‘ভূমিদস্যুরা ডান চোখ তুলে নিয়েছে, এখন বাম চোখও উপড়ে ফেলার হুমকি দিচ্ছে’

বাউরা পূনম চাঁদ ভুতোরিয়া কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী আনিছুর রহমান। ছবি: স্টার

'গ্রামের চিহ্নিত ভূমিদস্যুরা ধারালো ছুরি দিয়ে আমার ডান চোখ তুলে নিয়েছে। এক চোখ নিয়ে কোনোমতে বেঁচে আছি। এখন বাম চোখটিও উপড়ে ফেলার হুমকি দিচ্ছে।'

কথাগুলো লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বাউরা ইউনিয়নের নবীনগর গ্রামের আনিছুর রহমানের। সে বাউরা পূনম চাঁদ ভুতোরিয়া কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী।

গত বছরের ১৯ নভেম্বর আনিছুরের সঙ্গে অমানবিক এ ঘটনা ঘটে। সেদিন ভূমিদস্যুদের হামলা থেকে বাবা-মাকে বাঁচাতে গিয়ে এক চোখ হারায় সে।

আনিছুরের বাবা মফিজুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, ২০১৩ সালে ৯ শতাংশ জমি কিনে তাতে চাষাবাদ করে আসছিলেন। তবে গ্রামের ভূমিদস্যুরা হঠাৎ সেই জমির মালিকানা দাবি করে জোরপূর্বক তা দখলে নেয়।

এ বিষয়ে পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, গত বছরের ১৯ নভেম্বর মফিজুল তার ক্রয়কৃত জমিতে হালচাষ করছিলেন। এসময় বাউরা ইউনিয়ন কৃষক দলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেনের নেতৃত্বে ১৫-১৬ জন হামলা চালিয়ে মফিজুল ও তার স্ত্রী আনজু আরা বেগমকে রক্তাক্ত জখম করে। খবর পেয়ে বাবা-মাকে বাঁচাতে আনিছুর ঘটনাস্থলে ছুটে যায়। সেসময় আনিছুরকে মাটিতে ফেলে ধারালো ছুরি দিয়ে তার ডান চোখ উপড়ে ফেলে হামলাকারীরা।

এ ঘটনায় ১০ জনের নাম উল্লেখসহ ১৫-১৬ জনের বিরুদ্ধে পাটগ্রাম থানায় একটি মামলা করেন মফিজুল ইসলাম।

তারপরও চিহ্নিত ভূমিদস্যুদের অনবরত হুমকিতে আতঙ্কিত হয়ে পরিবার নিয়ে চরম নিরাপত্তাহীনতায় বসবাস করছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি। উপায়ন্তর না পেয়ে পাটগ্রাম থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করেছেন। 

মফিজুল বলেন, 'আমাদের প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে চিহ্নিত ভূমিদস্যুরা। আমার তিন ছেলে ঠিকমতো স্কুল-কলেজে যেতে পারছে না। ভূমিদস্যুরা সংখ্যায় বেশি ও প্রভাবশালী হওয়ায় আমরা অসহায় হয়ে পড়েছি।' 

'আমরা সন্ধ্যার পর বাড়ির বাইরে যাওয়ার সাহস পাচ্ছি না। হুমকি দেওয়ার কারণে থানায় জিডি করায় ভূমিদস্যুরা আরও বেশি ক্ষিপ্ত হয়ে গেছে', বলেন তিনি।

মফিজুল আরও বলেন, 'আইনি লড়াই করে বেদখল হওয়া জমি হয়তো উদ্ধার করতে পারব, কিন্তু আমার ছেলের চোখ তো আর ফেরত পাব না। তবে আমরা শান্তিতে বসবাস করতে চাই।'

মফিজুলের স্ত্রী আনজু আরা বেগম ডেইলি স্টারকে জানান, আসামিরা আদালত থেকে জামিন পাওয়ার পর থেকেই তাদের প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে। 

'আমরা খুবই অসহায় হয়ে পড়েছি। সন্তানদের নিয়ে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছি', বলেন তিনি।

আনিছুরের ভাষ্য, 'ভূমিদস্যু ও তাদের লোকজনের ভয়ে আমরা কেউই বাড়ির বাইরে ঠিকমতো চলাফেরা করতে পারছি না।'

'আমি এক চোখ হারিয়েছি। খুব কষ্টে বেঁচে আছি। তবে পড়ালেখা করে প্রতিষ্ঠিত হতে চাই আর শান্তিতে বাঁচতে চাই', বলে সে।

তবে পরিবারটিকে অনবরত হুমকি দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত কৃষক দল নেতা আলমগীর হোসেন। 

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পাটগ্রাম থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রমজান আলী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আসামিরা জামিনে রয়েছেন। হুমকির ঘটনায় মফিজুল ইসলাম একটি জিডি করেছেন। পুলিশ জিডি তদন্ত করছে এবং তদন্ত শেষে আইনি প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হবে।'

Comments

The Daily Star  | English

Early US intel assessment suggests strikes on Iran did not destroy nuclear sites: CNN

Israeli Prime Minister Benjamin Netanyahu said Israel had agreed to Trump's ceasefire proposal

2d ago