আদালতে যা বললেন শাজাহান খান, ফারজানা রুপা ও সোলায়মান সেলিম

আদালতে শাজাহান খানের বক্তব্য
শাজাহান খান, ফারজানা রুপা ও সোলায়মান সেলিম। ছবি: সংগৃহীত

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হত্যাসহ বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর জন্য আনিসুল হক, শাজাহান খান, কামাল আহমেদ মজুমদার, আতিকুল ইসলাম, ফারজানা রুপা, শাকিল আহমেদ ও সোলায়মান সেলিমসহ কয়েকজন অভিযুক্তকে আজ বুধবার সকালে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তোলা হয়।

এসময় হেলমেট, বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট ও হ্যান্ডকাফ পরিয়ে তাদের হাজতখানা থেকে বের করা হয়। তবে কাঠগড়ায় উঠানোর সময় তাদের হ্যান্ডকাফ ও হেলমেট খুলে দেওয়া হয়। এরপর ১০টা ১৫ মিনিটে বিচারক এজলাসে উঠলে তাদের বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর শুনানি শুরু হয়। পরে আদালত এক এক করে তাদের গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন। এরপর তাদের আদালত থেকে নামিয়ে গারদখানায় নেওয়া হয়।

আজ আদালতে তোলার আগে ও পরে এই আসামিদের কয়েকজনের সঙ্গে সাংবাদিকদের কিছু কিছু কথা হয়। 

কারাগারে থেকে সন্ত্রাসীদের হাত থেকে নিরাপদে আছি: শাজাহান খান

এসময় শাজাহান খানকে কেমন আছেন জিজ্ঞেস করেন এক সাংবাদিক। উত্তরে তিনি বলেন, আছি তোমাদের দোয়ায়। দোয়া করবা আমার জন্য। 

তখন ওই সাংবাদিক বলেন, কী দোয়া করব?

উওরে শাজাহান খান বলেন, দোয়া করবা যেন তাড়াতাড়ি মুক্তি পেয়ে দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা কীভাবে ফিরিয়ে আনা যায় এবং আগামী নির্বাচনে কীভাবে অংশগ্রহণ করতে পারি, এ সমস্ত কারণে দোয়া করবা। 

তখন ওই সাংবাদিক আবার বলেন, সবাই বলছে আপনারা দেশের বারোটা বাজিয়েছেন। তখন শাজাহান খান বলেন, আমরা বারোটা বাজিয়েছি না কারা বারোটা বাজিয়েছে এটা সামনে প্রমাণিত হবে।

শুনানি শেষে গারদখানায় নেওয়ার সময় আরেক সাংবাদিক তাকে জিজ্ঞেস করেন আপনি এত হাসেন কেন। তখন শাজাহান খান বলেন, আমি সবসময় হাসি, মৃত্যুর আগ পর্যন্ত হাসতে থাকব।

এরপর কারাগারে কেমন আছেন জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, খুব ভালো আছি। কারাগারে থেকে সন্ত্রাসীদের হাত থেকে নিরাপদে আছি।

আমাকে ফাঁসাতে একটা হত্যা মামলাই তো যথেষ্ট: ফারজানা রূপা

আজ শুনানির একপর্যায়ে ফারজানা রুপা আদালতের অনুমতি নিয়ে কথা বলতে চান। এসময় আদালতের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমার পক্ষে কথা বলার জন্য আইনজীবী নেই। আমি কি আমার জামিনের পক্ষে কথা বলতে পারব?

এসময় বিচারক বলেন, এখানে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানো হচ্ছে, জামিনের শুনানি হচ্ছে না। এরপর ফারজানা রুপা বলেন, মামলা তো ডজন খানেক গড়াচ্ছে। আমি একজন সাংবাদিক। আমাকে ফাঁসানোর জন্য একটা হত্যা মামলাই তো যথেষ্ট। 

পরে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মনিরুল ইসলাম তাকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখান। এসময় আসামির ডকে থাকা অবস্থায় শাকিল ও ফারজানা একে অপরের সঙ্গে দীর্ঘ আলাপচারিতা করেন।

যেকোনো সময় ফাঁসির আদেশ এলে অবাক হব না: সোলাইমান সেলিম

কাঠগড়ায় ওঠে সোলাইমান সেলিম এক আইনজীবীকে ডেকে বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলতে থাকেন। কথা বলার সময় আইনজীবী সোলাইমান সেলিমের কাছে কারাগারে কেমন জীবন কাটাচ্ছেন জানতে চান। এসময় সোলাইমান সেলিম বলেন, রোজা আছি। বই পড়ি। পরিবারের সঙ্গে ফোনে কথা বলা যায়। সেহরি ও ইফতারে খাবার নরমাল দেয়। দেখছেন না সবার মুখ কেমন শুকনো।

কিছুক্ষণ পরই এজলাসে বিচারক আসেন। তবুও কর্ণপাত করেন না সোলাইমান সেলিম। সাংবাদিকদের উদ্দেশ করে সোলাইমান সেলিম বলেন, অনেক সাংবাদিক ভুয়া নিউজ করে। তারা লিখেছে শাজাহান খানসহ অনেকে নাকি কারাগারে ভালো খাবার খাচ্ছে। এসব ভুয়া নিউজ করে আমাদের অবস্থা খারাপ করছে।

এসময় পুলিশ সদস্যরা তাকে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে কথা বলতে বারণ করেন। তখন সোলাইমান সেলিম পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশ্যে বলেন, 'জবাই তো দেবেন। একটু সময় দেন।'

এরপরই ক্ষোভ প্রকাশ করে সোলাইমান সেলিম আইনজীবীকে বলেন, যেকোনো সময় ফাঁসির আদেশ আসতে পারে। এতে আমি অবাক হব না। বঙ্গবন্ধুর বাড়ি যেভাবে ভাঙা হয়েছে। বোঝা শেষ।

পরবর্তীতে শুনানি শেষে সোলাইমান সেলিমকে হাজতখানায় নেওয়া হচ্ছিল। এসময় আরেক আইনজীবীকে ডেকে তিনি তার বাবার খোঁজ নেন। তার বাবার শরীর খারাপ। কী অবস্থা খোঁজখবর নিতে বলেন। 

এরপর হাজতখানায় নিয়ে যাওয়ার সময় সোলাইমান সেলিমকে তার বক্তব্য 'যেকোনো সময় ফাঁসির আদেশ'-এর বিষয়ে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, 'তড়িঘড়ি করে বিচার হয় না।'

এরপর তাকে হাজতখানায় নিয়ে যাওয়া হয়।

এদিকে, আজ কামাল আহমেদ মজুমদারকে পুলিশের সহায়তায় কাঠগড়ায় উঠতে দেখা গেছে। শুনানির সময় তিনি কাঠগড়ার দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন এবং কারও সঙ্গে তেমন কোনো কথা বলেননি।

Comments

The Daily Star  | English

Why 1971 still casts a shadow in Bangladesh-Pakistan relations

The truth of the 1971 remains buried in denial, distortion, and evasion

2h ago