চট্টগ্রাম-২ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ২ দলের প্রধান
চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে এবার এমপি হতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির (বিএসপি) চেয়ারম্যান সৈয়দ সাইফুদ্দিন আহমেদ মাইজভান্ডারী।
এই দুই রাজনৈতিক দলের প্রধান এবং আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী খাদিজাতুল আনোয়ার সনি এ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ফলে জমে উঠেছে নির্বাচনী লড়াই।
স্থানীয়দের মতে, তিনজন হেভিওয়েট প্রার্থী একই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় ভোটের লড়াইয়ে নির্বাচনী বৈতরণী পাড় হওয়া প্রত্যেক প্রার্থীর জন্য চ্যালেঞ্জিং হবে। তাই প্রার্থীদের এই মর্যাদার লড়াইয়ে নির্বাচনী প্রচারণা ভোটারদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে।
এই আসনের আরেকটি বিশেষ দিক হলো, এখানে দুটি ভিন্ন দল থেকে দুই বর্তমান সংসদ সদস্য লড়ছেন।
বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী এই আসনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের বর্তমান সংসদ সদস্য। তিনি ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে পরপর দুই মেয়াদে জোট থেকে মনোনয়ন পান এবং দুইবারই নির্বাচিত হন। তবে এবার তাকে জোট থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি।
জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনে আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য খাদিজাতুল আনোয়ার সনিকে এ আসনে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। সনি প্রয়াত রফিকুল আনোয়ারের মেয়ে। রফিকুল আনোয়ার ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে এ আসন থেকে সংসদ সদস্য হন।
সূত্রমতে, নজিবুল এ আসনে জোট থেকে মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী ছিলেন। তিনি আশা করেছিলেন যে আওয়ামী লীগ এই সংসদীয় আসনটি তাকে ছেড়ে দিয়ে তাদের প্রার্থী প্রত্যাহার করবে। তবে এবার তার প্রত্যাশা পূরণ হয়নি।
এদিকে বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির (বিএসপি) চেয়ারম্যান সৈয়দ সাইফুদ্দিন আহমেদ মাইজভান্ডারীও এ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। জুলাইয়ে নির্বাচন কমিশনে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধিত হওয়ার পর সরকারের সঙ্গে দলটির সম্পর্ক রয়েছে বলে জনগণের মধ্যে ব্যাপক জল্পনা-কল্পনা রয়েছে।
ফটিকছড়ির স্থানীয়দের মধ্যেও ব্যাপক জল্পনা ছিল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সমঝোতার ভিত্তিতে সাইফুদ্দিনের জন্য সংসদীয় আসনটি ছেড়ে দিতে পারে। তবে এ আসনে আওয়ামী লীগ তাদের দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছে, আর বিএসপি সাইফুদ্দিনকে প্রার্থী করেছে।
তাই এ আসনে তিন হেভিওয়েট প্রার্থীর মধ্যে ভালো ভোটের লড়াই হবে বলে আশা করছেন ভোটাররা।
এদিকে, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ও ফটিকছড়ি উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান হোসেন আবু তৈয়ব এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় ভোটের লড়াই অন্য মাত্রা পেয়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
উপজেলার সুয়াবিল ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবু তালেব বলেন, `এ আসনে তিনজন হেভিওয়েট প্রার্থী, একজন শক্তিশালী স্বতন্ত্র প্রার্থী এবং আরও চারজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও ভোটের লড়াই মূলত আওয়ামী লীগ প্রার্থী সনি ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আবু তৈয়বের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে।'
তবে নজিবুল বশর তার জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী বলে জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, `আমি এই আসনে চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছি। আমি ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়েছি। আমি ভোটারদের বুঝতে পারি।'
তিনি বলেন, 'প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমি নির্বাচনের লড়াইয়ে আছি। আমি ফটিকছড়িকে সন্ত্রাসের জনপদ থেকে শান্তির জনপদে পরিণত করেছি, তাই ভোটাররা আমাকে ভোট দেবেন বলে আশা করছি।'
স্বতন্ত্র প্রার্থী আবু তৈয়ব বলেন, নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হলে তিনি মনে করেন তার বিজয় সুনিশ্চিত।
তিনি বলেন, 'আমি ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতি করেছি এবং স্থানীয় জনগণের সুখে-দুঃখে সবসময় তাদের পাশে ছিলাম। তাই আশা করছি ভোটাররা আমাকে নিরাশ করবেন না।'
বিএসপি চেয়ারম্যান সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, সরকারের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই।
তিনি বলেন, 'আমরা আমাদের দল থেকে আমাদের প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি। মানুষ পরিবর্তন চায়, তাই তারা প্রতীকে নয়, প্রার্থীকে ভোট দেবে।'
এ বিষয়ে জানতে একাধিকবার ফোন দিলেও আওয়ামী লীগ প্রার্থী খাদিজাতুল আনোয়ার সাড়া দেননি।
Comments