পটুয়াখালী

তীব্র তাপদাহে ফসলের উৎপাদন ব্যাহতের শঙ্কা

প্রখর রোদ আর অসহনীয় তাপদাহের কারণে এসব ফসলের বেশিরভাগের উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে
ফসলের মাঠ থেকে মুগডাল তোলা হচ্ছে। তীব্র গরমে পটুয়াখালীর অন্যতম প্রধান রবি ফসল মুগডালের উৎপাদনও ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কৃষকেরা। ছবি: স্টার

পটুয়াখালীতে প্রায় এক মাস ধরে চলা তাপপ্রবাহে ফসলের উৎপাদন ব্যাহতের আশঙ্কা করছেন কৃষি সংশ্লিষ্টরা। কৃষি বিভাগের মতে, অতি তাপমাত্রার কারণে বোরো ধানের পরাগায়ণ বিঘ্নিত হওয়ায় ধানে কমপক্ষে ১০ শতাংশ চিটা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়াও জেলার অন্যতম প্রধান রবি ফসল মুগডালের উৎপাদনও ব্যাহত হচ্ছে। অন্যান্য ফসলের উৎপাদন নিয়েও কৃষকরা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।

পটুয়াখালীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা দেখা গেছে, জেলায় বর্তমানে বোরো ধান, মুগডাল, মরিচ, চিনাবাদাম, তিল, মিষ্টি আলুসহ বিভিন্ন ফসল মাঠে রয়েছে। প্রখর রোদ আর অসহনীয় তাপদাহের কারণে এসব ফসলের বেশিরভাগের উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষকেরা।

পটুয়াখালী সদর উপজেলার বদরপুর ইউনিয়নের হকতুল্লাহ গ্রামে গত বুধবার বিকেলে গিয়ে দেখা যায় কৃষকরা অনেকেই তাদের খেত থেকে মুগডাল তুলছেন। তাদের একজন আব্দুস সাত্তার হাওলাদার (৬৫) জানান, তিনি এ বছর ১ দশমিক ২০ একর জমিতে মুগডালের চাষ করেছেন। এবছর প্রখর রোদে মুগডালের ফলন কম হয়েছে। বৃষ্টি না হওয়ায় ডালের আকারও ছোট হয়েছে। বেশিরভাগ ডাল অপুষ্ট হওয়ায় ওজনেও হালকা।

তিনি বলেন, গতবছর সমপরিমাণ জমিতে মুগডাল চাষ করে ১২ মণ ডাল পেয়েছিলাম। কিন্তু এ বছর তার অর্ধেক ফলন পেতে পারি। এতে খরচই উঠবে না।

একই এলাকার চাষি শাহজাহান হাওলাদার বলেন, তিনি ৬৫ হাজার টাকা ব্যয়ে এক একর জমিতে মুগডালের চাষ করেছেন। প্রতি বছর তিন বার ডাল তুলতে পারি। কিন্তু প্রচণ্ড গরমের কারণে ফলন কম হয়েছে। এতে একবার বা দু'বারের বেশি ফলন পাওয়া যাবে না। খেতে ডাল তোলায় ব্যস্ত তার স্ত্রী বিউটি বেগম বলেন, এ বছর ডাল অনেক কম পাওয়া যাবে। সময়মত বৃষ্টি না হওয়ায় খেতের মাটি শুকিয়ে গেছে। একারণে ডালের ফলন কম হয়েছে, আকারেও ছোট হয়েছে।

আরেক কৃষক আলী আশরাফ মুগডালের পাশাপাশি চিনাবাদাম, তিল, সূর্যমুখী ও মিষ্টি আলুর চাষ করেছেন। তিনি বলেন, সব ধরনের রবি ফসলই আবাদ করি। পাঁচ সদস্যের পরিবারে এ দিয়েই সারা বছরের চাহিদা মিটিয়ে বাজারে বিক্রি করি। কিন্তু এ বছর বৃষ্টিপাত না হওয়ায় এবং গরমের কারণে সব ধরনের ফসলের উৎপাদন কম হচ্ছে।

একই গ্রামের কৃষক আব্দুল বারেক গাজী বলেন, আগে সময়মত বৃষ্টিপাত না হলে আমরা খালের পানি দিয়ে সেচ দিতে পারতাম। কিন্তু এখন খালগুলোও ভরাট হওয়ায় সেখানে পানি পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে সংকটকালে জমিতে সেচ দেয়াও যায় না। অনেকক্ষেত্রে খাল ভরাট হয়ে কৃষি জমিতে পরিণত হয়েছে।

পটুয়াখালী সদর উপজেলার ছোট আউলিয়াপুর গ্রামের বোরো চাষি মোজাম্মেল হোসেন মৃধা জানান, আমাদের গ্রামের কৃষকরা প্রতিবছর আমন ফসলের পর বোরো ধান চাষ করি। ভালো ফলনও পাই। তবে এ বছর বৃষ্টিপাতের পরিমাণ খুবই কম এবং তীব্র গরমে ধান পরিপুষ্ট হতে পারছে না। এতে ফলন কমপক্ষে এক-চতুর্থাংশ কম হতে পারে। প্রখর রোদে খালেও পানিও শুকিয়ে গেছে। ধানখেতে সেচ দিতে পানি সংকটে ভুগছি।

পটুয়াখালী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলায় ২০ হাজার ৬১০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান, ৮৭ হাজার ৩৪১ হেক্টরে মুগডাল, ৭ হাজার ৯৪৬ হেক্টরে চিনাবাদাম, ২ হাজার ১০০ হেক্টরে সূর্যমুখী, ৪৮০ হেক্টরে সরিষা, ১৩৪ হেক্টরে তিল, ১৯ হেক্টরে সয়াবিন, ৮ হাজার ২৪২ হেক্টরে মরিচ, ২ হাজার ১১৮ হেক্টরে মিষ্টি আলু আবাদ করা হয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. নজরুল ইসলাম জানান, প্রখর রোদে বোরো ধানের পরাগায়ণ ব্যাহত হচ্ছে। এতে কমপক্ষে ১০ শতাংশ ধানে চিটা হতে পারে। তাছাড়া মুগডালসহ অন্যান্য রবি ফসল উৎপাদনও ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করছি। অনাবৃষ্টি আর অধিক তাপমাত্রার কারণে ফসলের খেতে নানা রোগবালাই দেখা দিতে পারে। তবে দ্রুত বৃষ্টিপাত হলে কৃষকরা কিছুটা হলেও তাদের ক্ষতি পোষাতে পারবেন। তিনি বলেন, শুষ্ক মৌসুমে সেচ সুবিধা নিশ্চিত করতে খালসহ প্রাকৃতিক জলাধারগুলো সংস্কারের উদ্যোগে নেওয়া হবে।

Comments