রসিক নির্বাচন: ‘অধিক গুরুত্বপূর্ণ’ ৮৬ কেন্দ্রে বাড়তি নিরাপত্তা

রংপুর সিটি করপোরেশন (রসিক) নির্বাচনে ৮৬টি কেন্দ্র অধিক গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে নির্বাচন কমিশন। এসব কেন্দ্রে থাকবে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
রংপুর সিটি করপোরেশন। ছবি: সংগৃহীত

রংপুর সিটি করপোরেশন (রসিক) নির্বাচনে ৮৬টি কেন্দ্র অধিক গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে নির্বাচন কমিশন। এসব কেন্দ্রে থাকবে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

এর পাশাপাশি ২২৯টি কেন্দ্রের সবগুলোতে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা নিশ্চত করার সঙ্গে সঙ্গে সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে মনিটরিংয়ের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা আবদুল বাতেন আজ রোববার দুপুরে এ তথ্য জানিয়েছেন।

আবদুল বাতেন বলেন, 'এবারের রসিক নির্বাচনে ৩৩টি ওয়ার্ডের ২২৯টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হবে। এরমধ্যে ৮৬টি কেন্দ্র অধিক গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব কেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিতে বাড়তি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। কেন্দ্র এবং কেন্দ্রের বাইরে পুলিশসহ অন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মোতায়েন থাকবেন।'

সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণের পথে কেউ যদি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করেন তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

আবদুল বাতেন বলেন, 'নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। পোলিং এজেন্টরা নিজ নিজ জায়গায় বসে থাকবেন। কেউ গোপন কক্ষে প্রবেশ করতে পারবেন না। আশা করি সবার সহযোগিতায় একটি সুন্দর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।'

রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এবার মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ২৬ হাজার ৪৬৯ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ১২ হাজার ৩০২ জন এবং নারী ভোটার ২ লাখ ১৪ হাজার ১৬৭ জন। 

আগামী ২৭ ডিসেম্বর মঙ্গলবার ২২৯টি কেন্দ্রের ১৩৪৯টি ভোটকক্ষে সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ হবে।

এবার মেয়র পদে জাতীয় পার্টির (জাপা) মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, আওয়ামী লীগের অ্যাডভোকেট হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া,  জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ-ইনু) শফিয়ার রহমান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমিরুজ্জামান পিয়াল, খেলাফত মজলিশের তৌহিদুর রহমান মণ্ডল রাজু, জাকের পার্টির খোরশেদ আলম খোকন, বাংলাদেশ কংগ্রেস পার্টির আবু রায়হান এবং  স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মেহেদী হাসান বনি ও লতিফুর রহমান মিলন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এছাড়া সংরক্ষিত ১১টি ওয়ার্ডে ৬৮ এবং ৩৩টি সাধারণ ওয়ার্ডে ১৮৩ জন কাউন্সিলর প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।

প্রচারণার শেষ দিন আজ

গত ৯ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দের মধ্য দিয়ে শুরু হয় রসিক নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা।

টানা ১৭ দিন পর আজ রাত ১২টা থেকে প্রার্থীদের গণসংযোগ, পথসভাসহ সব ধরনের প্রচারণা শেষ হবে।

কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে দুয়েকটি অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়া এবার মেয়র প্রার্থীরা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে প্রচারণার কাজ চালিয়েছেন। নগরবাসীর প্রত্যাশা, এর ধারাবাহিকতায় উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটগ্রহণ হবে।

এদিকে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সুষ্ঠু ভোট নিশ্চিত করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়ার কথা জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। ভোটের দিন মোটরসাইকেল চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। নির্বাচনে মোট ১১জন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করবেন।

রিটার্নিং কর্মকর্তা আবদুল বাতেন জানান, প্রতিটি কেন্দ্রে যে পরিমাণ ইভিএম ব্যবহার হবে, তার দ্বিগুণ ইভিএম তৈরি রাখা হয়েছে। কোনো ভোটকেন্দ্রে ইভিএমে সমস্যা হলে সেটি কেন্দ্রে থাকা কারিগরি লোকজন ঠিক করে দেবে। যদি তারা ব্যর্থ হয়, তবে ভ্রাম্যমাণ কারিগরি দল তা ঠিক করবে। যদি তারাও ঠিক করতে না পারেন, তাহলে ওই কেন্দ্রে যতগুলো ভোট ওই নির্দিষ্ট মেশিনে নেওয়া হবে ততটুকু অক্ষুন্ন রেখে নতুন আরেকটি ইভিএমে ভোট নেওয়া হবে। পরে ২ মেশিনের ফলাফল একত্র করে ফলাফল দেওয়া হবে।

ভোটের পরিবেশ সুষ্ঠু রাখতে প্রতি ওয়ার্ডের জন্য ১ জন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের পাশাপাশি সংরক্ষিত ১১ টি ওয়ার্ডে আরও ১৬ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন বলেও জানান আবদুল বাতেন।

২০১২ সালের ২৮ জুন ২০৫ বর্গকিলোমিটার আয়তনের রংপুর সিটি করপোরেশন গঠনের পর একই বছরের ২০ ডিসেম্বর প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীক ছাড়া নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

সেবার ১ লাখ ৬ হাজার ২৫৫ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হন সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা পেয়েছিলেন ৭৭ হাজার ৮০৫ ভোট এবং বিএনপি নেতা কাওসার জামান বাবলা পেয়েছিলেন ২১ হাজার ২৩৫ ভোট।

দ্বিতীয় মেয়াদে ২০১৭ সালের ২১ ডিসেম্বর দলীয় প্রতীকে অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা ১ লাখ ৬০ হাজার ৪৮৯ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু পেয়েছিলেন ৬২ হাজার ৪০০ ভোট এবং বিএনপির প্রার্থী কাওসার জামান বাবলা পেয়েছিলেন ৩৫ হাজার ১৩৬ ভোট।

সুষ্ঠু ভোটের আশা মোস্তফার

এদিকে মঙ্গলবারের ভোট নিয়ে কোনো শঙ্কা নেই মন্তব্য করে জাতীয় পার্টি মনোনীত লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেছেন, 'নির্বাচন কমিশন একটা ফেয়ার, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করার কমিটমেন্ট করেছে। এর ওপর আস্থা রেখে আমরা নির্বাচন করছি। আমরা মনে করি এই নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে।'

তবে নির্বাচনে অনিয়ম ও কারচুপি করতে আসা যেকোনো অশুভ শক্তিকে প্রতিহত করার জন্য তারা তৈরি আছেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

আজ দুপুরে প্রচারের শেষদিনে শহরের স্টেশন রোড জীবন বীমা মোড় এলাকায় গণসংযোগকালে এ কথা বলেন তিনি।

তবে ইভিএম নিয়ে শঙ্কা না থাকলেও এর 'পেছনের কারিগরদের নিয়ে শঙ্কা আছে' জানিয়ে তিনি আরও বলেন, 'ইভিএমে ভোটগ্রহণ নিয়ে গাইবান্ধার ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলে শান্ত রংপুর আগ্নেয়গিরিতে পরিণত হবে। ইভিএম নিয়ে বিরোধী দলগুলোর যে অনাস্থা, তা প্রকট হবে।'

Comments