দলীয় কর্মী না, পুলিশ-প্রশাসনকে নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে বলেছি
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি প্রসঙ্গে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, পুলিশ ও প্রশাসনকে বলেছি নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করতে।
জেলা পরিষদ নির্বাচন উপলক্ষে আজ শনিবার দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে দেশের ৬১ জেলার ডিসি ও এসপিদের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি এ কথা জানান।
সিইসি বলেন, ইভিএমের প্রশ্নে যে বিষয়টা এসেছে যে, ইভিএমে প্রচুর ভোটার এডুকেশনের প্রয়োজন। দূর-দূরান্তে অনেকে টেকনোলজিকে ভয় পান। টেকনোলজির সঙ্গে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না। অনেকে পরামর্শ দিয়েছে, আমরা যদি ইভিএম ব্যবহার করি এ বিষয়ে ব্যাপক ক্যাম্পেইন প্রয়োজন হবে। আমরা অত্যন্ত আনন্দ চিত্তে তাদের বক্তব্য শুনেছি এবং গ্রহণ করেছি। আমরা বলেছি, আপনারা ভোটার এডুকেশনের লক্ষ্যে ব্যাপক প্রচারণা করুন।
তবে নির্বাচন বিষয়ে যে অনাস্থা বেশি উঠে এসেছে, সেটা আমি স্পষ্ট করে বলেছি নির্বাচন প্রশ্নের পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থানের কারণে বিভাজন রয়েছে। আমরা আশা করি, রাজনৈতিক নেতৃত্ব তাদের জ্ঞান-বুদ্ধি-প্রজ্ঞা দিয়ে এই রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান করবে। এগুলো কখনোই নির্বাচন কমিশনের কাজ না। রাজনৈতিক অধিক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন অনুপ্রবেশ করতে পারে না। যে সমস্যাগুলো রাজনৈতিক সেগুলো আমাদের রাজনীতিবিদদের সমাধান করতে হবে। আমাদের দায়িত্ব ও কর্মপরিধি সুস্পষ্টভাবে সংবিধান, আইন ও বিধি-বিধান দিয়ে নির্ধারিত। আমরা চাই, একটি অবাধ, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হোক। সেটা আমরা বারবার ব্যক্ত করে যাচ্ছি। আমরা আশা করি, নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে। প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকলে নির্বাচন সুষ্ঠু হয় না, বলেন হাবিবুল আউয়াল।
তিনি আরও বলেন, জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বলেছি, গণ কর্মচারী হিসেবে আপনাদের সরকার এবং রাজনৈতিক দলের মধ্যে যে পার্থক্য সেটা বুঝতে হবে। আপনারা নিজেদের কখনো দলীয় কর্মী ভাববেন না বা মনে করবেন না। আপনাদের আচরণে এমন কিছু যেন প্রতিফলিত না হয় যাতে জনগণ মনে করতে পারে, আপনারা পক্ষপাতদুষ্ট। আপনারা নিরপেক্ষ নন। আপনাদের অবশ্যই নিরপেক্ষ হয়ে কাজ করতে হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপাররা জনগণের খুব কাছাকাছি থাকেন। আমাদের সংসদীয় গণতন্ত্রে সরকার এবং দল এমনভাবে মিশে থাকে একটা থেকে আরেকটা বেশ কষ্টসাধ্য। যার ফলে অনেক ক্ষেত্রে হয়তো বা প্রভাব চলে আসতে পারে। তারপরও আমরা দেখেছি, আমাদের পুলিশ কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা চেষ্টা করেন নিরপেক্ষ হয়ে কাজ করতে। কোনো ক্ষেত্রে যদি ব্যত্যয় হয়ে থাকে, আমরা বলেছি আপনাদের কাজে কোনো শৈথল্য থাকবে না। নির্বাচন কমিশন কিন্তু এবার শক্ত অবস্থানে থাকবে। আপনাদের আচরণবিধি মেনে এবং আপনাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব গণকর্মচারী হিসেবে বা সরকারি কর্মচারী হিসেবে—দলীয় কর্মী হিসেবে নয়, দায়িত্ব পালন করতে হবে।
আপনারা পুলিশকে নিরপেক্ষ থেকে কাজ করতে বলেছেন, তাদের ওপর কোনো রাজনৈতিক চাপ আছে কি না, জানতে চাইলে সিইসি বলেন, সেটা তারা বলেননি, ওই ধরনের চাপ তাদের নেই। সেটা তারা খোলাখুলি বলেননি। কিন্তু তারাও প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন যে, তারা নিরপেক্ষ আচরণ করবেন। আমরা যেহেতু কমিশন আমরাও সেটা পর্যবেক্ষণ করতে থাকব, বলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচনের সময় কাউকে যেন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে হয়রানি করা না হয়, সেটা বলা হয়েছে। আজকেই কিন্তু শেষ সভা না, আমাদের আরও অনেকগুলো সভা হবে। নির্বাচনের এখনো ১ বছর ২ মাস বাকি আছে। আমরা একটু আগেই শুরু করেছি। তাদের আগাম প্রস্তুতি নিতে হবে। আগামী নির্বাচনে যেন জনগণের আস্থাভাজন হয়ে থাকে এবং সেটা নিরপেক্ষ হয় এবং অংশগ্রহণমূলক হয়।
Comments