‘৩০ টাকাই দিতে হবে, না হলে নেমে যান’, কাজী জাফরুল্লাহকে বাস কন্ডাক্টর

আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কাজী জাফরুল্লাহ গতকাল রোববার বাসে চড়ে মিরপুর থেকে কাকলীতে যান। সাধারণ মানুষের ওপর জ্বালানির তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে বাসভাড়া বৃদ্ধি প্রভাব দেখতে এদিন বাসে চড়েন তিনি।
কাজী জাফরুল্লাহ
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কাজী জাফরুল্লাহ। ছবি: সংগৃহীত

আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কাজী জাফরুল্লাহ গতকাল রোববার বাসে চড়ে মিরপুর থেকে কাকলীতে যান। সাধারণ মানুষের ওপর জ্বালানির তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে বাসভাড়া বৃদ্ধি প্রভাব দেখতে এদিন বাসে চড়েন তিনি।

কাজী জাফরুল্লাহ রোববার দুপুরে পল্লবীর পূরবী সিনেমা হলের সামনে থেকে বাসে ওঠেন। তিনি কালসী হয়ে, সৈনিকগেটের সামনে দিয়ে, নৌবাহিনীর সদরদপ্তর পার হয়ে বনানীর চেয়ারম্যানবাড়ি এলাকায় নামেন।

এসময় কাউকে নিজের পরিচয় জানাননি কাজী জাফরুল্লাহ। তাছাড়া মুখে মাস্ক পরা থাকায় কেউ চিনতেও পারেননি। বাস চলতে শুরু করার কিছুক্ষণ পরই কন্ডাক্টর তার কাছে ভাড়া চান। কাকলী পর্যন্ত যেতে তার কাছে ৩০ টাকা ভাড়া চাওয়া হয়, যা সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি।

তখন কাজী জাফরুল্লাহ কন্ডাক্টরের কাছে জানতে চান, কেন তার কাছে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি টাকা নেওয়া হচ্ছে। এই পথের ভাড়া ২০ টাকা।

তিনি কন্ডাক্টরকে যুক্তি দেখান, 'নতুন নিয়মে ২২ শতাংশ পর্যন্ত ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। সেই অনুযায়ী ভাড়া হবে ২৪ টাকা। সেখানে আপনি ২৫ টাকা নিতে পারেন। কিন্তু, ৩০ টাকা নয়।'

তার এই যুক্তিতে কন্ডাক্টর রেগে যান এবং অন্যান্য যাত্রীর মতো তার সঙ্গেও দুর্ব্যবহার করেন। কন্ডাক্টর তাকে বলেন, 'আমাকে এসব যুক্তি-টুক্তি দেখাবেন না। ভাড়া ৩০ টাকা। ৩০ টাকাই দিতে হবে, না হলে এখানেই নেমে যান।'

কাজী জাফরুল্লাহ বাস কন্ডাক্টরের সঙ্গে আর কোনো তর্কে যাননি। তিনি ৩০ টাকা ভাড়া দেন এবং কাকলীর চেয়ারম্যান বাড়ি মোড়ে নেমে যান।

এরপর গতকাল সন্ধ্যায় রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে দলীয় সহকর্মীদের কাছে নিজের এই অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন।

এ বিষয়ে জানতে কাজী জাফরুল্লাহ-এর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি দ্য ডেইলি স্টারের কাছে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন।

তিনি বলেন, 'একেক জন একেকভাবে পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে, তাই আমি নিজে বাস্তব পরিস্থিতি জানতে এটা করেছি। সরকার হঠাৎ জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোয় বাস্তবতা দেখতেই বাসে উঠেছিলাম। আমার মতে, জ্বালানির দাম বৃদ্ধি এবং পরবর্তীতে বাসের ভাড়া বৃদ্ধি মানুষকে কঠিন পরিস্থিতিতে ফেলে দিয়েছে। দলীয় ফোরামে কোনো আলোচনা ছাড়াই (জ্বালানির দাম বাড়ানো) এ ধরনের উদ্যোগ বিভিন্ন পর্যায়ে দলীয় নেতাদের ওপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করেছে।'

তেলের মূল্য বৃদ্ধি নিয়ে দলীয় ফোরামে আলোচনা হয়েছে কি না বা দলীয় প্রতিক্রিয়া কী জানতে চাওয়া হলে আ. লীগের এক কেন্দ্রীয় নেতা গতকাল দ্য ডেইলি স্টারকে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের শনিবারে মন্তব্য শুনতে বলেন।

তিনি বলেন, 'কাদের ভাইয়ের শনিবারের বক্তব্য শোনেন, তাহলে বুঝবেন দলের মনোভাব।'

উল্লেখ্য, শনিবার পেট্রোলিয়াম পণ্যের সর্বোচ্চ মূল্য বৃদ্ধির পরে রাজধানীর শাহবাগে এক অনুষ্ঠানে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের প্রতিক্রিয়া জানতে চান সাংবাদিকরা। তখন কিছুটা উষ্মা প্রকাশ করে তিনি বলেন, 'আপনারা এ ব্যাপারে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের প্রতিক্রিয়া নিন। আমার প্রতিক্রিয়া কেন? আমি তো বিদ্যুৎমন্ত্রী না। বিদ্যুৎমন্ত্রী কী প্রতিক্রিয়া দেন, সেটা আপনাদের শুনতে হবে। এরপর দলেরটা আমি বলব।'

'পরিবহনে আমার যা করার, তা আমি করছি,' যোগ করেন তিনি।

 

Comments