‘অনৈতিকভাবে নৈতিক জায়গা তৈরির চেষ্টা করেছে ইসি’

আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) ব্যবহার নিয়ে বিতর্ক চলছে। বেশিরভাগ রাজনৈতিক দলের বিরোধিতা সত্ত্বেও অনূর্ধ্ব ১৫০ আসনে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এর মধ্যেই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে যেসব দল ইভিএমের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিল কিংবা ইভিএম ব্যবহারে শর্ত দিয়েছিল, তাদের নামও ইভিএমের পক্ষে থাকা দলের তালিকায় যুক্ত করেছে ইসি।

আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) ব্যবহার নিয়ে বিতর্ক চলছে। বেশিরভাগ রাজনৈতিক দলের বিরোধিতা সত্ত্বেও অনূর্ধ্ব ১৫০ আসনে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এর মধ্যেই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে যেসব দল ইভিএমের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিল কিংবা ইভিএম ব্যবহারে শর্ত দিয়েছিল, তাদের নামও ইভিএমের পক্ষে থাকা দলের তালিকায় যুক্ত করেছে ইসি।

ইভিএমের বিপক্ষে বা ইভিএম ব্যবহারে শর্ত দিয়েছিল যারা, তাদের নামও ইভিএমের পক্ষে থাকা দলের তালিকায় কেন যোগ করেছে ইসি? তারা কেন এ অসত্য বলল?

বিষয়টি নিয়ে দ্য ডেইলি স্টার কথা বলেছে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আসিফ নজরুল এবং আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদের সঙ্গে।

ড. শাহদীন মালিক, তোফায়েল আহমেদ, সুলতানা কামাল ও অধ্যাপক আসিফ নজরুলের অভিমত, ইসির ওপর সাধারণ মানুষের যেটুকু বিশ্বাসযোগ্যতা ছিল, এ কাজের মাধ্যমে তারা সেটাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করল। এতে আগামী নির্বাচন অবাধ-সুষ্ঠু হওয়ার সম্ভাবনাও আরও ক্ষীণ হলো।

ড. শাহদীন মালিক বলেন, 'নির্বাচন কমিশনের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অস্বচ্ছতার কারণে প্রথম থেকেই তাদের প্রতি আস্থার অভাব ছিল। এখন ইভিএম নিয়ে তারা যে অসত্য কথা বলেছে, সেটা স্পষ্ট। এতে এ নির্বাচন কমিশনের ওপরে আস্থার জায়গায় বিরাট ধস নেমেছে। এ মুহূর্তে মনে হচ্ছে, এই অনাস্থা কাটিয়ে ওঠা নির্বাচন কমিশনের জন্য খুবই কঠিন হবে। একইসঙ্গে ইভিএম নিয়ে সবার সন্দেহ আরও ঘনীভূত হবে।'

শাহদীন মালিকের ভাষ্য, 'সবমিলিয়ে অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে আশাবাদ আরও ক্ষীণ হয়ে গেল। কারণ, যে অনাস্থাটা তৈরি হলো, সেটা ইসির পক্ষে কাটিয়ে ওঠা খুবই মুশকিল হবে। ইভিএমের প্রতিও মানুষের অনাস্থা আরও বাড়বে। ফলশ্রুতিতে সুষ্ঠু নির্বাচনের সম্ভাবনা অনেকটা কমে গেল।'

ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, 'নির্বাচন কমিশন কর্তৃক ইভিএমের বিপক্ষে থাকা ও শর্তসাপেক্ষে ইভিএমের ব্যবহারের কথা বলা দলের নাম ইভিএমের পক্ষে থাকা দলের তালিকায় যোগ করার বিষয়টি গণমাধ্যমে এলো। কিন্তু এরপরও নির্বাচন কমিশন কিছু বলেনি। এর মানে হচ্ছে, তারা এগুলো পাত্তাই দিচ্ছে না। আবার যেসব রাজনৈতিক দলগুলোর বক্তব্য ইসি পাল্টে দিলো, সেই দলগুলোর পক্ষ থেকেও কোনো জোরালো প্রতিবাদ দেখা গেল না।'

