আড়িয়ল বিলের জমি দখল, মাটি ভরাট ও নির্মাণ কাজ বন্ধের নির্দেশ হাইকোর্টের

আড়িয়ল বিলে নির্মিত স্থাপনা অপসারণ এবং সেখানে ভরাট করা মাটি সরিয়ে জলাশয় রক্ষার নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, তার কারণ দর্শানোর নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
আড়িয়ল বিলের জমি দখল, মাটি ভরাট ও নির্মাণ কাজ বন্ধের নির্দেশ হাইকোর্টের
আড়িয়ল বিলের বিভিন্ন অংশ দখল করে স্থপনা নির্মাণ করা হচ্ছে। ছবি: স্টার

মুন্সীগঞ্জের অন্যতম বৃহৎ জলাভূমি আড়িয়ল বিলে মাটি ভরাট, স্থাপনা নির্মাণ ও দখল অবিলম্বে বন্ধ করতে আজ বুধবার সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।

মুন্সীগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার, শ্রীনগরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালককে আড়িয়ল বিলের জমি দখল, মাটি ভরাট ও স্থাপনা নির্মাণ বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। 

এ ছাড়া ৩ মাসের মধ্যে আদালতে এ বিষয়ে প্রতিবেদন জমা দিতেও বলা হয়েছে।

আদালত এ বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ২০১০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত সময়ের আড়িয়ল বিলের স্যাটেলাইট এরিয়াল ম্যাপ জমা দিতে বলেছে।

আড়িয়ল বিল দখল ও অবৈধ মাটি ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণের হাত থেকে রক্ষা করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি নির্দেশনা চেয়ে মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) করা রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক-আল-জলিলের বেঞ্চ এই আদেশ দেন।

আড়িয়ল বিল রক্ষায় তাদের নিষ্ক্রিয়তাকে কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়েও রুল জারি করেছে হাইকোর্ট বেঞ্চ।

এ ছাড়া আড়িয়ল বিলে ইতোমধ্যে নির্মিত স্থাপনা অপসারণ এবং সেখানে ভরাট করা মাটি সরিয়ে জলাশয় রক্ষার নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, তা কারণ দর্শানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

এর আগে গত ২২ জুলাই দ্য ডেইলি স্টারে 'আড়িয়ল বিল আন্ডার থ্রেট' শিরোনামে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ১৪ আগস্ট হাইকোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা হিসাবে আবেদনটি জমা দেয় এইচআরপিবি।

আবেদনে মানবাধিকার সংস্থাটি মুন্সীগঞ্জের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, পরিবেশ অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট পরিচালককে অবিলম্বে আড়িয়ল বিলে জমি দখল, মাটি ভরাট ও স্থাপনা নির্মাণ বন্ধের নির্দেশ দিতে হাইকোর্টের কাছে আবেদন করে। 

এ ছাড়া মানবাধিকার সংস্থাটি আড়িয়ল বিলে ২০১০ সালের আগের স্যাটেলাইট ছবি জমা দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিতে হাইকোর্টকে অনুরোধ করেছে।

মানবাধিকার সংগঠনটি আড়িয়ল বিল রক্ষায় স্থানীয় প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা, ব্যর্থতা, দখল ও অবৈধভাবে মাটি ভরাট এবং নির্মাণ অবৈধ ঘোষণা করা কেন উচিত নয় তা ব্যাখ্যা করতে সেখানকার কর্তৃপক্ষকে জিজ্ঞাসা করে একটি রুল জারি করতে হাইকোর্টকে অনুরোধ করেছে।

পিটিশনের উদ্ধৃতি দিয়ে, এইচআরপিবি সভাপতি এবং সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রাকৃতিক জলাশয় সংরক্ষণ আইন-২০০০ এবং বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-১৯৯৫-এর অধীনে কোনো জলাশয় দখল, মাটি ভরাট এবং কাঠামো নির্মাণ শাস্তিযোগ্য অপরাধ।'

তিনি আরও বলেন, 'অবৈধ রিয়েল এস্টেট ডেভেলপার ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো আড়িয়ল বিলের কিছু অংশ অধিগ্রহণ করেছে এবং আইন লঙ্ঘন করে সেগুলো বালু দিয়ে ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণ করছে, কিন্তু স্থানীয় প্রশাসন এ ধরনের বেআইনি কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।'

আবেদনের শুনানিকালে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী মইনুল হাসান।

২২ জুলাই প্রকাশিত দ্য ডেইলি স্টারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আড়িয়ল বিল অবৈধ রিয়েল এস্টেট ডেভেলপারদের মাধ্যমে হুমকির সম্মুখীন। এই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো জলাভূমির কিছু অংশ অধিগ্রহণ করেছে, সেগুলো বালি দিয়ে ভরাট করেছে এবং আবাসিক এলাকা হিসেবে গড়ে তোলার জন্য সম্ভাব্য ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে সাইনবোর্ড স্থাপন করেছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, আড়িয়ল বিলের ওপর ক্রমাগত দখলদারত্ব অব্যাহত থাকায়; এর অস্তিত্বই হুমকির মুখে পড়েছে এবং এক সময়ের বিশাল বিলটি ধীরে ধীরে কংক্রিটের জঙ্গলে পরিণত হচ্ছে।

 

দ্য ডেইলি স্টারের মূল প্রতিবেদন 

https://www.thedailystar.net/weekend-read/news/arial-beel-under-threat-3375386

 

 

Comments

The Daily Star  | English

Floods cause Tk 14,421 crore damage in eastern Bangladesh: CPD study

The study highlighted that the damage represents 1.81 percent of the national budget for fiscal year (FY) 2024-25

2h ago