‘উচ্চ আদালতের মন্তব্যে পাবলিক প্লেসে নারীর চলাচল আরও হুমকির মুখে পড়বে’

নরসিংদী রেলওয়েতে যৌন হয়রানির ঘটনায় আদালতের পর্যবেক্ষণে জনপরিসরে নারী নির্যাতনকে স্বাভাবিকীকরণ করা হয়েছে বলে মনে করছে আমরাই পারি জোট। উচ্চ আদালতের এমন মন্তব্যের কারণে পাবলিক প্লেসে নারীর চলাচল আরও হুমকির মুখে পড়বে বলে সংস্থাটি জানায়।

আজ বুধবার গণমাধ্যমকে পাঠানো এক বিবৃতিতে আমরাই পারি জোট জানিয়েছে, নরসিংদী রেলস্টেশনে এক নারীকে পোশাকের কারণে যৌন হেনস্থার ঘটনায় গ্রেপ্তার নারীর জামিন শুনানিতে আদালত ওই তরুণীর পোশাককে 'দৃষ্টিকটু' বলে মন্তব্য করেছেন।

আদালতের এই পর্যবেক্ষণ পুরুষ আধিপত্যমূলক এবং পশ্চাদপদ মানসিকতা প্রসূত উল্লেখ করে বিবৃতিতে সংস্থাটি জানায়, এটি বাংলাদেশের মতো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে একজন নাগরিক হিসেবে নারীর সাংবিধানিক এবং গণতান্ত্রিক অধিকারকে ক্ষুণ্ণ করেছে। সংবিধানের ২৮ ধারাতে বলা রয়েছে, 'কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী,বর্ণ, নারী-পুরুষভেদে বা জন্মস্থানের কারণে কোন নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্র বৈষম্য প্রদর্শন করিবেন না'।

সংস্থাটি আরও জানায়, নরসিংদীতে ওই ঘটনায় কেবল 'নারী' বলেই তরুণীকে হেনস্থা করা হয়েছিল এবং আদালত তার পর্যবেক্ষণের মধ্যে দিয়ে 'নারীর' স্বাধীনতার প্রশ্নে বৈষম্য তুলে ধরেছে। ভিডিওতে দেখা গেছে, সেদিন নরসিংদীর রেলওয়েতে নারীটির পোশাক ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে, কটূক্তি করা হয়েছে, তাকে শারীরিকভাবে আক্রমণ করা হয়েছে যা 'নারী নির্যাতন দমন আইন ২০০০' এর ধারা ১০ অনুযায়ী স্পষ্টই যৌন নিপীড়ন এবং ফৌজদারি অপরাধ। এই ফৌজদারি অপরাধকে অযাচিত বলে উড়িয়ে দেওয়ার কোনো অবকাশ নেই বলে মন্তব্য করেছে সংস্থাটি।

আমরাই পারি জোট উদ্বেগ জানায় যে, আদালতের এই পর্যবেক্ষণ মুক্তিযুদ্ধ চেতনার পরিপন্থী এবং মুক্তিযুদ্ধের লক্ষাধিক নারীর আত্মত্যাগের বিনিময়ে নির্মিত বাংলাদেশ রাষ্ট্রের আদর্শের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারক পর্যায় থেকে এই ধরনের পর্যবেক্ষণ আগামীদিনে জনপরিসরে নারীর প্রতি নির্যাতনের ঘটনাকে পরোক্ষভাবে বৈধতা দিয়ে থাকবে, যা নারীর প্রতি নির্যাতনকে ভয়াবহ মাত্রায় নিয়ে যাবে বলে সংস্থাটি আশঙ্কা জানিয়েছে।

'হাইকোর্টের মন্তব্য সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য'

নরসিংদীর রেলস্টেশনে তরুণীকে হেনস্তা প্রসঙ্গে হাইকোর্টের মন্তব্য সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য এবং অবমাননাকর বলে জানিয়েছে নারীপক্ষ।

এক বিবৃতিতে সংস্থাটি জানায়, হাইকোর্টের এমন মন্তব্য হেনস্তাকারীদের আরো উৎসাহিত করবে এবং ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে, যা নারীর স্বাধীন চলাফেরাকে মারাত্মকভাবে হুমকির মধ্যে ফেলবে।

প্রাতিষ্ঠানিক বা পেশাগত বাধ্যবাধকতা ছাড়া একজন মানুষ কোথায় কী ধরনের পোশাক পরবে তা সম্পূর্ণ তার ব্যক্তিগত রুচি ও পছন্দের বিষয়। এজন্য তার ওপরে আক্রমণ তো দূরের কথা বরং কোনো আপত্তি, বিরূপ মন্তব্য বা অশোভন আচরণ তার নাগরিক মর্যাদার পরিপন্থি। বিচারপ্রার্থী মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল আদালত। সেক্ষেত্রে, হাইকোর্টের এমন মন্তব্য অত্যন্ত অবমাননাকর এবং সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য এবং বাংলাদেশ সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩২- জীবন ও ব্যক্তিস্বাধীনতার অধিকার, অনুচ্ছেদ ৩৬- চলাফেরার অধিকার এর সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

বিবৃতিতে হাইকোর্টকে এই বক্তব্য প্রত্যাহার এবং ভবিষ্যতের আরও সতর্ক হওয়ার দাবি জানিয়েছে নারীপক্ষ।  

 

Comments

The Daily Star  | English

Rizwana reaffirms that election will be held between December and June

"People may have many expectations, but to fulfill them, the enabling environment must be in place"

3h ago