চট্টগ্রাম-১০ উপনির্বাচন

কেন্দ্রে কেন্দ্রে ভোটার খরা, নৌকা ছাড়া অন্য প্রতীকের এজেন্ট নেই

আয়োজন আছে, ভোটার নেই। উপনির্বাচনে একটি ভোটকক্ষের চিত্র। ছবি: রাজিব রায়হান/স্টার

আফছারুল আমিনের মৃত্যুতে শূন্য হওয়া চট্টগ্রাম-১০ আসনের উপনির্বাচনে ভোট শুরুর প্রথম ৩ ঘণ্টায় কেন্দ্রে কেন্দ্রে ভোটার খরা দেখা গেছে।

আজ রোববার সকাল ৮টায় এ আসনের ১৫৬টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলবে। এই আসনে মোট ভোটারের সংখ্যা পৌনে ৫ লাখ।

ভোটগ্রহণ শুরুর পর অন্তত ১৬টি কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, এর কোনোটিতেই নৌকা ছাড়া অন্য প্রতীকের এজেন্ট নেই। প্রতিটি কেন্দ্রের সামনে নৌকার সমর্থকরা ভিড় করে থাকলেও ভোটারের দেখা পাওয়া যাচ্ছে খুবই কম।

নগরের লালখান বাজারের শহীদ নগর সিটি করপোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ৩টি কেন্দ্র আছে। প্রিজাইডিং কর্মকর্তা আতিকুর রহমান জানান, প্রথম ১ ঘণ্টায় তার কেন্দ্রের ৮টি বুথে ৩ হাজার ১৯৮টি ভোটের মধ্যে ৫০টি ভোট পড়েছে। এই কেন্দ্রের ৩ হাজার ১৯৮ জন ভোটারের সবাই পুরুষ।

একই সময়ে বিদ্যালয়ের তৃতীয় তলায় আরেক নারীকেন্দ্রের ২ হাজার ২৪৫ জন ভোটারের মধ্যে ১৬ জন ভোট দিয়েছেন বলে জানান প্রিজাইডিং কর্মকর্তা আরিফ মাঈন উদ্দিন খান।

লালখান বাজার জমিয়াতুল উলুম আল ইসলামিয়া মাদরাসা কেন্দ্রের সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা মোজাম্মেল হকের কাছ থেকে জানা যায়, এই কেন্দ্রের ২ হাজার ৫১৬ ভোটের মধ্যে ভোট পড়েছে ৩০।

তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোটারের সংখ্যাও বাড়বে বলে আশাবাদী ছিলেন মোজাম্মেল।

ভোটার খরার একই চিত্র দেখা যায় নাসিরাবাদ সরকারি মহিলা কলেজ কেন্দ্রে। শুরুর ২ ঘণ্টায় ওখানকার ৩ হাজার ৮১৬ জন ভোটারের মধ্যে ভোট দিয়েছেন ৭২ জন।

এই কেন্দ্রগুলোর কোনোটিতেই নৌকা ছাড়া অন্য কোনো প্রতীকের এজেন্ট ছিল না। প্রতিটি কেন্দ্রের বাইরে ছাত্রলীগ-যুবলীগসহ ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের ভিড় দেখা যায়।

সকাল পৌনে ৮টার দিকে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন শহীদ নগর ভোটকেন্দ্রে আসেন। এই লালখান বাজার এলাকা আওয়ামী লীগের দুর্গ হিসেবে পরিচিত।

সাড়ে ১১টার দিকে রেলওয়ে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় গিয়ে দেখা যায়, আড়াই ঘন্টায় কেন্দ্রের ৭টি বুথে ভোট পড়েছে ৪২৪টি। কেন্দ্রের মোট ভোটার ৩ হাজার ৩৪৬ জন। এখানেও নৌকা বাদে অন্য প্রতীকের এজেন্ট নেই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা একরামুল হক বলেন, 'নৌকা ছাড়া অন্য কোনো প্রতীকের কেউ এখানে এজেন্ট হতে আসেননি।'

