কে জনপ্রতিনিধি হবে, কোনো অফিস নয় মানুষ নির্বাচন করবে: ইসি সানাউল্লাহ

পঞ্চগড়ে মতবিনিময় সভায় নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ। ছবি: স্টার

নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেছেন, জনপ্রতিনিধিদের মানুষ নির্বাচন করবে, কোনো অফিসে সেটা নির্ধারণ হবে না।

আজ সোমবার বিকেলে পঞ্চগড়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কর্মসূচি উপলক্ষে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।

নির্বাচন কমিশনার (ইসি) সানাউল্লাহ বলেন, 'মানুষ নির্বাচন করবে, কে তার প্রতিনিধি হবে, অন্য কেউ নয়। এটা নির্বাচন কমিশনের অফিসে হবে না, জেলা প্রশাসকের বারান্দাতে হবে না, পুলিশ সুপারের বারান্দাতে হবে না, কোনো গোয়েন্দা সংস্থার অফিসেও হবে না।'

'বর্তমান নির্বাচন কমিশন রঙহীন-চেহারাহীন' মন্তব্য করে তিনি বলেন, 'আমাদের কোনো ফেভারিট নেই, আমাদের কোনো পক্ষ নেই, আমরা একটাই পক্ষ, সুষ্ঠুতার পক্ষ, ন্যায়ের পক্ষ, মানুষের ভোটের অধিকার মানুষের কাছে ফিরে দেওয়ার পক্ষ।'

'শিশু, কিশোর, তরুণ, যুবকদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে এই নির্বাচন কমিশন গঠন হয়েছে' উল্লেখ করে ইসি সানাউল্লাহ বলেন, 'আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, ওয়াদাবদ্ধ, আমরা তাদের প্রতি ফোঁটা রক্তের ঋণ পরিশোধ করব। তবে এটি একটি বড় কাজ। শুধু নির্বাচন কমিশনের পক্ষে করা সম্ভব নয়। নির্বাচন কমিশন শুধু সামনে থেকে নেতৃত্ব দেবে, সমন্বয় করবে। কাজটি প্রতিপালন করবে মাঠ পর্যায়ের সবাই।'

'লুঙ্গির উপরে প্যান্ট লাগানো যে চৌকিদার আছে, তিনি থেকে শুরু করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার পর্যন্ত সবাই এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত,' বলেন তিনি।

আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ আরও বলেন, ''আমাদের মনে রাখতে হবে একটি খারাপ নির্বাচন হলে এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানের সম্মান ভূলুন্ঠিত হয়। অতীতে যদি খারাপ নির্বাচন হয়ে থাকে তাহলে আমরা নিজেরাই আমাদের প্রশ্ন করে উত্তর পেয়ে যাব যে, আমাদের ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ণ আছে, নাকি ভূলুণ্ঠিত হয়েছে। যদি ভূলুণ্ঠিত হয়ে থাকে, তাহলে আগামী নির্বাচন আমাদের হারানো ভাবমূর্তি ফিরে পাওয়ার নির্বাচন।'

তিনি বলেন, 'ভোট ব্যবস্থার ওপর মানুষ আস্থা হারিয়ে ফেলেছিল। মানুষের আগ্রহ ছিল না যে ভোটার হতে হবে। আমাদের সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে।'

তিনি আরও বলেন, 'ভোট হচ্ছে আমাদের জাতি হিসেবে সামষ্টিক প্রজ্ঞার প্রতিফলন। ভোট হচ্ছে সামগ্রিক ইচ্ছার প্রতিফলন। ভোট স্বচ্ছ হলে সমাজে আমরা স্থিতিশীলতা আনতে পারি।'

'হেরে যাওয়া প্রার্থী যদি হার মেনে জিতে যাওয়া প্রার্থীকে বুকে জড়িয়ে নিতে পারেন, বলতে পারেন সাবাস আমি তোমার কাছে হেরে আনন্দিত। এটা তখনই বলা সম্ভব, যখন স্বচ্ছ সুন্দর ভোট হবে,' যোগ করেন তিনি।

নির্বাচন কমিশনার বলেন, 'ভোটের সঙ্গে আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা সরাসরি জড়িত। গণতন্ত্রহীনতা আমাদের জাতীয় নিরাপত্তাকে কীভাবে হুমকিতে ফেলে দেয় এখন ক্লাস ওয়ানের ছাত্রও বোঝে। মানুষের ক্ষমতা মানুষের কাছে ফিরে যেতে হবে, কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর কাছে নয়।'

'মানুষের ক্ষমতা যখন মানুষের কাছে থাকবে তখন ১৮ কোটি মানুষকে নিয়ে কেউ খেলতে পারবে না। আর মানুষের ক্ষমতা মানুষের কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে যদি কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর কাছে কুক্ষিগত করা হয় তাহলে ব্যক্তি বা গোষ্ঠী কেনা খুব সহজ। মানুষ কেনা এতো সহজ না,' বলেন তিনি।

সানাউল্লাহ বলেন, 'কষ্ট লাগে যখন শুনি শিক্ষকরাও ব্যক্তিগত ও দলীয় চিন্তার উপরে উঠতে না পেরে মানুষের হক নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে সহায়তা করেছে। ভবিষ্যতে যেন এমন না হয়, সে নিশ্চয়তা আমাদের দিতে হবে। আমি বিশ্বাস করি পরিস্থিতির শিকার ছিল সবাই।'

'কিছু মানুষ হয়তো তালি বাজিয়েছে, কিছু মানুষ হয়তো ফায়দা লোটার চেষ্টা করেছে, কিছু মানুষ হয়তো জীবনের উন্নতির স্বপ্ন দেখেছে। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষ বাধ্য হয়েছে,' বলেন তিনি। 

'তারপরও যদি কেউ ভিন্ন কিছু দেখেন বা ভিন্ন পথ দেখেন তাদের জন্য যা যা করণীয় তাই করা হবে,' বলেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Ducsu: From student union to shaping Bangladesh’s politics

From Language Movement to anti-Ershad protests, Dhaka University’s student body left a lasting mark on national history

1h ago