গত ৪ বছর প্রতি মাসে তৈরি হয়েছে ৩টি অবৈধ লেভেলক্রসিং

বাংলাদেশ রেলওয়ের অনুমতি না নিয়েই গত ৪ বছরে সারা দেশে অন্তত ১৪০টি লেভেলক্রসিং তৈরি করেছে বিভিন্ন সরকারি সংস্থা।
স্টার গ্রাফিক্স

বাংলাদেশ রেলওয়ের অনুমতি না নিয়েই গত ৪ বছরে সারা দেশে অন্তত ১৪০টি লেভেলক্রসিং তৈরি করেছে বিভিন্ন সরকারি সংস্থা।

লেভেলক্রসিংগুলো তৈরির মাধ্যমে এলজিইডি, ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভাসহ সরকারি এই সংস্থাগুলো সংশ্লিষ্ট আইন সুস্পষ্টভাবে লঙ্ঘন করেছে। এর ফলে বেড়েছে রেলপথ-সম্পর্কিত মৃত্যুর ঝুঁকি।

বাংলাদেশ রেলওয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশব্যাপী বিস্তৃত ৩ হাজার ৯৩ কিলোমিটার রেলপথের জন্য বর্তমানে রয়েছে ৩ হাজার ১১১টি লেভেলক্রসিং। যার মধ্যে ১ হাজার ২২৫টিই (৪০ শতাংশ) অননুমোদিত।

এ ছাড়াও, অনুমোদিত ১ হাজার ৮৮৬টি লেভেলক্রসিংয়ের মধ্যে ৫০ শতাংশেই কোনো নির্ধারিত গেটম্যান নেই।

রেলওয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৮ সাল থেকে লেভেলক্রসিংয়ে ৩৫৩টি দুর্ঘটনায় ৩২২ জনের মৃত্যু হয়েছে।

তবে, দুর্ঘটনা নিয়ে কাজ করা কিছু বেসরকারি সংস্থার হিসাব অনুযায়ী প্রকৃতপক্ষে এ ধরনের দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা আরও বেশি।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ২৯ জুলাই পর্যন্ত লেভেলক্রসিংয়ে ১১৬টি দুর্ঘটনায় অন্তত ২১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে।

চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত লেভেলক্রসিংয়ে ৩৫টি দুর্ঘটনায় ৭৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর গত বছর ৪৩টি দুর্ঘটনায় ৭৬ জন এবং ২০২০ সালে ৩৮টি দুর্ঘটনায় ৬৯ জন প্রাণ হারিয়েছেন।

দুর্ঘটনা বৃদ্ধির মধ্যেই গতকাল রেল মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, সরকারি সব সংস্থাকে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানাবে যে, তাদের অনুমতি ছাড়া যেন কোনো জায়গায় লেভেলক্রসিং তৈরি করা না হয়।

রেলপথ-সংক্রান্ত দুর্ঘটনা রোধ ও লেভেলক্রসিংয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নতির প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে রাজধানীর রেল ভবনে গতকালের এক আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

গত ২৯ জুলাই চট্টগ্রামের মীরসরাই উপজেলায় লেভেলক্রসিংয়ে একটি মাইক্রোবাসে ট্রেনের ধাক্কায় ১১ জনের মৃত্যুর প্রায় এক মাস পর এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পরে এ ঘটনায় আহত আরও ২ জনের মৃত্যু হয়।

মীরসরাইয়ের ওই লেভেলক্রসিংটি বৈধ ছিল। তবে, দুর্ঘটনার সময় সেখানে কোনো গেটম্যান ছিল না বলে জানা গেছে।

রেলসচিব হুমায়ুন কবিরের সভাপতিত্বে বৈঠকে রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন এবং এলজিআরডি ও সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি), সড়ক ও জনপথ বিভাগ (আরএইচডি) এবং ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

রেলওয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে অননুমোদিত লেভেলক্রসিং ছিল ১ হাজার ৮৫টি। আর বর্তমানে এই সংখ্যা ১ হাজার ২২৫। অর্থাৎ ২০১৮ সালের আগস্টের পর থেকে এখন পর্যন্ত ১৪০টি অননুমোদিত লেভেলক্রসিং তৈরি করা হয়েছে। সেই হিসাবে প্রতি মাসে ৩টি করে অননুমোদিত লেভেলক্রসিং তৈরি করেছে বিভিন্ন সরকারি সংস্থা।

সংক্ষেপিত: ইংরেজিতে পুরো প্রতিবেদনটি পড়তে ক্লিক করুন Illegal rail crossings: Mushrooming despite rising fatalities

Comments