‘এবারের সঙ্গে মিল দেখা যায় ৮৬, ৮৮ ও ৯৬ এর নির্বাচনের’

জেসমিন টুলি। ছবি: সংগৃহীত

জেসমিন টুলি নির্বাচন কমিশনের সাবেক অতিরিক্ত সচিব। ১৯৮৪ সালে চাকরিতে যোগ দেওয়া এ কর্মকর্তা অবসরে গিয়েছেন ২০১৬ সালে। এর আগে সামরিক সরকার, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও দলীয় সরকারসহ বিভিন্ন আমলে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও স্থানীয় নির্বাচন প্রত্যক্ষ করেছেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কেমন দেখেছেন তা নিয়ে কথা বলেছেন দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে।

ডেইলি স্টার: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কেমন দেখলেন?

জেসমিন টুলি: এবারের ভোটটা হয়েছে একটা দলের মধ্যে, সবকিছু সাজিয়ে-গুছিয়ে ভোটারদের সামনে উপস্থাপন করা হয়েছে। যেখানে ভোটারদের তেমন কোনো বিকল্প ছিল না।

ডেইলি স্টার: ভোটের দিনের চিত্র কী দেখলেন?

জেসমিন টুলি: সকাল থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত ভোটকেন্দ্রের যে চিত্র দেখা গেছে তা ইলেকশন কমিশনের (দুই ঘণ্টা পর পর দেওয়া) তথ্যের সঙ্গে মিল ছিল। কোথাও ৮ শতাংশ, কোথাও ১০ শতাংশ, কোথাও বা ২০ শতাংশের তথ্য দেখা গেছে।

কিন্তু ভোটের শেষে যে তথ্য নির্বাচন কমিশন দিয়েছে, সেখানে গিয়ে একটু হোচট খেতে হয়েছে। ৪০ শতাংশ ভোট কাস্ট হতে গেলে ভোটকেন্দ্রে যে সংখ্যক ভোটারের উপস্থিতির প্রয়োজন ছিল সেটা কেন্দ্রগুলোতে ছিল না, আমার কাছে এমনটাই মনে হয়েছে।

ডেইলি স্টার: এর মাধ্যমে এই নির্বাচন কমিশনও কী তার বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে?

জেসমিন টুলি: তফসিল ঘোষণার পর থেকে প্রতীক বরাদ্দের আগ পর্যন্ত কমিশন অনেকটা নমনীয় ছিল। প্রতীক বরাদ্দের পর কমিশন অনেকগুলো ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যেমন- প্রতিটি নির্বাচনী আসনে বিচার বিভাগের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে একটি করে ইনকোয়ারি কমিটি গঠন করেছে। এর আগে কোনো কমিশন এত কমিটি করেনি। আগে জেলা ভিত্তিক কমিটি হতো। অর্থাৎ কমিটি অনেক হয়েছে, এটা ভালো দিক, কিন্তু যত অনিয়ম হয়েছে, সেই মাত্রার শাস্তি দেখা যায়নি।

ডেইলি স্টার: তাহলে কমিটি গঠন করে লাভ কী হলো?

জেসমিন টুলি: দেখেন নির্বাচন সঠিকভাবে করতে গেলে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত লাগে, সেইসঙ্গে সিদ্ধান্তটা আইন অনুযায়ী সঠিক হতে হয়। অভিযোগ পাওয়ার পরপরই কড়া পদক্ষেপ নিতে না পারলে অনিয়ম আরও বেড়ে যায়।

ডেইলি স্টার: ভোটের দিনে হিসাবের কথা বলছিলেন...

