অস্থাবর সম্পত্তি বেড়েই চলেছে প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী ও তার পরিবারের
২০০৮ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত সিলেট-৪ আসনের নির্বাচিত সংসদ সদস্য এবং প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ ও তার পরিবারের সম্পত্তি বেড়েই চলেছে।
২০০৮ সালের তুলনায় মন্ত্রীর আয় বেড়েছে তিন গুণ এবং তার স্ত্রী ও পরিবারের উপর নির্ভরশীলদের আয় শূন্যের ঘরে নেমেছে। তবে এ সময়ের মধ্যে মন্ত্রী ও তার স্ত্রীর অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ বেড়েছে ২২ গুণ।
অর্থাৎ ২০০৮ সালে মন্ত্রী ও তার স্ত্রীর মোট অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ ছিল ৩৪ লাখ ৭ হাজার টাকা যা বর্তমানে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ কোটি ৭৭ লাখ ৫ হাজার ২৮ টাকায়।
নবম, দশম, একাদশ জাতীয় নির্বাচনের সময় তার দাখিলকৃত হলফনামার সাথে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের মনোনয়নপত্রের সাথে দাখিলকৃত হলফনামা বিশ্লেষণ করে এ তথ্য জানা যায়।
২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় পেশায় চা ব্যবসায়ী ও পরামর্শক ইমরান আহমদের বার্ষিক আয় ছিল ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা যা মূলত পেশাগত খাত থেকে আয়। এ সময় তার ওপর নির্ভরশীলদের (পরিবারের অন্য সদস্য) বার্ষিক মোট আয় ছিল ১১ লাখ ১১ হাজার টাকা।
২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় মন্ত্রীর বার্ষিক আয় বেড়ে দাঁড়ায় ৫ লাখ ৮২ হাজার টাকায় এবং ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদের সময় ২৯ লাখ ৫১ হাজার টাকায়।
২০১৪ সালে তার ওপর নির্ভরশীলদের আয় বেড়ে দাঁড়ায় ১৬ লাখ ৪৭ হাজার টাকায়। তবে ২০১৮ সালে তিনি নির্ভরশীলদের আয় প্রদর্শন করেননি।
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় তিনি তার বার্ষিক আয় উল্লেখ করেছেন ৪৪ লাখ ৪০ হাজার ২৫১ টাকার যার মধ্যে চাকুরি (মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য হিসেবে) থেকে আয় ৩২ লাখ ৮৪ হাজার ১৯৬ টাকা। বাকি টাকা ব্যবসা, শেয়ার ও ব্যাংকের সুদ থেকে। এ হলফনামায়ও তিনি তার উপর নির্ভরশীলদের কোনো আয় প্রদর্শন করেননি।
২০০৮ সালে ইমরান আহমদের অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ নগদ টাকা, শেয়ার ও অন্যান্য মিলে ছিল ৫ লাখ ৫২ হাজার টাকা ও তার স্ত্রীর অস্থাবর সম্পত্তি ছিল ২৮ লাখ ৫৫ হাজার টাকা যার মধ্যে রয়েছে ১টি গাড়ি ও নগদ টাকা।
২০১৪ সালে তার অস্থাবর সম্পত্তি বেড়ে দাঁড়ায় ৫২ লাখ ৯২ হাজার টাকা যার মধ্যে ২২ লাখ ৮৯ হাজার টাকা নগদ ও বাদবাকি শেয়ার, গাড়ি ও অন্যান্য। এ সময় তার স্ত্রীর অস্থাবর সম্পত্তি বেড়ে দাঁড়ায় ৭০ লাখ টাকা, যার মধ্যে ৫৫ লাখ টাকা নগদ।
২০১৮ সালে মন্ত্রীর অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ২ কোটি ৫ লাখ টাকা। যার মধ্যে নগদ ৮ লাখ ৭৮ হাজার টাকা, ব্যাংকে আমানত ১ কোটি টাকা এবং শেয়ার, গাড়ি ও অন্যান্য রয়েছে। এ সময় তার স্ত্রীর অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ হয় ১ কোটি ৭১ লাখ টাকা যার সিংহভাগই ব্যাংকে আমানত।
নতুন হলফনামায় তার অস্থাবর সম্পত্তি বেড়ে দাঁড়িয়েছ ৩ কোটি ৭৬ লাখ ৩৫ হাজার ৭১৯ টাকা। যার মধ্যে ৩১ লাখ ৫৫ হাজার টাকা নগদ, ১ কোটি ৫৭ লাখ ৫৭ হাজার ৪০৭ টাকা ব্যাংকে জমা, ৯ লাখ ৬২ হাজার ৫০০ টাকার শেয়ার, ৪৭ লাখ ৭০ হাজার ৫৩৫ টাকার গাড়ি, ১ কোটি ২৯ লাখ ২৫৮ টাকা অন্যান্য ব্যবসায় পুজি ও ৯০ হাজার টাকা অন্যান্য খাতে।
তার স্ত্রীর অস্থাবর সম্পত্তিও এ সময় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ কোটি ৭০ হাজার ৯ টাকায়, যার মধ্যে ৩ কোটি ৫৭ লাখ ৮৩ হাজার ০০৯ টাকা ব্যাংকে, ৪২ লাখ ৩৭ হাজার টাকার দুটি গাড়ি ও ৫০ হাজার টাকার স্বর্ণালঙ্কার রয়েছে।
স্থাবর সম্পত্তির হিসেবে ২০০৮ সালে ইমরান আহমদের ছিল ৫৫ হাজার টাকার কৃষি জমি আর তার স্ত্রীর নামে ১ কোটি ৩ লাখ টাকার একটি দালান ও অকৃষি জমি।
২০১৪ সালে মন্ত্রী ইমরান আহমদের স্থাবর সম্পত্তির অপরিবর্তিত থাকে তবে এবার শ্রীপুর চা বাগানের ব্যক্তিগত মালিকানা ও ২০১২ সালে সম্পাদিক সরকারি ইজারার তথ্য প্রদর্শন করেন। এ সময় তার স্ত্রীর স্থাবর সম্পত্তি অপরিবর্তিত থাকে।
২০১৮ সালে মন্ত্রী তার স্থাবর সম্পত্তির মধ্যে পৈত্রিক ২৪ দশমিক ২৭ একর জমির কথা উল্লেখ করেন তবে তার মূল্য প্রদর্শন করেননি। বাদবাকি সম্পত্তি পূর্বের হলফনামাতে যা ছিল তাই থাকে। এ হলফনামায় তার স্ত্রীর স্থাবর সম্পত্তিও অপরিবর্তিত থাকে।
নতুন হলফনামায় মন্ত্রী ইমরান আহমদের স্থাবর সম্পত্তির হিসেবে পূর্বের হলফনামার সমান পরিমাণ কৃষি, অকৃষি ও চা বাগানের মালিকানা এবং ইজারার বিষয় উল্লেখ করেছেন। তার স্ত্রীর স্থাবর সম্পত্তিও অপরিবর্তিত রয়েছে।
Comments