‘স্বামীর সঙ্গে মরে গেলেই ভালো হতো, এত যন্ত্রণা পোহাতে হতো না’

আকস্মিক সড়ক দুর্ঘটনায় একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে পরিবারটি। ছবি: স্টার

'স্বামী ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। আমার কোনো আয় নেই, তাই পরিবার নিয়ে খুব কষ্টে আছি। ঠিকমতো ইফতার করতে পারছি না, সেহেরিতে ভালো কিছু খেতে পারছি না। মেয়েটাকেও ঈদের পোশাক কিনে দিতে পারিনি। স্বামীর সঙ্গে যদি আমিও মরে যেতাম ভালো হতো। এত যন্ত্রণা পোহাতে হতো না।'

কথাগুলো সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত জসিম তালুকদারের স্ত্রী জোৎস্না বেগমের।

গত ৮ জানুয়ারি মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার বেতিলা-মিতরা ইউনিয়নের আউটপাড়া এলাকায় হেমায়েতপুর-সিংগাইর-মানিকগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কে একটি ডাম্প-ট্রাকের ধাক্কায় সিএনজিচালিত অটোরিকশাযাত্রী জসিম ও তার পাঁচ বছরের নাতি তাছিন নিহত হয়। এ ঘটনায় তার স্ত্রী জোৎস্না বেগম ও তিন বছরের মেয়ে হাফসা আক্তারও আহত হয়েছে।

এ ছাড়া, ওই দুর্ঘটনায় অটোরিকশার চালক শাহীনুর রহমান এবং আরও দুই যাত্রী সুমি আক্তার ও ফৌজিয়া আক্তার মারা গেছেন।

জানা গেছে, ঘটনার দিন মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার বালিরটেক গ্রাম থেকে অটোরিকশায় পরিবার নিয়ে মানিকগঞ্জ শহরে ফিরছিলেন জসিম। পথে একটি ডাম্প-ট্রাক তাদের অটোরিকশাটিকে ধাক্কা দেয়। এতে অটোরিকশাটি দুমড়ে-মুচড়ে যায়।  

ছবি: সংগৃহীত

নিহত জসিমের বাড়ি মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলার দক্ষিণ চারিগাঁও গ্রামে হলেও পরিবার নিয়ে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার নতুন বসতি এলাকায় ভাড়া থাকতেন তিনি।

স্ত্রী জোৎস্না বেগম জানান, সাটুরিয়া উপজেলার নয়াডিঙ্গি বাসস্ট্যান্ড এলাকায় একটি লেপ-তোষকের দোকানের কর্মচারী ছিলেন জসিম।

আকস্মিক সড়ক দুর্ঘটনায় একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে পরিবারটি। জোৎস্না বেগমের মুখে জানা গেল তাদের দুর্বিষহ জীবনের কথা। বললেন, 'তাদের পরিবারে কোনো ঈদের আভাস নেই। সব আনন্দ মাটি হয়ে গেছে।'

জোৎস্না বেগম জানান, মানিকগঞ্জের জয়রা এলাকায় তার বাবার বাড়ি। জয়রা এলাকার পাশের গ্রাম নতুন বসতি এলাকার একটি ভাড়া বাসায় তারা থাকেন। ৬ জানুয়ারি পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার বালিরটেক গ্রামে খালার বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলেন তারা। দুদিন সেখানে অবস্থানের পর ফেরার পথে ওই দুর্ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় আহত জোৎস্না সাত দিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর কিছুটা সুস্থ হয়েছেন। তবে তার মেয়ে হাফসা এখনো বেশ অসুস্থ। 'টাকার অভাবে হাফসার ভালো চিকিৎসা হচ্ছে না। প্রতি মাসে তার ৭০০ টাকার ওষুধ লাগে', বলেন জোৎস্না।

তিনি বলেন, 'আমাদের পরিবারে খুব সচ্ছলতা ছিল না। তবে আমরা সুখী ছিলাম। কিন্তু একটি দুর্ঘটনায় আমরা সর্বস্বান্ত হয়ে গেছি।'

'এখানে আমাদের তো কোনো ভুল ছিল না। ভুল করেছে ট্রাক ও অটোরিকশাচালক। এর খেসারত কেন আমাদের দিতে হচ্ছে? দুর্ঘটনার পর পুলিশ ট্রাক ও অটোরিকশাটিকে নিয়ে যায়। কিছুদিন পর গাড়ির মালিকেরা পুলিশের কাছ থেকে তাদের গাড়ি নিয়ে যায়। তবে আমাদের খোঁজ-খবর কেউ নেয়নি', আক্ষেপের সুরে বলেন জোৎস্না।

এ বিষয়ে মানিকগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাবিল হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দুর্ঘটনার দিনই নিহত জসিম তালুকদারের মেয়ে লাবনী আক্তার একটি এজাহার দায়ের করেছেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বদলি হয়ে অন্যত্র চলে গেছেন। আদালতের নির্দেশে ডাম্প-ট্রাক ও অটোরিকশাটিকে মালিকের জিম্মায় দেওয়া হয়েছে।'

 

Comments

The Daily Star  | English
govt food subsidy increase in fy26 budget

Govt plans 31% hike in food subsidy in FY26 budget

The government plans to raise the food subsidy allocation by 31 percent to Tk 9,500 crore in the upcoming fiscal year, aiming to ensure access to affordable food for poor and low-income households.

15h ago