১৫ বছরে মোয়াজ্জেম রতনের আয় কমলেও সম্পদ বেড়েছে ৪ গুণ

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে হলফনামা জমা দিয়েছেন।
মোয়াজ্জেম হোসেন রতন। ছবি: সংগৃহীত

২০০৮ সালে সুনামগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের আয় কমেছে সাড়ে পাঁচ ভাগ। তবে এই সময়ে রতন ও তার স্ত্রীর স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি ৪ গুণ বেড়েছে।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে প্রথমবার নির্বাচিত হওয়ার আগে ৩ দশমিক ৯৩ একর কৃষি জমি ও ১ দশমিক ১৫ একর অকৃষি জমির মালিক রতন সম্প্রতি জমি বিক্রি করছেন ১ কোটি ১২ লাখ ৮৩ হাজার টাকার।

এছাড়াও সাধারণ কনসালটেন্সি ব্যবসা থেকে ১৫ বছরের ব্যবধানে টেক্সটাইল, বিদ্যুৎ উৎপাদকসহ ৫টি কোম্পানির শেয়ারহোল্ডার হয়েছেন। আয়হীন তার স্ত্রী মাত্র ১ দশমিক ০৭ একর অকৃষি জমির মালিক থেকে বর্তমানে দুইটি কোম্পানির শেয়ারহোল্ডার হয়েছেন, আছে নগদ ৬৪ লাখ টাকা।

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে জমা দেয়া হলফনামার সাথে পূর্বের হলফনামার তুলনায় এসব তথ্য জানা যায়।

ক্যাসিনেবিরোধী অভিযানের সময় দেশে-বিদেশে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জন, ঠিকাদার জি কে গৌছের সঙ্গে ঘুষ লেনদেন, ক্যাসিনো ব্যবসায় অংশীদারত্বসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ২০১৯ সালে দুর্নীতি দমন কমিশনে একটি অভিযোগ দায়ের করা হলে দুদক সংসদ সদস্য রতনের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে।

সেবছর অক্টোবরে তার বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেয় দুদক এবং পরবর্তীতে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে তাকে দুদকে তলব করে জেরাও করা হয়। পরবর্তীতে দুদকের তদন্তের আর অগ্রগতি না হলেও আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাননি এ আসনের তিন বারের সংসদ সদস্য রতন।

২০০৮ সালে প্রথমবার সংসদ সদস্য হওয়ার আগে কনসালটেন্সি ও ব্যবসা করতেন রতন। তখন তার বার্ষিক আয় ছিল ২ কোটি ১৬ লাখ ৮৯ হাজার ৮৪৬ টাকা। এ সময় তার স্ত্রী বা নির্ভরশীলদের কোনো আয় ছিল না।

২০১৪ সালে নিজেকে কনসালটেন্ট, প্রথম শ্রেণির ঠিকাদার ও আমদানিকারক হিসেবে উল্লেখ করলেও রতনের আয় কমে দাঁড়ায় ২০ লাখ ৩০ হাজার ২৬৪ টাকায় যার মধ্যে ৯ লাখ ৩৬ হাজার টাকা কৃষিখাত, ৭ লাখ ৫ হাজার ২১০ টাকা ব্যবসা এবং বাদবাকি পেশাগত ও শেয়ার থেকে। একই সময়ে তার স্ত্রীর ব্যবসা থেকে আয় ছিল ৯ লাখ ২০ হাজার টাকা।

২০১৮ সালে রতন নিজের পেশা হিসেবে পায়েল ট্রেড করপোরেশনের ব্যবসা উল্লেখ করেন এবং তার বার্ষিক আয় হিসেবে মোট ১৫ লাখ ৮৩ হাজার ২০৫ টাকা যার মধ্যে কৃষিখাত থেকে আয় ১২ লাখ ৪৮ হাজার টাকা। এ সময় তার স্ত্রীর আয় বেড়ে দাঁড়ায় ২১ লাখ ৯২ হাজার ৪৮০ টাকায় যার মধ্যে ব্যবসা থেকে ১৭ লাখ টাকা এবং শেয়ার থেকে আয় ৪ লাখ ৯২ হাজার ৪৮০ টাকা।

নতুন দাখিল করা হলফনামা অনুযায়ী রতনের বার্ষিক আয় ৩৯ লাখ ১২ হাজার ৩৮৩ টাকা। যার মধ্যে ১১ লাখ ৯০ হাজার টাকা কৃষিখাত থেকে ও সংসদ সদস্য হিসেবে আয় ২৫ লাখ ৫৩ হাজার ৪২৭ টাকা। এছাড়াও তিনি জমি বিক্রয় বাবদ মূলধনী আয় করেছেন ১ কোটি ১২ লাখ ৮৩ হাজার ৯২৪ টাকা।

২০০৮ সালের হলফনামার তথ্য অনুযায়ী মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের অস্থাবর সম্পত্তির মোট পরিমাণ ছিল ১ কোটি ১৪ লাখ ৭০ হাজার ৪৮৯ টাকা যার মধ্যে নগদ ২২ লাখ ৬৬ হাজার ৪৩০ টাকা ও ৬৯ লাখ ৫০ হাজার ৩১ টাকার গাড়ি রয়েছে। এ সময় তার স্ত্রীর কেবলমাত্র ৪০ তোলা সোনা ছিল।

২০০৮ সালের তুলনায় ২০১৪ সালে তার আয় ১০ ভাগ কম ও ২০১৮ সালে ১৪ ভাগ কম হলেও তার অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ বাড়ে।

