গত বছরের তুলনায় বাদামের দাম মণ প্রতি কমেছে ১৫০০ টাকা
লালমনিরহাটে স্থানীয় বাজারে প্রতি মণ (৪০ কেজি) বাদাম বিক্রি হচ্ছে ৫ হাজার থেকে সাড়ে ৫ হাজার টাকা দরে। গত বছর একই সময়ে প্রতি মণ প্রতি বাদাম বিক্রি হয়েছিল সাড়ে ৬ হাজার থেকে ৭ হাজার টাকা।
গত বছরের তুলনায় প্রতি মণ বাদামের দাম প্রায় দেড় হাজার টাকা কমায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলের বাদাম চাষিরা।
লালমনিরহাট সদর উপজেলার দুড়াকুটি হাটে বাদাম বিক্রি করতে আসা কৃষক আমজাদ হোসেন (৫৫) ডেইলি স্টারকে জানান, তিনি ১২ মণ বাদাম বিক্রি করার জন্য হাটে এনেছিলেন। বাজারদর কম হওয়ায় ৪ মণ বাদাম বিক্রি করেছেন। বাকি ৮ মণ বাদাম বাড়িতে ফেরত নিয়ে গেছেন।
কৃষক আমজাদ হোসেন বলেন, 'গেল বছর ৭ হাজার টাকা দরে ৩০ মণ বাদাম বিক্রি করে পেয়েছিলাম ২ লাখ ১০ হাজার টাকা। কিন্তু এ বছর প্রতি মণ বাদাম ৫ হাজার ২০০ টাকা দরে বিক্রি করতে হয়েছে। আমি গেল বছর ৬ বিঘা জমিতে ৩০ মণ বাদাম উৎপাদন করেছিলাম। এবছর একই জমিতে ৩১ মণ বাদাম পেয়েছি। আশা করেছিলাম গেল বছরের তুলনায় এবছর বাদাম একটু বেশি দরে বিক্রি করতে পারবো। কিন্তু বাদামের দর গেল বছরের চেয়ে কম।'
লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার চলবলা গ্রামের কৃষক নাজির হোসেন (৬০) ডেইলি স্টারকে বলেন, প্রতি বিঘা জমিতে ৪ থেকে ৫ মণ বাদাম হয় এবং খরচ হয় ১৫ থেকে ১৮ হাজার টাকা। বাদাম চাষ কৃষকের জন্য লাভজনক ফসল। তবে সব জমিতে বাদাম হয় না। বাদাম চাষের জন্য উঁচু সমতল ও উর্বর জমির প্রয়োজন। এবছর ৭ বিঘা জমিতে ৩২ মণ বাদাম হয়েছে। খরচ হয়েছে ১ লাখ ১২ হাজার টাকা। ১০ মণ বাদাম ৫ হাজার টাকা দরে ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। বাদামের দাম না বাড়া পর্যন্ত তিনি অবশিষ্ট ২২ মণ বাদাম বিক্রি করবো না।
কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, চলতি বছর বৃহত্তর রংপুরের ৫ জেলা লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, নীলফামারী ও রংপুরে ১৯ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ হয়েছে। গেল বছর চাষ হয়েছিল ১৯ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে। গত বছর বাদাম বিক্রি করে আশানুরূপ দাম পাওয়ায় অনেক কৃষক বাদাম চাষের জমি বাড়িয়েছেন। এ অঞ্চলে উৎপাদিত বাদাম রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররা এসে বাদাম কিনে নিয়ে যান।
চিলমারী উপজেলার জোরগাছ হাটে বাদাম ক্রেতা সগির হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, ঢাকা, ভৈরব, নোয়াখালী, বগুড়া, ফরিদপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বাদামের মোকামগুলোতে বাদামের চাহিদা কমেছে। মহাজনরা তাদের কাছ থেকে কমদামে বাদাম কিনছেন। তাই তারা কৃষকদের কাছ থেকেও কমদামে বাদাম কিনছেন। স্থানীয় বাজারগুলোতে বাদামের সরবরাহ অনেক।
ভৈরব থেকে আসা বাদামের পাইকার সুরেশ চন্দ্র দাস ডেইলি স্টারকে বলেন, তাদের গুদামে এখনো গত বছরের বাদাম মজুদ রয়েছে। তাই তাদের কাছে বাদামের চাহিদাও কমেছে। গেল বছরের তুলনায় কমদামে বাদাম কেনা হচ্ছে। এছাড়া এবছর বাদামের ফলন ভালো হওয়ায় বাজারে বাদামের সরবরাহ বেড়েছে।
কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্ত ডেইলি স্টারকে বলেন, এবছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বাদামের ফলন আশানুরূপ পেয়েছেন কৃষকরা। তবে গেল বছরের তুলনায় বাদামের বাজারদর কম হওয়ায় কৃষকরা হতাশ। তারপরও বাদাম চাষে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। বিশেষ করে চরাঞ্চলে বাদামের ব্যাপক চাষ হয়ে থাকে এবং চরের কৃষকরা বাদাম চাষে লাভবান হচ্ছেন।
Comments