বরিশাল

হেফাজতে ৩ নারীকে ‘নির্যাতন’: মামলার আদেশ আদালতের, জানেন না এসপি 

বরিশাল
স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

বরিশালে পুলিশ হেফাজতে ৩ নারীকে নির্যাতনের অভিযোগে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে গত ১২ মার্চ পুলিশ সুপারকে মামলা করার আদেশ দেন আদালত। তবে, আজ শুক্রবার পর্যন্ত এমন কোনো আদেশ পাননি বলে বরিশালের পুলিশ সুপার মো. ওয়াহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন।

জানা গেছে, গত ৩ মার্চ বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ দেহেরগতি গ্রামে রানীর স্কুল সংলগ্ন এলাকায় রাতে লাউডস্পিকার বাজানোকে কেন্দ্র করে স্থানীয়দের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। এ সময় পুলিশ আকাশি বেগম, রাশিদা বেগম ও মালা বেগমসহ ৬ জনকে গ্রেপ্তার করে।

পরে ১২ মার্চ আকাশি বেগম, রাশিদা ও মালা বেগমকে আদালতে হাজির করা হলে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাহফুজুর রহমানের কাছে দেওয়া জবানবন্দিতে তারা মারধরের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেন। 

থানা হেফাজতে বাবুগঞ্জ থানার নারী পুলিশ সদস্য নিপা রানী, সেকেন্ড অফিসার ও এএসআই নাসিরসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য তাদের লাঠি দিয়ে পিটিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন তারা।

পরে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট-৩ আদালতের (বাবুগঞ্জ আমলি আদালত) বিচারক মো. নুরুল আমিন সেদিনই অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে একটি মামলা দায়েরের আদেশ দেন।

আদেশে সংযুক্ত একটি প্রতিবেদনে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বক্তব্য পর্যালোচনা করে উল্লেখ করা হয়েছে, আকাশি বেগম, রাশিদা বেগম ও মালা বেগমের হাত-মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন আছে।

আদালতে নিযুক্ত করনিক মো. ইয়াসিন দ্য ডেইলি স্টারকে আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। আদেশের একটি কপি ডেইলি স্টারের কাছেও এসেছে।

আদেশে এসপিকে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মামলা দায়েরের নির্দেশ দেওয়া হয়। মামলাটি তদন্তে একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে দায়িত্ব দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। মামলা দায়ের করে ৩ দিনের মধ্যে একটি প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশও দেওয়া হয়।

গতকাল বৃহস্পতিবার আদালতের জিআরও রেজাউল ইসলাম ডেইলি স্টারকে জানান, বুধবার সন্ধ্যায় আদেশের কপি জেলা পুলিশ সুপারের অফিসে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।

আদেশের বিষয়ে জানতে আজ শুক্রবার বরিশালের পুলিশ সুপার মো. ওয়াহিদুল ইসলামকে ফোন করা হলে তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত আমি এমন কোনো আদেশ পাইনি।'  

তবে আদেশ পেলে আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বাবুগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ফরহাদ সরদার। 

৩ মার্চের সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ সদস্য এএসআই নাসির বাবুগঞ্জ থানায় ৪ মার্চ একটি মামলা করেন। মামলা সূত্রে জানা যায়, ৩ মার্চ রাতে পিকনিকের সময় লাউডস্পিকার বাজানোর বিষয়ে গ্রামবাসীদের কেউ পুলিশকে ফোন দেয়। পুলিশ সেখানে গিয়ে বাধা দিলে একপর্যায়ে স্থানীয়রা তাদের ওপর হামলা চালায়।

মামালার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই হান্নান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'স্থানীয়রা পুলিশের কাজে বাধা দেয় ও জামা ছিঁড়ে ফেলে। এতে এসআই নাসির, নায়েক জুয়েল ও একজন চৌকিদার আহত হন। পরে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ পাঠালে তাদের ওপরও হামলার চেষ্টা চালায় স্থানীয়রা।'

হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বাবুগঞ্জ থানার ওসি মো. মাহাবুবুর রহমান ডেইলি স্টারকে জানান, 'ওই ৩ নারীকে নির্যাতনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। আমরা আদালতের কোনো আদেশের কপিও পাইনি।'

নির্যাতনের শিকার আকাশি বেগম, রাশিদা ও মালা বেগম বর্তমানে জামিনে আছেন বলে জানা গেছে। অভিযোগের বিষয়ে তাদের মন্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।

Comments

The Daily Star  | English

Made with US cotton? Pay less at US customs

US customs will apply a tariff rate only to the non-American portion of a product's value

10h ago