২০১৪ সালে তার অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ১ কোটি ৩৭ লাখ ৯৫ হাজার ৯১০ টাকা আর ২০১৮ সালে তা আরও বেড়ে দাঁড়ায় ১ কোটি ৭৬ লাখ ৩২ হাজার ৩৪৭ টাকায়।

একই সময়ে, অর্থাৎ ২০১৪ সালে তার স্ত্রীর অস্থাবর সম্পত্তি হয় ১৬ লাখ ২০ হাজার টাকা এবং ২০১৮ সালে তা আরও বেড়ে দাঁড়ায় ৫২ লাখ ৪২ হাজার ৪৮০ টাকায়। একই সময় তার সোনার পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ৬০ ভরিতে।

নতুন হলফনামার তথ্য অনুযায়ী রতনের অস্থাবর সম্পত্তি গত ৫ বছরে বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে।

বর্তমানে রতনের অস্থাবর সম্পত্তির মোট পরিমাণ ৩ কোটি ৫১ লাখ ৯২ হাজার ১০৪ টাকা, যার মধ্যে নগদ ২ কোটি ৩৬ লাখ ৮৪ হাজার ৬৬৯ টাকা, ৯৯ লাখ ৭৯ হাজার ৩৭২ টাকার দুটি গাড়ি, ৩০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র ও ১০ লাখ ৮ হাজার ৬৩ টাকা ব্যাংকে আমানত রয়েছে।

একই সময়ে তার স্ত্রীর অস্থাবর সম্পত্তি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৬ লাখ ৭৮ হাজার ৮২৬ টাকায় যার মধ্যে ৬৪ লাখ ৭৮ হাজার ৮২৬ টাকাই নগদ।

২০০৮ সালের হলফনামা অনুযায়ী রতন ও তার স্ত্রীর স্থাবর সম্পত্তির মূল্য ছিল ৭৩ লাখ ৪০ হাজার ২৫৮ টাকা।

যার মধ্যে তার নিজের নামে ৩ দশমিক ৯৩ একর কৃষি জমি ও ১ দশমিক ১৫ একর অকৃষি জমি, যৌথ মালিকানায় ২ দশমিক ১৪ একর অকৃষি জমির অর্ধেক, ১৬ শতক বাড়ির এক চতুর্থাংশ এবং স্ত্রীর নামে ১ দশমিক ০৭ একর অকৃষি জমি।

২০১৪ সালে রতন ও তার স্ত্রীর স্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ৩ কোটি ৩৩ লাখ ৮৩ হাজার ৩০২ টাকায়। যার মধ্যে রতনের নামে ৭৪ দশমিক ১৩ একর কৃষি জমি, ১০ শতক জায়গায় ২৫০০ বর্গফুট দালান, টিনশেড আধাপাকা ঘর, রাজধানীর গুলশানে অ্যাপার্টমেন্ট ছাড়াও শূন্য দশমিক ০৮ শতাংশ জমি এবং ৩১ লাখ টাকার ফ্যাক্টরির জমি রয়েছে।

একই সময়ে তার স্ত্রীর নামে ছিল ২ দশমিক ১৪ একর কৃষি জমি। এছাড়াও রতন আরও যৌথ মালিকানাধীন ১৩৩ একর কৃষিজমির অর্ধেকের মালিক ছিলেন যার আর্থিক পরিমাণ হলফনামায় উল্লেখ ছিল না।

২০১৮ সালে রতন ও তার স্ত্রীর স্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ আরও বেড়ে দাঁড়ায় ৩ কোটি ৮১ লাখ ৩ হাজার ৩০২ টাকায়। যার মধ্যে রয়েছে ৫২৩ দশমিক ২৭ একর কৃষি জমি, ৮.২৬৭৫ একর অকৃষি জমি, ২টি দালান, ১টি টিনশেড ঘর, ১টি অ্যাপার্টমেন্ট ও স্ত্রীর নামে ১ দশমিক ০৭ একর জমি।

এছাড়াও এ সময়ে রতন পায়েল টেক্সটাইল লিমিটেড, হাওর বাংলা ফিশারিজ এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড এবং হাওর বাংলা কুরিয়া গ্রীণ এনার্জি লিমিটেডের শেয়ারহোল্ডার হন।

নতুন হলফনামা অনুযায়ী রতন ও তার স্ত্রীর বর্তমান স্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ ৩ কোটি ২১ লাখ ৯৭ হাজার ৮৯১ টাকার। তাছাড়া হলফনামার তথ্য অনুযায়ী গত পাঁচ বছরে তিনি আরও ১ কোটি ১২ লাখ ৮৩ হাজার ৩২৪ টাকার জমি বিক্রয় করেছেন।

বর্তমানে তার স্থাবর সম্পত্তির মধ্যে রয়েছে ১১১৪.১০ শতাংশ কৃষি জমি, ০.৮২৫ শতাংশ অকৃষি জমি, ১টি দালান, ৩টি আধাপাকা ঘর এবং ৫টি কোম্পানির শেয়ার। এছাড়াও তার স্ত্রীর নামে রয়েছে ১৪০ শতাংশ কৃষি জমি ও দুইটি কোম্পানির শেয়ার এবং তার উপর নির্ভরশীলের নামে ১৬১ শতাংশ কৃষি জমি ও একটি অ্যাপার্টমেন্ট।

Comments

The Daily Star  | English

Horrors inside the Gaza genocide: Through a survivor’s eyes

This is an eye-witness account, the story of a Palestinian in Gaza, a human being, a 24-year-old medical student, his real human life of love and loss, and a human testimony of war crimes perpetrated by the Israeli government and the military in the deadliest campaign of bombings and mass killings in recent history.

9h ago