এবি পজিটিভের জায়গায় বি পজিটিভ রক্ত, অন্তঃসত্ত্বার মৃত্যু: র‍্যাব

গাজীপুরের কালীগঞ্জে ভুল চিকিৎসায় এক অন্তঃসত্ত্বার মৃত্যুর ঘটনায় জনসেবা হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব।
গাজীপুরের কালীগঞ্জের জনসেবা হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার। ছবি: সংগৃহীত

গাজীপুরের কালীগঞ্জে ভুল চিকিৎসায় এক অন্তঃসত্ত্বার মৃত্যুর ঘটনায় জনসেবা হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব।

গতকাল মঙ্গলবার রাতে উপজেলার বালিগাঁও (বড়নগর) এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

আজ বুধবার বিকেল সাড়ে ৩টায় র‌্যাব-১ (উত্তরা) সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) নোমান আহমেদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- জনসেবা হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বন্যা আক্তার (৩১), আশিকুর রহমান (২৫), সিনিয়র নার্স সঙ্গীতা তেরেজা কস্তা (৩৩), জুনিয়র নার্স মেরী গোমেজ (৪০), রিসিপশনিস্ট শামীমা আক্তার (৩২) এবং নার্স সীমা আক্তার (৩৪)।

গত ২১ আগস্ট হাসপাতালে সিজারিয়ান অপারেশন চলাকালীন ভুল গ্রুপের রক্ত দেওয়ায় শিরিন বেগম (৩০) নামে ওই নারীর মৃত্যু হয়।

র‍্যাব জানায়, সেদিন সকালে শিরিন বেগম (৩২) নামে এক অন্তঃসত্ত্বা নারীকে সিজারিয়ান অপারেশনের জন্য হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেন জনসেবার পরিচালক বন্যা আক্তার। সেদিন অপারেশন থিয়েটারে নেওয়ার পর রক্তপাত শুরু হলে ওই নারীর স্বজনদের এবি পজেটিভ রক্ত সংগ্রহ করতে বলেন আশিকুর রহমান ও বন্যা আক্তার।

র‌্যাব কর্মকর্তা সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) নোমান আহমেদ বলেন, 'শুরুতে শিরিনের ভাইয়ের শরীর থেকে এক ব্যাগ এবি পজেটিভ রক্ত নিয়ে রোগীকে দেওয়া হয়। দ্বিতীয় ব্যাগ রক্ত দেওয়ার সময় হাসপাতালের কর্তব্যরত নার্সরা রোগীর শরীরে এবি পজেটিভের পরিবর্তে বি পজেটিভ রক্ত দেয়। এরপর রোগীর খিঁচুনি শুরু হলে ডাক্তারের অনুপস্থিতে ওটি বয় আশিকুর রহমান চিকিৎসা চালিয়ে যান। অবস্থার অবনতি হলে শিরিনকে দ্রুত ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেয় বন্যা আক্তার ও আশিকুর রহমান। অ্যাম্বুলেন্সে রোগীকে উত্তরার একটি হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক অ্যাম্বুলেন্সে থাকায় অবস্থায় প্রাথমিক পরীক্ষা করে রোগীকে মৃত ঘোষণা করেন।'

এ ঘটনায় কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার নির্দেশে ওই হাসপাতালের গাইনি চিকিৎসক সানজিদা পারভীনকে আহ্বায়ক করে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

এ ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত ৬ জনের কাছ থেকে হাসপাতাল পরিচালনার মেয়াদোত্তীর্ণ কাগজপত্র উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে র‍্যাব।

র‍্যাব জানায়, হাসপাতালটির লাইসেন্সের মেয়াদ গত বছরের ৩০ জুন এবং ট্রেড লাইসেন্সের মেয়াদ চলতি বছরের ৩০ জুন শেষ হয়। হাসপাতালটিতে প্রতি মাসে গড়ে ২৫ থেকে ৩০টি সিজারিয়ান অপারেশনসহ প্রায় ৫০টির বেশি অপারেশন হতো।

হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বন্যা আক্তারের কোনো নার্সিং ডিগ্রি নেই। তিনি স্থানীয় একটি হাসপাতালে ৭ বছর নার্সিং ও আড়াই বছর ব্যবস্থাপক হিসেবে চাকরি করেছেন।

এ ঘটনায় ব্যবস্থা নিতে গ্রেপ্তার ৬ জনকে সংশ্লিষ্ট থানায় সোপর্দ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে র‍্যাব।

Comments