নরসিংদী

উপজেলা চেয়ারম্যান হত্যায় ‘জড়িত’ আ. লীগ নেতা এমপি মোহনের সঙ্গে মঞ্চে

শিবপুর উপজেলা পরিষদে অনুষ্ঠিত সভায় সবুজ পাঞ্জাবি পরা এমপি মোহনের পেছনে বামপাশে আওয়ামী লীগ নেতা আসাদ। ছবি: সংগৃহীত

নরসিংদীর শিবপুরে উপজেলা চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ খান হত্যায় জড়িত স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আসাদকে সঙ্গে নিয়ে সভা করেছেন ওই আসনের সংসদ সদস্য জহিরুল হক ভূইয়া মোহন।

আজ বুধবার দুপুরে শিবপুর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় উপজেলার প্রশাসনিক ভবন ও হলরুমও উদ্বোধন করেন এমপি মোহন।

অভিযুক্ত আসাদুজ্জামান আসাদ শিবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এবং স্থানীয়ভাবে এমপি মোহনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। 

জানা যায়, গত ২৫ ফেব্রুয়ারি শিবপুরের উপজেলা চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ খানের বাসায় ঢুকে তাকে গুলি করে দুর্বৃত্তরা। রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৩১ মে তিনি মারা যান।

উপজেলা চেয়ারম্যানকে গুলির ঘটনায় ৭ মার্চ মো. ফরহাদ হোসেন ওরফে মোফাজ্জল হোসেন সরকার (৩৪) ও আরিফুল ইসলাম আরিফকে (২৮) মতিঝিল এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা মতিঝিল জোনের বিশেষ টিম। 

৮ মার্চ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে পুলিশ জানায়, দুর্বৃত্তরা উপজেলা চেয়ারম্যানকে গুলি করে অস্ত্র ও অব্যবহৃত গুলি গ্রেপ্তারকৃতদের কাছে হস্তান্তর করে। 

এরপর ওই দুজন শিবপুর থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আসাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং তার নির্দেশে আত্মগোপন করে।

পরে আসাদ তাদের অস্ত্র ও গুলিসহ ঢাকায় অবস্থানের নির্দেশ দিলে, দুজন মতিঝিল এলাকায় অবস্থান করে বলে জানায় পুলিশ।

গুলির ঘটনার ২ দিন পর ২৭ ফেব্রুয়ারি উপজেলা চেয়ারম্যানের ছেলে মো. আমিনুর রশীদ খান বাদী হয়ে ৬ জনের নাম উল্লেখসহ ও অজ্ঞাত ১০-১২ জনকে আসামি করে শিবপুর মডেল থানায় মামলা করেন।

চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ খান মারা যাওয়ার পর মামলায় সংসদ সদস্য জহিরুল হক ভূইয়া মোহন, আওয়ামী লীগ নেতা আসাদুজ্জামানসহ মোট ২০ জনের নাম অন্তর্ভুক্ত করার অনুরোধ জানিয়ে ৪ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি আবেদন করেন আমিনুর।

স্থানীয়রা জানান, উপজেলা প্রশাসনের মাসিক ও আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক বিভিন্ন সভা, কর্মসূচি ও রাজনৈতিক জনসমাবেশে অভিযুক্ত আসাদকে প্রথম সারিতে দেখা যায়।

আজ বুধবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ মোহাম্মদ সজীবের সভাপতিত্বে শিবপুর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন এমপি মোহন। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তাপসী রাবেয়া, উপজেলা প্রকৌশলী খন্দকার গোলাম শওকত, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুহসীন নাজির, সাধারণ সম্পাদক সামসুল আলম ভূইয়া রাখিল, যুগ্ম-সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ প্রমুখ।

নিহত চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ খানের ছেলে আমিনুর রশিদ খান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'শুধু রাজনৈতিক কর্মসূচি নয়, উপজেলার আইন-শৃঙ্খলা বিষয়ক সভায় এমপির সঙ্গে আসাদকে দেখা যায়। আমার বাবার হত্যায় তার সম্পৃক্ততা পেয়েছে পুলিশ। একজন সংসদ সদস্য খুনিদের আশ্রয় দেওয়ায় আমরা হতাশ ও ক্ষুব্ধ।'

জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ মোহাম্মদ সজীব ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি নতুন এসেছি। কার বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ আছে, আমি জানি না। রাজনৈতিক নেতারা সংসদ সদস্যদের সঙ্গে আসেন। আপনি যার কথা বলছেন আসাদ, তাকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি না।'

যোগাযোগ করা হলে আওয়ামী লীগ নেতা আসাদুজ্জামান আসাদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি ওই মামলায় উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়েছি এবং ঢাকার নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করেছি। তারাও জামিন দিয়েছেন এবং মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে। তাছাড়া প্রশাসনও আমাকে কিছু বলছেন না। আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে নিয়মতান্ত্রিকভাবে কাজ করছি।'

হত্যাকাণ্ডে জড়িত আওয়ামী লীগ নেতা আসাদকে নিয়ে মঞ্চে ওঠার বিষয়ে জানতে চাইলে সংসদ সদস্য জহিরুল হক ভূইয়া মোহন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আসাদুজ্জামান আসাদ আওয়ামী লীগের পদধারী নেতা। পুলিশ তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেই, অপরাধী হয়ে যাবে না। আদালতে সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে প্রমাণ করতে হবে।'

তিনি আরও বলেন, 'দলও তাকে বহিষ্কারাদেশ দেয়নি। তাহলে আমার সঙ্গে কর্মসূচিতে থাকতে অসুবিধা থাকার কথা নয়।'

Comments

The Daily Star  | English

Threat of fresh Rohingya influx looms as clashes erupt in Myanmar

Gunfire and explosions were heard late Friday night from villages across the border in Myanmar opposite Whykong union in Teknaf upazila of Cox’s Bazar. Residents, gripped by panic, reported that this was the most intense gunfire they had heard in months.

6h ago