ফরিদপুরে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে এবার ছাত্রলীগ নেতার মামলা
ফরিদপুরে বিএনপির সমাবেশে 'পুলিশ, ছাত্রলীগ-যুবলীগ-শ্রমিক লীগের হামলার' ঘটনায় পুলিশের পর বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের আসামি করে মামলা করেছেন জেলা ছাত্রলীগ নেতা রাকিবুল হাসান রাসেল।
বৃহস্পতিবার ফরিদপুর কোতোয়ালী থানায় ওই মামলাটি নথিভুক্ত করা হয় বলে জানিয়েছেন ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সুমন রঞ্জন সরকার।
মামলায় বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের ৫৮ জন নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অজ্ঞাত পরিচয়ের আসামি করা হয়েছে আরও ৫০০ জনকে। জেলা বিএনপির অভিযোগ, ওইদিনের সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন না—বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের এমন অন্তত ১০ জন নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে এ মামলায়।
মামলার বাদি রাকিবুল হাসান রাসেল শহরের কমলাপুর মহল্লার বাসিন্দা। জেলা ছাত্রলীগের ছাত্রবৃত্তি বিষয়ক সাবেক সম্পাদক তিনি।
এ মামলায় জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বাবুলকে ১ নম্বর আসামি করা হয়েছে। অন্যান্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সৈয়দ মোদাররেছ আলী ইছা, সদস্য সচিব মো. কিবরিয়া স্বপন, যুগ্ম আহ্বায়ক মো. জুলফিকার হোসেন জুয়েল ও আফজাল হোসেন খান পলাশ, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি সৈয়দ আদনান হোসেন অনু, তার ভাই ফরিদপুর পৌরসভার কাউন্সিলর সৈয়দ আলাওল হোসেন তনু, জেলা যুবদলের সভাপতি রাজিব হোসেন, মহানগর যুবদলের সভাপতি বেনজীর আহমেদ তাবরিজ।
জেলা বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, গত ৪ সেপ্টেম্বর ফরিদপুরে বিএনপির সমাবেশে হয় জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক জুলফিকার হোসেন জুয়েল, আফজাল হোসেন পলাশ, মহানগর যুবদলের সভাপতি বেনজীর আহমেদ তাবরিজ উপস্থিত ছিলেন না। আরও উপস্থিত ছিলেন না জেলা ছাত্রদলের সভাপতি আদনান হোসেন ওরফে অনু।
উপস্থিত না থেকেও মামলার আসামি হওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে ফরিদপুর মহানগর যুবদলের সভাপতি বেনজীর আহমেদ তাবরিজ বলেন, 'ফরিদপুর আমরা যারা সক্রিয়ভাবে বিএনপির রাজনীতি করি এবং আন্দোলন সংগ্রামে মাঠে থাকি তাদের বেছে বেছে আসামি করা হয়েছে। আমাদের ঢালাওভাবে আসামি করার একটাই উদ্দেশ্য, যাতে আগামীতে আমরা সক্রিয়ভাবে দলীয় কর্মসসূচিতে অংশ নিতে না পারি। আন্দোলনের মাঠ নেতৃত্ব শূন্য করার অপচেষ্টা হিসেবে না থাকা সত্ত্বেও আমাদের নাম দিয়ে মামলা করা হয়েছে।'
যারা ছিলেন না তাদের নামে কেন মামলা করা হয়েছে জানতে চাইলে মামলার বাদি রাকিবুল হাসান রাসেল বলেন, 'হামলায় আমি আহত হই। আমাকে নেতাকর্মীরা উদ্ধার করে ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন। এজন্য আমার পক্ষে জানা সম্ভব হয়নি এ হামলায় কারা জড়িত ছিলেন। পরে আমি নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের পরামর্শ নিয়ে এ মামলাটি করি।'
ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সুমন রঞ্জন সরকার বলেন, 'বাদির লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে এ মামলাটি নথিভুক্ত করা হয়েছে। মামলার তদন্তে একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি তদন্ত করে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন ও প্রকৃত জড়িতদের শনাক্ত করবেন।'
এ নিয়ে গত ৪ সেপ্টেম্বর বিএনপির সমাবেশে হামলার ঘটনায় ফরিদপুর কোতোয়ালী থানায় মোট ২টি মামলা দায়ের করা হলো।
গত ৫ সেপ্টম্বর ফরিদপুর কোতয়ালী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাসুদ ফকির প্রথম মামলাটি করেন। ওই মামলায় কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুলসহ যারা 'আহত' হয়েছেন, তাদেরকেই আসামি করে পুলিশ। মামলায় ৩২ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। অজ্ঞাত পরিচয়ের আসামি করা হয় আরও ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে। ওই মামলায় পুলিশের ওপর হামলা, গাড়ি ভাঙচুর ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়।
প্রসঙ্গত, গত রোববার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন উপলক্ষে জেলা বিএনপি ফরিদপুরের স্বাধীনতা চত্ত্বরে এক সমাবেশের আয়োজন করে। ওই সমাবেশে পুলিশ, ছাত্রলীগ-যুবলীগ-শ্রমিক লীগের হামলায় কৃষকদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বাবুলসহ অন্তত ২৫ জন আহত হন বলে অভিযোগ উঠে। আহতরা হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বর্তমানে বাড়িতে এবং কেন্দ্রীয় নেতারা ঢাকায় অবস্থান করছেন।
Comments