গাইবান্ধা-৫ উপনির্বাচন

প্রিসাইডিং অফিসারদের বাধ্য করা হয়েছে নির্বাচনকে অবাধ-সুষ্ঠু ঘোষণায়

গাইবান্ধা-৫ উপনির্বাচনে গত বুধবারের ভোটগ্রহণ অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে মর্মে লিখিত বক্তব্য দিতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সমর্থকরা বাধ্য করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন বেশ কয়েকজন প্রিসাইডিং অফিসার।
উপনির্বাচনের ভোটগ্রহণ বন্ধ ঘোষণা করা হলে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। ছবি: সংগৃহীত

গাইবান্ধা-৫ উপনির্বাচনে গত বুধবারের ভোটগ্রহণ অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে মর্মে লিখিত বক্তব্য দিতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সমর্থকরা বাধ্য করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন বেশ কয়েকজন প্রিসাইডিং অফিসার।

অনেকে দাবি করেছেন, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা তাদের বিবৃতিতে মোট ভোটের পরিসংখ্যান লিখতে বাধ্য করেছেন।

নানা অনিয়মের মধ্যে 'পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে' চলে যাওয়ায় এই আসনের উপনির্বাচন স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন

গত বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে এই অনিয়মের জন্য স্থানীয় প্রশাসন ও প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের দায়ী করে কমিশন।

সাঘাটা উপজেলার মথরপাড়া দাখিল মাদ্রাসার ভোটকেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার মো. মশিউর রহমান জানান, গোপন বুথে একসঙ্গে একাধিক ব্যক্তি প্রবেশের কারণে দুপুর ১টার দিকে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়।

তিনি জানান, তিনি যখন উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত সাঘাটা উপজেলা কমপ্লেক্সে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, তখন প্রায় ২০০-৩০০ এলাকাবাসী তাকে ভোটকেন্দ্র থেকে বের হতে বাধা দেন এবং ভোটের ফলাফল ঘোষণার দাবি জানান।

গতকাল শুক্রবার দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, 'নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে মর্মে একটি বিবৃতি লিখতে তারা আমাকে চাপ দিতে শুরু করেন। ওই পরিস্থিতিতে সেটা মেনে নেওয়া ছাড়া আমার আর কোনো উপায় ছিল না।'

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তা চেয়েছিলেন কি না জানতে চাইলে মশিউর বলেন, 'ভোটকেন্দ্রে মাত্র ৪ জন পুলিশ সদস্য ছিল। তাদের পক্ষে এত বড় ভিড় দমন করা কোনোভাবেই সম্ভব ছিল না। তাই দায়িত্বরত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে ডেকেছি।'

ম্যাজিস্ট্রেট তাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল দলকে ডাকতে বলেন জানিয়ে মশিউর বলেন, 'টহল দলের ৪ জন পুলিশ সদস্য এসে যোগ দেয়। কিন্তু পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য তারাও যথেষ্ট ছিল না।'

সদুল্লাপুর উপজেলার ইউএনও ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রোকসানা বেগম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ভোটগ্রহণ বন্ধ হওয়ার পর প্রিসাইডিং অফিসার আমাকে কল করেন। আমি অন্য ভোটকেন্দ্রে দায়িত্ব পালনে ব্যস্ত ছিলাম। এ কারণে টহল দলকে ডাকতে বলেছিলাম।'

দ্য ডেইলি স্টারের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা ১৬ জন প্রিসাইডিং অফিসারের মধ্যে অন্তত ৪ জন দাবি করেছেন, তাদেরকে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর পোলিং এজেন্টরা লিখিত বিবৃতি দিতে বাধ্য করেছিল যে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে।

যদুরতাইর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও যদুরতাইর উচ্চ বিদ্যালয়ের ভোট কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার মো. আব্দুল লতিফ জানান, প্রায় ১৫-১৬ জন যুবক তাকে ভোট অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে মর্মে বিবৃতি লিখতে বাধ্য করেন।

