পাবনা

বৃষ্টিতে পিছিয়ে গেছে আগাম জাতের মুড়িকাটা পেঁয়াজ আবাদ

ছবি: স্টার

দফায় দফায় পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি নিয়ে হতাশার মধ্যেই আগাম শীতকালীন পেঁয়াজ আবাদ শুরু করতে হিমশিম খাচ্ছে দেশের সর্ববৃহৎ পেঁয়াজ উৎপাদনকারী অঞ্চল পাবনার চাষিরা। চলতি মাসের শুরুতে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে আগাম শীতকালীন মুড়িকাটা পেয়াজ আবাদ শুরু করতে কিছুটা পিছিয়ে গেছেন তারা।

প্রতি বছরের অক্টোবরে আগাম মুড়িকাটা পেয়াজ আবাদ করে চাষিরা। অল্প জমিতে এ পেঁয়াজ আবাদ হলেও, মৌসুমি আবাদ শুরুর আগেই নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসায় সরবরাহ স্বাভাবিক থাকে এবং বাজার নিয়ন্ত্রণে আসে।

মুড়িকাটা পেঁয়াজের বাল্ব মাঠে রোপণ করতে হয়। পুরো অক্টোবর মাসজুড়ে এটি আবাদ হয়।

পাবনার সুজানগর উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামের চাষি মো. কামরুজ্জামান দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, তিনি প্রতিবছর ভাদুডাঙ্গি গ্রামে বেশ কিছু জমিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজ চাষ করেন। এ বছর ২০ বিঘা জমিতে চাষের লক্ষ্য নিলেও এখনো আবাদ শুরু করতে পারেননি তিনি।

অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে চলতি মাসের শুরুতে মাঠে পানি জমে যাওয়ায় তিনি জমি প্রস্তুত করতে পারেননি বলে জানান।

তিনি বলেন, 'এখন মাঠ থেকে পানি নেমে গেছে। আগামী সপ্তাহে পেঁয়াজ রোপণ শুরু করা যাবে।'

সুজানগর উপজেলার উলাট গ্রামের কৃষক মন্টু খান ২ বিঘা জমিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজ আবাদ করেন। এই পেঁয়াজ বিক্রির পর মৌসুমি পেঁয়াজের আবাদ করবেন তিনি। কিন্তু বৃষ্টির কারণে তিনিও এ বছর কিছুটা পিছিয়ে পড়েছেন বলে জানান।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর পাবনায় ৫৩ দশমিক ২৭ হাজার হেক্টর জমিতে ৭ দশমিক ৬৩ লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে মুড়িকাটা পেঁয়াজ আবাদ হবে ৮ দশমিক ৬ হাজার হেক্টর জমিতে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ১ দশমিক ১৮ লাখ মেট্রিক টন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. ইদ্রিস আলি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মৌসুমের শুরুতে অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে এ বছর এখনো মুড়িকাটা পেঁয়াজ আবাদ শুরু হয়নি। বছরের এ সময় কৃষকদের কাছে পেঁয়াজ মজুত না থাকায়, মুড়িকাটা পেঁয়াজ আবাদের প্রতি কৃষকদের আগ্রহ বেশি থাকে। বছরের শুরুতে মৌসুমি পেঁয়াজ আবাদ শুরু হওয়ার আগেই এ পেঁয়াজ বাজারে আসায় কৃষকরা ভাল দাম পেয়ে খুশি থাকে।'

কৃষকরা জানায়, পেঁয়াজ আবাদের সঙ্গে শীতের আবহাওয়ার সম্পর্ক আছে। ফলে আবাদ শুরু করতে দেরি হলে ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা থাকে।

তবে কৃষকদের এ আশঙ্কা ঠিক নয় উল্লেখ করে পাবনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক মো. জামাল উদ্দিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মুড়িকাটা পেঁয়াজ আবাদের সময় আগামী মাসের নভেম্বর পর্যন্ত থাকবে। ফলে কৃষকদের পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা নেই।'

প্রতিবছরের মতো এ বছরও পাবনাতেই দেশের সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ উৎপাদন হবে বলে আশা প্রকাশ করেন এই কর্মকর্তা। পেঁয়াজ আবাদের জন্য কৃষকরা ইতোমধ্যে প্রস্তুতি নিয়েছে বলেও জানান তিনি।

বর্তমানে কয়েক দফা দাম বেড়ে পাইকারি বাজারে প্রতি মণ পেঁয়াজ ৩২০০ থেকে ৩৪০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।

তবে কৃষকরা জানান, তাদের ঘরে পেঁয়াজর মজুত শেষ হয়ে গেছে। এখন যেটুকু দেশি পেঁয়াজ বাজারে পাওয়া যাচ্ছে তার পুরো মজুত বড় ব্যবসায়ী ও পাইকারদের হাতে। তাই তাদের সিন্ডিকেট বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপপরিচালক মো. জামাল উদ্দিন বলেন, 'কৃষকরা পেঁয়াজ উৎপাদন করলেও বাজার নিয়ন্ত্রণে তারা নেই। ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কারণে বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাচ্ছে। এটি ঠেকাতে বিভিন্ন সময় বাজারে অভিযানও চালানো হচ্ছে।'

তবে নতুন পেঁয়াজ সরবরাহ শুরু হলে বাজার স্বাভাবিক হয়ে যাবে বলে দাবি তার।

Comments

The Daily Star  | English

BB to adopt more flexible exchange rate to meet IMF conditions

After a months-long stalemate, the Bangladesh Bank (BB) is finally set to adopt a more flexible exchange rate regime to fulfil conditions tied to a $4.7 billion International Monetary Fund (IMF) loan programme, which will likely enable Bangladesh to receive $1.3 billion in the fourth and fifth tranches.

8h ago