয়ার স্ত্রীর সাথে। দুই মাসের বাচ্চা কোলে তিনি বলেন তার অভাবের সংসারের কথা৷ স্বামী দগ্ধ হওয়ার পর থেকেই নিদারুণ কষ্টে দিন পার করতে হচ্ছে তাদেরকে।

তিনি বলেন, 'মানুষে বলতেছে ইয়াসিন পুড়ে গেছে। আমি প্রথমে বিশ্বাস করতে পারিনি। ভাবছিলাম সবাই মজা করছে। কীভাবে যে আগুনটা ধরল বুঝতেই পারিনি। গতকালও তিন ব্যাগ রক্ত দেওয়া হয়েছে। আরও আরও এক ব্যাগ দিতে হবে।'

এলাকাবাসী জানায়, তেলিরচালা টপস্টার কারখানার পাশে শফিকুল ইসলাম নামে এক ব্যবসায়ী শ্রমিক কলোনি তৈরি করে ভাড়া দিয়েছেন। তার বাড়িতে থাকা সিলিন্ডারের গ্যাস শেষ হয়ে গেলে পাশের দোকান থেকে তিনি নতুন সিলিন্ডার কিনে নিয়ে আসেন। গত বুধবার ইফতারের আগে ওই সিলিন্ডারের রেগুলেটর খুলতে গিয়ে গ্যাস লিকেজে আগুন ধরে যায়। তখন তিনি বাইরে সিলিন্ডারটি ছুড়ে মারেন। এ সময় আশপাশে থাকা লোকজনের শরীরে আগুন ধরে যায়।

Comments

The Daily Star  | English

No active militant presence in Bangladesh: home adviser

The reports of suspected extremists' deportation from Malaysia shows no links to local terrorist networks, he says

1h ago