ফসলে ভরেছে তিস্তার বুক

তিস্তার চর
লালমনিরহাট সদর উপজেলায় তিস্তার চর কালমাটিতে ফসল তুলছেন কৃষকরা। ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

ফসলের সবুজ সমারোহ ঘটেছে তিস্তা নদীর বুকে। তিস্তার বুকে যেদিকে চোখ যায় সেদিকেই ফসলের খেত। বালু মাটির ওপর পলি জমায় এ বছর ধান, গম, আলু, ভুট্টা, কুমড়া, রসুন, পেঁয়াজ, মরিচসহ অন্যান্য ফসলের চাষ হয়েছে।

লালমনিরহাট, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, রংপুর ও গাইবান্ধা জেলায় ১১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ তিস্তার বুকে অন্তত ১০০ চরে চাষাবাদ হয়েছে। আগে যেসব চরে ফসল ফলানো সম্ভব হয়নি সেসব চরেও এ বছর আবাদ হয়েছে। ফসলের আশানুরূপ ফলনও ঘরে তুলতে শুরু করেছেন তিস্তাপাড়ের কৃষকরা।

গত অক্টোবরে উজানে ভারতের সিকিমে তিস্তার বাঁধ ভাঙায় ভাটিতে বাংলাদেশে তিস্তার বুকে প্রচুর বালু জমেছে। এ কারণে বালুচরে এবার সব ধরনের ফসল হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিস্তাপাড়ের কৃষকরা। এমনটি জানিয়েছে কৃষি বিভাগও।

তিস্তার চর
তিস্তার বুকে ফসলের সমারোহ। ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

কৃষি বিভাগ বলছে, দেশে ১১৫ কিলোমিটার তিস্তার বুকে প্রায় ৯০ হাজার হেক্টর জমি আছে। গত বছরগুলোয় শুকনো মৌসুমে ২০-২২ হাজার হেক্টর জমিতে ফসলের চাষ হতো। এ বছর আবাদ হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে।

ভুট্টা চাষ হয়েছে ২০ হাজার হেক্টর জমিতে ও ধান হয়েছে পাঁচ হাজার হেক্টর জমিতে। এ ছাড়াও, আলু, গম, রসুন, পেঁয়াজ, মরিচ, কুমড়াসহ নানা জাতের সবজি চাষ হয়েছে প্রায় ২৫ হাজার হেক্টর জমিতে।

তিস্তাপাড়ের কৃষকরা দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, গত ৪ অক্টোবর ভোরে উজানে ভারতের উত্তর সিকিমে তিস্তার চুংথাং বাঁধ ভেঙে যায়। ওইদিন বিকাল নাগাদ বাংলাদেশে তিস্তার পানি অস্বাভাবিক বেড়ে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি দেখা দেয়। বন্যার পানির সঙ্গে বিপুল পরিমাণে পলিমাটি আসে। তিস্তার বুকে বালুচরে এসব পলি জমা হয়ে জমিগুলোকে উর্বর করে তোলে।

এ বছর আগাম বন্যা পরিস্থিতি দেখা না দিলে তিস্তার চর থেকে আশানুরূপ ফসল তোলা যাবে বলে আশা করছেন কৃষকরা। তারা বাম্পার ফলনে খুশি।

তিস্তার চর
তিস্তার কোনো চরই এ বছর ফাঁকা পড়ে নাই বলে জানিয়েছেন কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলায় চর বগুড়াপাড়ার কৃষক রফিজ উদ্দিন মন্ডল। ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

লালমনিরহাট সদর উপজেলায় তিস্তার চর কালমাটি এলাকার কৃষক দেলোয়ার হোসেন (৬৫) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'চরে ৩০ বিঘা জমি আছে। গত ২০ বছরে এসব জমিতে চাষাবাদ করতে পারিনি। জমিতে শুধু বালু আর বালু। এ বছর সব জমিতে ফসল হয়েছে। খেত থেকে আলু তুলতে শুরু করেছি। প্রতি শতাংশ জমিতে গড়ে ৪৫ কেজি আলু পেয়েছি। সাত বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছি।'

কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলায় তিস্তার চর বগুড়াপাড়ার কৃষক রফিজ উদ্দিন মন্ডল (৭০) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'তিস্তার কোনো চরই এ বছর ফাঁকা পড়ে নাই। সব চরে চাষাবাদ হয়েছে। চরের মাটিতে প্রচুর পলি জমেছে। অতীতে তিস্তার অধিকাংশ চর ফাঁকা পড়ে থাকতো। বালুর কারণে ফসল ফলাতে পারেননি। এ বছর পলি জমায় তা চরের কৃষকদের কাছে আশীর্বাদ হয়ে উঠেছে।'

তিস্তার চর
চরে পলি জমায় জমিগুলো চাষযোগ্য হয়েছে বলে জানিয়েছেন লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) সৈয়দা সিফাত জাহান। ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) সৈয়দা সিফাত জাহান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত বছরগুলোয় শুকনো মৌসুমে তিস্তার চরাঞ্চলে যে পরিমাণ জমিতে চাষাবাদ হয়েছিল এ বছর হয়েছে দ্বিগুণের বেশি জমিতে। চরে পলি জমায় জমিগুলো চাষযোগ্য হয়েছে।'

'বাম্পার উৎপাদন হয়েছে' উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'এসব জমিতে সার ও কীটনাশক দিতে হয় না। কম খরচে কৃষকরা ভালো ফলন পাচ্ছেন।'

Comments

The Daily Star  | English

Beyond development paradox & unnayan without democracy

As Bangladesh seeks to recalibrate its path in the aftermath of recent upheavals, the time is ripe to revisit an oft-invoked but under-examined agenda: institutional reform. Institutions are crucial to understand, as they are foundational for governance, transformation, and economic development.

18h ago