‘দাবি বলবৎ রেখে’ আদালতে ফিরেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আইনজীবীরা

টানা ৬ কার্যদিবস আদালত বর্জনের পর আজ রোববার থেকে বিচারিক কার্যক্রমে অংশ নিয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আইনজীবীরা। এতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিচারাঙ্গনে প্রাণ ফেরার পাশাপাশি বিচার প্রার্থীদের মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। ছবি: স্টার

টানা ৬ কার্যদিবস আদালত বর্জনের পর আজ রোববার থেকে বিচারিক কার্যক্রমে অংশ নিয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আইনজীবীরা। এতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিচারাঙ্গনে প্রাণ ফেরার পাশাপাশি বিচার প্রার্থীদের মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে।

তবে আইনজীবীদের সম্পূর্ণ দাবি পূরণ না হওয়ায় তারা জেলা ও দায়রা জজ এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর আদালত বর্জন অব্যাহত রেখেছেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. তানবীর ভূঁঞা দ্য ডেইলি স্টারকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে বৈঠকের পর তাদের ৩টি দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেওয়ায় সমিতির পক্ষ থেকে আদালত বর্জন কর্মসূচি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ওই বৈঠকে আদালতের দুর্নীতিবাজ নাজির মোমিনুল ইসলাম চৌধুরীকে দ্রুত বদলি করা হবে বলে জানানো হয়।

তানবীর ভূঁঞা বলেন, 'দুর্নীতিবাজ মোমিনুলের নেতৃত্বে দীর্ঘদিন ধরে আদালত চত্বরে জাল স্ট্যাম্প ও কোর্ট ফি বাণিজ্য চলছে। আইনজীবীরা এতে বাধা দিলে জেলা জজ শারমিন নিগার মোমিনুলের পক্ষাবলম্বন করেন। এ নিয়ে আইনজীবীদের সঙ্গে বিচারকের দূরত্ব তৈরি হয়।'

সমিতির সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বাবুল ডেইলি স্টারকে বলেন, 'জেলা ও দায়রা জজ শারমিন নিগার এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক মোহাম্মদ ফারুককে বদলির আগ পর্যন্ত এই দুজনের আদালত তারা বর্জন করে যাবেন। আগামী ২৪ জানুয়ারির মধ্যে যদি এই ২ বিচারকসহ নাজিরকে অপসারণ না করা হয়, তাহলে ফের সাধারণ সভা আহ্বান করে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।'

আজ দুপুরে সরেজমিনে আদালতের প্রতিটি এজলাসে প্রাণচাঞ্চল্য দেখা গেছে। সরাইলের টিঘর গ্রাম থেকে আসা জমশেদ মিয়া বলেন, 'সপ্তাহ খানেক আদালতের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় আমার ছেলের জামিন শুনানি পিছিয়েছে। এতে ছেলে ৭ দিনেরও বেশি সময় অযথা কারাগারে কাটিয়েছে। টানা কয়েকদিন ধরে কোর্টে আসছি, কোনো কাজ হয়নি। তবে আজ শুনানির পর তার জামিন মঞ্জুর হয়েছে।'

আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. মোস্তফা কামাল ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আইনজীবীরা আদালতের বিচারিক কাজে অংশ নেওয়ায় বিচারপ্রার্থীদের দুর্ভোগ লাঘব হয়েছে। আদালতের এজলাসগুলোতে বিচারকরা বিচার কাজ পরিচালনা করতে পারছেন।'

গত ১ ডিসেম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এ আইনজীবীরা মামলা দাখিল করতে গেলে বিচারক মোহাম্মদ ফারুক মামলা গ্রহণ না করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সব আইনজীবীর উদ্দেশে ঢালাওভাবে আপত্তিকর মন্তব্য করেন। এরপর ২৬ ডিসেম্বর সমিতির সভা করে আইনজীবীরা ১ জানুয়ারি থেকে ওই বিচারকের আদালত বর্জনের ঘোষণা দেন। এরইমধ্যে ২ জানুয়ারি ওই আদালতের এজলাসে বিচারক-আইনজীবী-কর্মচারীদের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় বাদানুবাদের ঘটনা ঘটে। এদিকে, বিচারকের সঙ্গে অশোভন আচরণের অভিযোগ এনে ৪ জানুয়ারি আদালতের সবগুলো এজলাস তালাবদ্ধ করে কর্মবিরতি শুরু করেন কর্মচারীরা। এ অবস্থায় কর্মচারীদের একতরফা কর্মবিরতির প্রতিবাদ জানিয়ে ২ বিচারক ও নাজির মোমিনুলের অপসারণের দাবিতে ৫ জানুয়ারি থেকে পুরো আদালত বর্জনের লাগাতার কর্মসূচি পালন করে আসছিলেন আইনজীবীরা।

এদিকে, বিচারকের সঙ্গে অশোভন আচরণ ও অশালীন শ্লোগান দেওয়ার অভিযোগে আইনজীবী সমিতির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ ২৪ জন আইনজীবীকে ইতোমধ্যে ২ দফায় তলব করেছেন হাইকোর্ট।

Comments

The Daily Star  | English

Yunus’ economic gambit paying off

Two months ago, as Professor Muhammad Yunus waded into Bangladesh’s unprecedented political turmoil, he inherited economic chaos by default.

2h ago