নির্বাচন কমিশনকে একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান উল্লেখ করে এ স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ বলেন, 'এ প্রতিষ্ঠান থেকে আমাদের আশা, তারা সততার সঙ্গে কাজ করবে। কিন্তু এখন পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে না যে তারা সততার সঙ্গে কাজ করছে। কেন তারা এ কাজটা করল? এটার কোনো ব্যাখ্যাও তো তারা দিচ্ছে না। এ নির্বাচন কমিশন তো বলেছে যে, "আমরা আমাদের কাজ করব"। ঠিক আছে, তারা তাদের কাজ করুক। কিন্তু একটা ফ্যাক্ট পাল্টে ফেলা, সেটা তো কোনো নিয়ম-নীতির মধ্যে পড়ে না। অথচ সর্বোচ্চ সততা দিয়েই তাদের কাজ করার কথা ছিল।'

নির্বাচন কমিশন যেকোনো উপায়ে ইভিএম ব্যবহারের বৈধতা দিতে চাচ্ছে উল্লেখ করে সুলতানা কামাল বলেন, 'মতামত নেওয়ার মতো একটা আনুষ্ঠানিকতা নির্বাচন কমিশন করেছে। তারপর তারা বলতে চাইছে যে বেশিরভাগ দল ইভিএম চেয়েছে। এতে করে ইভিএম ব্যবহার করার একটা নৈতিক জায়গা তৈরির চেষ্টা তারা করেছে। কিন্তু সেটা করেছে অনৈতিকভাবে। অর্থাৎ অনৈতিকভাবে একটা নৈতিক জায়গা তৈরি করার চেষ্টা করেছে নির্বাচন কমিশন।'

'এখন এ নির্বাচন কমিশনের প্রতি যদি কারও কারও আস্থা থেকেও থাকে, এ কাজের পর সেই আস্থাও কমে গেল। এখন প্রশ্ন জাগবে যে, নির্বাচন কমিশন এমন অসৎ আচরণ কেন করল। এক জায়গায় যদি তারা অসৎ আচরণ করতে পারে, পরবর্তীতে যে আর সেটা করবে না, এ বিশ্বাস তো রাখা যাচ্ছে না', বলেন তিনি।

এ নির্বাচন কমিশনের ন্যূনতম বিশ্বাসযোগ্যতা নেই বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, 'এ নির্বাচন কমিশনের প্রতি আস্থা থাকার কোনো কারণও নেই। রাজনৈতিক দলগুলোর পত্রিকায় প্রকাশিত স্ট্যান্টকে যে বদলে দিতে পারে, সে অবশ্যই ভোটের ফল পাল্টে দিতে পারে।'

নির্বাচন কমিশন বড় ধরনের প্রতারণা করেছে মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, 'এর আগের নির্বাচন কমিশনগুলো অনেক কিছু করেছে। কিন্তু এত বড় প্রতারণা করেনি। এই সাহস যারা পেয়েছে, এ ধরনের অসততা-প্রতারণা যারা করতে পেরেছে, তারা ভোটের ফলও বদলে দিতে পারে। জাতির সঙ্গে এ ধরনের বেপরোয়া প্রতারণা করার জন্য অবিলম্বে এ নির্বাচন কমিশন ভেঙে দেওয়া উচিত।'

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ বলেন, 'রোডম্যাপে নির্দিষ্ট করে ইসি প্রত্যেকটি দল সম্পর্কে বলেছে। কিছু কিছু দল সরাসরি ইভিএমের পক্ষে ছিল, কিছু কিছু দল শর্তসাপেক্ষে পক্ষে মতামত দিয়েছে। আবার কিছু কিছু দল বিপক্ষে মত দিয়েছে। টেবিল সাজিয়ে ক্যাটাগরি করে ইসি এ তথ্য উপস্থাপন করেছে। ১৭টি দল ইভিএমের পক্ষে ছিল। ইসি যে দলকে যে ক্যাটাগরিতে দিয়েছে, কেন দিয়েছে, সেটার ব্যাখ্যাও করেছে। ইসি নিরপেক্ষ রেগুলেটরি। কোন কোন ক্ষেত্রে দলগুলো আপত্তি জানিয়েছে, সেগুলো সব উল্লেখ আছে। সুতরাং ইসির এ তালিকার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই।'

Comments

The Daily Star  | English
DHL Daily Star Bangladesh Business Awards 2023

DHL, Daily Star honour five business luminaries for outstanding achievements

The theme of this year's event is "Bangladesh on the rebound".

5h ago