এর কিছুক্ষণের মধ্যে ওই কেন্দ্রে আসেন সোনালী আঁশ প্রতীকের তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী দীপক কুমার পালিত। ডেইলি স্টার তার কাছে কেন্দ্রে এজেন্ট না থাকার কারণ জানতে চায়। এ ব্যাপারে তার বক্তব্য, তিনি সব কেন্দ্রেই এজেন্ট দিয়েছেন। কিন্তু তারা কেন নেই তা জানার জন্য তার নির্বাচন পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলতে হবে।

রেলওয়ে এমপ্লয়িজ গার্লস হাই স্কুলে দুটি কেন্দ্র। এর মধ্যে একটি কেন্দ্রের ভোটার সংখ্যা ৩৮৯৬। এই কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা অনিক বড়ুয়া জানান, সকাল ১০ টা পর্যন্ত দুই ঘণ্টায় ৭০ টি ভোট পড়েছে।

এই কেন্দ্রের ১০ টা বুথের কোনোটিতে নৌকা ছাড়া অন্য কোনো প্রতীকের এজেন্ট দেখা যায়নি। জানতে চাইলে অনিক জানান, অন্য কোনো প্রার্থীর এজেন্ট তার কাছে তখন পর্যন্ত রিপোর্ট করেননি।

এই স্কুলের অন্য কেন্দ্রে ভোটের সংখ্যা ২ হাজার ৪৩১টি। কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা তোফায়েল হোসেন জানান, শুরুর আড়াই ঘণ্টায় ভোট পড়েছে ৫০টি। এখানেও ৭টি বুথের কোনোটিতে নৌকা ছাড়া অন্য কোনো প্রতীকের এজেন্ট ছিলেন না।

একই চিত্র দেখা যায় টাইগারপাস বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়, ইউসেপ আমবাগান টেকনিক্যাল স্কুল ও নিউ টাইগারপাস সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কেন্দ্রগুলোতে।

ইউসেপ আমবাগান টেকনিক্যাল স্কুল কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার ফারুক হোসেন বলেন, 'কেন্দ্রের ৯টি বুথের সবগুলোতে কেবল শুধু নৌকার এজেন্ট আছে। জাতীয় পার্টি প্রার্থীর একজন এজেন্ট সকালে এসে রিপোর্ট করে ১০ মিনিট পর আবার বেরিয়ে গেছেন। এখনো তিনি আসেননি।'

এ ব্যাপারে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে ভোটে থাকা জাতীয় পার্টির শামসুল আলমেরও দাবি,  সবগুলো কেন্দ্রেই তিনি এজেন্ট দিয়েছেন। তাহলে কেন তারা নেই- এমন প্রশ্নের জবাবে এই প্রার্থী বলেন, 'আমি খোঁজ নিচ্ছি।'
আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মহিউদ্দিন বাচ্চু এদিন সকাল সাড়ে ৮টায় নিউ টাইগার পাস সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দেন। ভোট দিয়ে সাংবাদিকদের জানান, জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী তিনি। 

বছরখানেক ধরে সব ধরনের নির্বাচন বর্জন করে আসা বিএনপি এই উপনির্বাচনেও কোনো প্রার্থী দেয়নি। ভোটে ২ জন স্বতন্ত্রসহ প্রার্থী হয়েছেন মোট ৬ জন।

অন্য প্রার্থীরা হলেন-  বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের রশিদ মিয়া (ছড়ি), স্বতন্ত্র মনজুরুল ইসলাম ভুঁইয়া (রকেট) ও আরমান আলী (বেলুন)।

জাতীয় নির্বাচনের মাস পাঁচেক আগে এ নির্বাচনে ভোটারদের কেন্দ্রে আনাই বড় চ্যালেঞ্জ বলে আগেই জানিয়েছিলেন বিশ্লেষকরা।

এখন পর্যন্ত নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হচ্ছে বলে জানান  রিটার্নিং কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসেন।

এই উপনির্বাচনে ১৬৪ জন প্রিজাইডিং কর্মকর্তা, ১ হাজার ৩১৪ জন সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা এবং ২ হাজার ৬২৮ জন পোলিং অফিসার ভোটকেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করছেন।

 

Comments

The Daily Star  | English

July frontliners dominate the Ducsu race

Many frontliners of the July uprising, which brought down the Sheikh Hasina regime, are now in the spotlight as leading candidates in the Ducsu election.

8h ago