তিনি বলেন, 'নির্বাচন কমিশন ভোটগ্রহণ স্থগিত করার পর, আমরা সবকিছু নিয়ে উপজেলা পরিষদে ফেরার প্রস্তুতি নেই। হঠাৎ করেই স্থানীয় ১৫-১৬ জন যুবক ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের ঘেরাও করেন এবং নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার জন্য আমাকে চাপ দিতে থাকেন। আমি পুলিশ ও আনসার সদস্যদের কাছে সহযোগিতা চেয়েছিলাম, কিন্তু লাভ হয়নি। তাই ভোটের পরিবেশ ভালো ছিল, এমনটি লিখতে হয়েছে। ভোটের সংখ্যাও উল্লেখ করতে বাধ্য হয়েছি।'

আরেক প্রিসাইডিং অফিসার মো. মাহমুদুল হাসান জানান, তিনি বিকেল ৩টা ২০ মিনিটের দিকে ভোটগ্রহণ স্থগিত হওয়ার বিষয়টি জানতে পারেন। তবে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পোলিং এজেন্টরা নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার দাবি করায় তিনি কেন্দ্র ত্যাগ করতে পারেননি।

তিনি বলেন, 'তাদের চাপে কেন্দ্র ছাড়ার আগে আমাকে বিবৃতি লিখে তাদের কাছে দিতে হয়েছে।'

নশিরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার মিলন কুমার পালকেও সাঘাটা ইউএনও কার্যালয়ে একই ধরনের বক্তব্য জমা দিতে হয়েছে।

তিনি বলেন, 'সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ইউএনও অফিসে ভোটের সব উপকরণ ফেরত দেওয়ার পর আমিও ভোটের সংখ্যা উল্লেখ করে একটি বিবৃতি লিখে দেই। সেখানে যাওয়ার পর দেখতে পাই সবাই এভাবে বিবৃতি লিখে দিচ্ছে, তাই আমিও দিয়েছি। সেখানে লিখতে হয়েছে, ভোটকেন্দ্রে কোনো অনিয়ম হয়নি।'

বারকোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বারকোনা উচ্চ বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার বিষ্ণু পদ সিংহ বলেন, 'সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে সাঘাটা ইউএনও অফিসে ফিরে জানতে পারি, ৫০ জনেরও বেশি প্রিসাইডিং অফিসার অবাধ ও সুষ্ঠু ভোট হয়েছে মর্মে লিখিত বক্তব্য জমা দিয়েছেন। নিজ নিজ ভোটকেন্দ্রে মোট কত ভোট পড়েছে, তাও ওই বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।'

এসব অভিযোগ সম্পর্কে জানতে সাঘাটার ইউএনও সরদার মোস্তফা শাহিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তিনি কল রিসিভ করেননি, এমনকি টেক্সট মেসেজেরও কোনো উত্তর দেননি।

এ বিষয়ে গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক মো. ওয়ালিউর রহমান ও পুলিশ সুপার তৌহিদুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও, তারা কেউ কল রিসিভ করেননি।

গাইবান্ধা-৫ উপনির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম বলেন, 'প্রিসাইডিং অফিসাররা নির্বাচন কমিশনের নির্বাচনী সামগ্রী ফেরত দেওয়ার সময় নির্বাচনের ফলাফল ও ভাউচার জমা দিয়েছেন।'

তিনি আরও বলেন, 'নির্বাচনী পরিবেশ বিষয়ে প্রিসাইডিং অফিসারদের কোনো বক্তব্য দেওয়ার বা লেখার কথা না। এ ধরনের বক্তব্য যদি তারা দিয়েও থাকেন, তার কোনো আইনি ভিত্তি নেই।'

Comments

The Daily Star  | English

Dhaka denounces US 2023 human rights report

Criticising the recently released US State Department's 2023 Human Rights Report, the foreign ministry today said it is apparent that the report mostly relies on assumptions and unsubstantiated allegations

1h ago