মগবাজারে হোটেলে ৩ জনের মৃত্যু: নানা বিষয়ে পুলিশের সন্দেহ, অপেক্ষা ময়নাতদন্তের

নাইম, স্বপ্না ও মনির। ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর মগবাজারের একটি হোটেলের রুমে এক পরিবারের তিনজনের মরদেহ উদ্ধারের ঘটনাটি স্বাভাবিক মৃত্যু, নাকি হত্যাকাণ্ড তা নিয়ে তদন্ত করছে পুলিশ।

ঘটনাস্থলের প্রাথমিক আলামত এবং চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে বিষক্রিয়ার ইঙ্গিত পেয়ে এমন ধারণা করা হচ্ছে।

আজ সোমবার ডিএমপি রমনা বিভাগের উপকমিশনার মাসুদ আলম দ্য ডেইলি স্টারকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে, গতকাল সকালে মগবাজার চৌরাস্তা সংলগ্ন সুইট স্লিপ হোটেলের একটি কক্ষ থেকে এক পরিবারের তিন জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

তারা হলেন- লক্ষ্মীপুরের বাসিন্দা প্রবাসী মনির হোসেন (৪৮), তার স্ত্রী নাসরিন আক্তার স্বপ্না (৩৮) ও তাদের ছেলে নাইম হোসেন (১৮)।

নাইমের চিকিৎসার জন্য তারা গত শনিবার লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ থেকে ঢাকায় আসেন।

উপকমিশনার মাসুদ আলম বলেন, 'প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে বিষক্রিয়ায় তাদের মৃত্যু হয়েছে। তবে এটা কি ফুড পয়জনিং, নাকি কেউ খাবারে বিষ মিশিয়েছে, তা নিশ্চিতে তদন্ত চলছে।'

তিনি আরও বলেন, 'মৃত মনিরের আরেক ভাই বিদেশ থেকে আসছেন। তিনি এলে এ ঘটনায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হবে। এছাড়া ময়নাতদন্তের রিপোর্ট ও ভিসেরা পরীক্ষার ফলাফল থেকে প্রকৃত কারণ জানা যাবে।'

ময়নাতদন্তের পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক জাকিয়া তাসনিম জানান, পুলিশ সুরতহালে উল্লেখ করেছে খাদ্যে বিষক্রিয়ায় মৃত্যু হতে পারে। মরদেহ দেখে প্রাথমিকভাবে সেটাই মনে হয়েছে। রক্ত ও ভিসেরা সংগ্রহ করা হয়েছে। রিপোর্ট পেলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।

সংশ্লিষ্ট এক পুলিশ কর্মকর্তা ডেইলি স্টারকে জানান, যে হোটেল থেকে খাবার নেওয়া হয়েছিল, সেখানকার খাবারের বিষয়ে আর কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি এবং এখন পর্যন্ত কারও অসুস্থতার খবরও না পাওয়ায় ঘটনাটিকে সন্দেহজনক মনে হচ্ছে।

পুলিশ বলছে, মৃত পরিবারের এক আত্মীয় কেরানীগঞ্জে থাকেন। শনিবার বিকেলে তিনি তাদের জন্য বাইরে থেকে হোটেলে খাবার এনে দেন বলে জানা গেছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

পুলিশ জানায়, শনিবার সন্ধ্যায় হোটেল সংলগ্ন একটি রেস্তোরাঁ থেকে আনা খাবার রাতে খাওয়ার পর তারা অসুস্থ হয়ে পড়েন। সকালে তাদের আদ-দ্বীন হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক সবাইকে মৃত ঘোষণা করেন।

হোটেলের সহকারী ব্যবস্থাপক আনোয়ারুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কেরানীগঞ্জের ওই চাচা চেক-ইনের সময় তাদের সঙ্গে ছিলেন এবং বিকেল ৫টার দিকে তিনিই খাবার এনে দিয়েছিলেন। রাত ১০টার দিকে তাদের রুমে হোটেলের এক কর্মী গেলে সবাইকে সুস্থ অবস্থাতেই দেখতে পান।'

'পরে রোববার সকালে সেই চাচা হোটেলে এসে একে একে তিনজনকে হাসপাতালে নিয়ে যান,' বলেন তিনি।

ডিসি মাসুদ আলম বলেন, 'ওই চাচাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। হোটেল ও রেস্তোরাঁর সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে, কে কী করছিল, খাবার নেওয়ার সময় কী করছিল, আমরা চুলচেরা বিশ্লেষণ করছি। অনেক বিষয় আমাদের সন্দেহজনক মনে হচ্ছে, আমরা বিষয়গুলো তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছি।'

তিনি আরও জানান, মনির ঈদুল আজহার আগে দেশে এসেছিলেন। কেরানীগঞ্জে তার দুটি বাড়ি এবং ঢাকা-কক্সবাজার রুটে চলাচলকারী কিছু বাস রয়েছে।

এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, 'এখানে সম্পত্তি নিয়ে কোনো বিরোধ ছিল কিনা, তাও আমরা খতিয়ে দেখছি।'

উল্লেখ্য, শনিবার চিকিৎসকের অ্যাপোয়েন্টমেন্ট না পাওয়ায় তারা মগবাজারের সুইট স্লিপ হোটেলে ওঠেন এবং পরদিন সকালেই তাদের মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়।

Comments

The Daily Star  | English

Audits expose hidden bad loans at 6 Islamic banks

Asset quality reviews by international auditors KPMG and Ernst & Young have revealed that six Shariah-based banks in Bangladesh are in a dire financial state, with non-performing loans (NPLs) skyrocketing four times greater than previously reported.

5h ago