আ. লীগ নেতার বাড়ি থেকে বোমা উদ্ধার, আসামি বিএনপি নেতা-কর্মী

চলতি সপ্তাহের মঙ্গলবার নরসিংদী সদর উপজেলার আলোকবালী ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য এবং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ইমান হাসানকে তার নিজ বাড়ি থেকে ককটেল, হাতবোমা, গান পাউডার ও বোমা বানানোর সরঞ্জামসহ আটক করে পুলিশ।
স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

চলতি সপ্তাহের মঙ্গলবার নরসিংদী সদর উপজেলার আলোকবালী ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য এবং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ইমান হাসানকে তার নিজ বাড়ি থেকে ককটেল, হাতবোমা, গান পাউডার ও বোমা বানানোর সরঞ্জামসহ আটক করে পুলিশ।

এই ঘটনার পর বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে করা মামলায় ইমান হাসানসহ বাকি যে ৭ জনকে আসামি করা হয়েছে, তারা প্রত্যেকেই বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। এদের মধ্যে ইমান হাসানকে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে পুলিশ।

আর পুলিশের পক্ষ থেকে কিছু না জানানো হলেও নরসিংদী জেলার স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক রুবেল আহমেদের দাবি, একই মামলায় আলোকবালী ইউনিয়ন বিএনপির সদস্যসচিব আব্দুল কাইয়ুম সরকারকেও পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। তার বিরুদ্ধে আগেই একটি হত্যা মামলাসহ মোট ১৫টি মামলা আছে।

পুলিশের করা বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে করা মামলার অন্য আসামিদের দাবি, তারা এই ঘটনার সঙ্গে কোনোক্রমেই জড়িত নন। কেবল বিএনপির রাজনীতি করেন বলে তাদের ফাঁসাতে মিথ্যা মামলা সাজানো হয়েছে।

মঙ্গলবার নরসিংদী সদর থানায় মামলাটি দায়ের করেন থানার উপপরিদর্শক মোহাম্মদ ইউসুফ আলী খান। এর এজাহারের একটি কপি দ্য ডেইলি স্টারের হাতে এসেছে।

মামলার এজাহারে বলা হয়, মঙ্গলবার বিকাল ৩টায় ইমান হাসানের বাড়ি থেকে ৩টি বিস্ফারক দ্রব্যযুক্ত ককটেল, ৫৪টি ছোট-বড় মার্বেল, ৭৪টি পাথরের টুকরো, ৫টি খালি কৌটা এবং সাদা পলিথিনে মোড়ানো ৫৪০ গ্রাম গান পাউডার উদ্ধার করা হয়েছে।

এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, পরস্পরের যোগসাজশে অবৈধভাবে সাধারণ জনগণের ক্ষতিসাধন ও আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে বিস্ফোরক দ্রব্য রাখায় তাদের (আসামিদের) বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

মামলায় ১ নম্বর আসামি করা হয়েছে ইমান হাসানকে। ২ নম্বর আসামি বিএনপি নেতা আব্দুল কাইয়ুম সরকার। তবে এজাহারে তার নাম উল্লেখ করা হয়েছে 'কাইয়ুম মিয়া' হিসেবে। এছাড়া এজাহারে কেবল এই ২ জনের ক্ষেত্রেই পূর্ণাঙ্গ নাম-ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে। বাকি ৬ আসামির নাম ও বয়স উল্লেখ করা হলেও পিতার নাম 'অজ্ঞাত' লেখা হয়েছে। সবার ঠিকানা লেখা হয়েছে 'নরসিংদী সদর উপজেলা'।

মামলার আসামি ৬ বিএনপি নেতা-কর্মীর ভাষ্য

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কেবল ইমান হাসান ছাড়া মামলার বাকি ৭ আসামিই বিএনপি ও এর বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এদের ভেতর আলোকবালী ইউনিয়ন বিএনপির সদস্যসচিব কাইয়ুম মিয়া ছাড়া বাকি ৬ জনের সঙ্গে কথা বলেছেন দ্য ডেইলি স্টারের এই প্রতিবেদক।

এরা হলেন- নরসিংদী জেলা বিএনপির কার্যনির্বাহী সদস্য জাহেদুল করিম জাহিদ, জেলা যুবদলের সভাপতি মহসিন হোসেন বিদ্যুৎ, হাজিপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি ও নরসিংদী শহর যুবদলের সদস্যসচিব শামীম সরকার (শামীম), সদর থানা যুবদলের আহ্বায়ক হুমায়ুন কবির (রাসেল), জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম (নজরুল) এবং আলোকবালী ইউনিয়ন শাখা বিএনপির আহ্বায়ক শাহ আলম চৌধুরী।

শাহ আলম চৌধুরীর ভাষ্য, 'কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত না থেকেও কেবল হয়রানি করতে পুলিশ আমাদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়েছে।'

শহর যুবদলের সদস্যসচিব শামীম সরকার বলেন, 'আওয়ামী লীগ নেতার বাড়ি থেকে ককটেল, বোমা ও গানপাউডার উদ্ধার করল পুলিশ। আর মামলা হলো আমাদের বিরুদ্ধে। এভাবে আওয়ামী লীগ সরকার বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে পুলিশ ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করে মিথ্যা, বানোয়াট ও কাল্পনিক মামলা দায়ের করে চলেছে। গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে।'

নরসিংদী জেলা বিএনপির কার্য-নির্বাহী সদস্য জাহেদুল করিম জাহিদ বলেন, 'সরকার বিএনপিকে ভয় পাচ্ছে বলেই এমন গায়েবি মামলা দেওয়া হচ্ছে। আর কিছু কিছু পুলিশ স্পষ্টত রাষ্ট্রের পুলিশের পরিবর্তে সরকারের পুলিশে পরিণত হয়েছে। এরা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে পেশাদারিত্বের পরিচয় দেবে- এমন প্রত্যাশা করছি।'

এদিকে বিষয়টি নিয়ে আলোকবালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আসাদুল্লাহর বক্তব্য, 'প্রতিপক্ষের লোকজন আমাদের সাংগঠনিক সম্পাদক ইমান হাসানের বাড়িতে পরিত্যাক্ত ককটেল ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম রেখে তাকে ফাঁসিয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। কারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সেটা আমরা খতিয়ে দেখছি।'

পুলিশের বক্তব্য

বিষয়টি নিয়ে কথা বলার জন্য যোগাযোগ করা হয় নরসিংদী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হোসেন ভুইয়ার সঙ্গে। কিন্তু প্রসঙ্গটি উত্থাপন করতেই ফোন কেটে দেন তিনি।

তবে নরসিংদী জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আল আমিন মিয়া এ ব্যাপারে ডেইলি স্টারকে বলেন,' ঘটনার সঙ্গে পুলিশ যাদের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে তাদের বিরুদ্ধেই মামলা দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ বিনা অভিযোগে কারও বিরুদ্ধে মামলা করে না। কে কোন দল করেন, সেটা তাদের বিষয়। তারপরও আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। আর এখন পর্যন্ত এ মামলায় বিএনপির কাউকে গ্রেপ্তার করার খবর আমার কাছে নেই।'

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা অভিজিৎ রায়ের বক্তব্য, 'গ্রেপ্তার ইমান হাসান যেভাবে যাদের নাম বলেছেন, ঘটনার সঙ্গে যাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে, সেগুলোই আমরা মামলায় উল্লেখ করেছি। তারা বিএনপির নেতা-কর্মী কি না তা আমাদের জানা নেই।'

Comments