জেসমিন টুলি: ভোটের দিন ৩টার দিকে ইসি থেকে ২৭-২৮ শতাংশ ভোটের কথা বলা হলো, এরপর সোয়া পাঁচটার দিকে দেওয়া তথ্য হচ্ছে ৪০ শতাংশ ভোটের। এই জায়গাটাতেই ভোটের হিসাব মেলাতে ঝামেলা হচ্ছে।

এটা ঠিক অনেক সময় ভোটকেন্দ্রে ভোটারের লাইন থাকলে নির্ধারিত সময়ের পরও ভোট নেওয়ার বিধান আছে। কিন্তু কোনো কেন্দ্রে এমন পরিস্থিতির চিত্রের কথা আমরা দেখতে পাইনি। গণমাধ্যমের চোখ দিয়ে আমরা সারাদিনের চিত্র দেখেছি। কিন্তু বেলা ২টার পর এমন কোনো বিষয় ছিল না যে ভোট এত বেড়ে যাবে। উল্টো বিকালবেলা ভোটকেন্দ্রগুলো আরও বেশি শূন্য ছিল।

ডেইলি স্টার: তাহলে প্রশ্ন থেকেই গেল

জেসমিন টুলি: মানুষের মধ্যে একটা প্রশ্ন থেকেই গেল, এটা ঠিক।

ডেইলি স্টার: সরকারি দল বলছে অনেক দল অংশ নিয়েছে, এতে গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে।

জেসমিন টুলি: নির্বাচনটা অনেকটা একদলীয় হয়েছে। ২৭টি দল নির্বাচনে অংশ নিলেও হাতেগোনা কয়েকজন ভিন্ন দল থেকে জয় পেয়েছেন। আর জাতীয় পার্টির যারা নির্বাচিত হয়েছেন তারাও সরকার দলের ছেড়ে দেওয়া আসনে। আর স্বতন্ত্র অন্যবারের চেয়ে বেশি হলেও প্রকৃত অর্থে সরকার দলের লোক।

অন্যদিকে যদি তর্কের খাতিরে ধরে নিই যে, ৪০ শতাংশ ভোট প্রকৃত অর্থেই পড়েছে। তারপরও তো ৬০ শতাংশ মানুষ কেন্দ্রে যায়নি। তাহলে তো না যাওয়ার পাল্লাই ভারী হলো। তবে আমার মনে হয় ২২ থেকে ২৫ শতাংশের বেশি মানুষ ভোট দিতে যায়নি।

ডেইলি স্টার: কমিশন দাবি করছে ভোটে তেমন অনিয়ম ও সহিংসতা দেখা যায়নি।

জেসমিন টুলি: যেসব অনিয়মের কথা আমার জেনেছি সেগুলো তো গণমাধ্যমে দেখেছি। কিন্তু সকল কেন্দ্রে গণমাধ্যমের উপস্থিতি ছিল না, সেটা সম্ভবও নয়। আর একটি দলের প্রাধান্য থাকায় বড় অনিয়ম করার প্রয়োজন হয়নি বা যতটুকু হয়েছে সেটা চ্যালেঞ্জে পড়েনি।

ডেইলি স্টার: এই নির্বাচনের সঙ্গে অতীতের কোনো জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মিল দেখেন?

জেসমিন টুলি: ভোটের শতাংশের দিক থেকে দেখলে ২০১৪ সালের সঙ্গে মিল আছে। এছাড়া ১৯৮৮, ১৯৮৬ ও  ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের সঙ্গে মিল দেখা যায়।

ডেইলি স্টার: তাহলে ভালো ভোটের উপায় কী?

জেসমিন টুলি: সুষ্ঠু ভোট অনুষ্ঠানের জন্য দল নিরপেক্ষ সরকার একমাত্র পথ। এখনো পর্যন্ত আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের মতো হয়নি বলেই মনে হয়। নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সুষ্ঠু ভোট অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে কমিশনের ক্ষেত্র খুবই সীমিত, এখানে সরকারই বড় বিষয়।

Comments

The Daily Star  | English

No price too high for mass deportations: Trump

US President-elect Donald Trump has doubled down on his campaign promise of the mass deportation of illegal immigrants, saying the cost of doing so will not be a deterrent

15m ago