সমাধান হয়নি বৈঠকে, রেলের কর্মবিরতিতে লাখো যাত্রীর ভোগান্তি

কর্মবিরতি কর্মসূচি নিয়ে রেলওয়ের লোকোমাস্টার ও রানিং স্টাফরা অনড় অবস্থানে থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছেন লাখো যাত্রী।

অনেকেই অভিযোগ তুলেছেন, ট্রেন চলবে না রেল কর্তৃপক্ষ এই তথ্য এসএমএস দিয়ে জানালে এত বেশি ভোগান্তি পোহাতে হতো না। বাস সংকটের পাশাপাশি যাত্রীদের রেল যাত্রীদের গুনতে হচ্ছে বাড়তি ভাড়া।

আজ মঙ্গলবার সকালে রেলওয়ে মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান লোকোমাস্টার ও রানিং স্টাফদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন।

এরপর সমস্যা সমাধানে বৈঠকে বসেন রেল সচিব ফাহিমুল ইসলাম।

এদিন দুপুর দেড়টায় কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ভিআইপি ওয়েটিং রুমে এই বৈঠক শুরু হয়।

সূত্র জানিয়েছে, বৈঠকে কোনো সমাধান আসেনি।

বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী সমিতির নির্বাহী সদস্য জাহিদুল ইসলাম তালুকদারের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলের সদস্যরা বৈঠক শেষ না করেই বেরিয়ে যান।

যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফস অ্যান্ড শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সাইদুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বৈঠকে ঐকমত্যে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি।'

'আমরা এখন বৈঠকে যোগদানকারী নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসেছি,' বলেন তিনি।

ব্যবসার কাজে জয়দেবপুর যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হয়েছিলেন কোরবান আলী৷ স্টেশনে গিয়ে জানতে পারেন ট্রেন চলছে না।

'গাজীপুর থেকে কিছু মালামাল আনবো৷ ট্রেনে খরচ কম তাই ট্রেনেই যাওয়া-আসার কথা ভাবছিলাম৷ এখন বাসে যেতে হবে,' বলেন এই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী।

যশোরের মনিরামপুর উপজেলার বাসিন্দা নবাব আলী তার মেয়েকে নিয়ে মঙ্গলবার সকালে ঈশ্বরদী রেল জংশনে আসেন খুলনাগামী সাগরদাঁড়ি এক্সপ্রেস ট্রেনের জন্য।

'আমার মেয়ে ট্রেনে ভ্রমণ করতে পছন্দ করে জন্য আমি কয়েক দিন আগে টিকিট কেটেছিলাম। স্টেশনে এসে জানতে পারলাম কর্মবিরতি চলছে, তাই ট্রেন চলবে না। এখান থেকে সরাসরি কোনো বাস নেই, আমাকে বাস বদলে বদলে বাড়ি ফিরতে হবে, বলেন তিনি।

ইজতেমায় অংশ নিতে সবচেয়ে কম খরচে ঢাকায় পৌঁছাতে লোকাল ট্রেন ঢাকা মেইলে চুয়াডাঙ্গা থেকে সোমবার রাতে ২৬ জন মুসল্লি ঈশ্বরদী জংশনে পৌঁছেন। এরপর আর বিকল্প ব্যবস্থা করতে পারেননি।

তাদের একজন চুয়াডাঙ্গার দর্শনা উপজেলার ফুলবাড়িয়ার বাসিন্দা আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, 'আমাদের বাস ভাড়া করে যাতায়াত করার মতো সামর্থ্য নেই। বাস খুবই ব্যয়বহুল।'

রেলওয়ের পাকশী বিভাগের মহাব্যবস্থাপক মো. মামুনুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন, বাংলাদেশ রেলওয়ের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলো দিয়ে প্রতিদিন মোট ১৭৫টি ট্রেন চলাচল করে। এর মধ্যে ৬৫ জোড়া আন্তঃনগর ট্রেন, লোকাল ট্রেন ও কমিউটার ট্রেন। এসব ট্রেনে কমপক্ষে ৬৫ হাজার মানুষ যাতায়াত করেন।

যারা টিকিট কেটেছেন, তাদের টাকা ফেরত দিতে বলা হয়েছে বলে জানান পাকশী বিভাগের বাণিজ্যিক কর্মকর্তা গৌতম কুমার কুণ্ডু।

নাটোরের বাসিন্দা জান্নাত আরা বলেন, 'মধুমতী এক্সপ্রেসে ঢাকায় যাব বলে আমরা টিকিট কেটেছি। কর্মবিরতির কথা আমরা জানতাম না। আজ আমাদের পারিবারিক অনুষ্ঠান আছে। আমরা সময় মতো স্টেশনে পৌঁছেছি। এখন আমাদের বাসে যাতায়াত করতে হবে। এটা খুবই বিরক্তিকর।'

সিরাজগঞ্জ শহরের বাসিন্দা মো. মালেক বলেন, 'ঢাকা, টাঙ্গাইল ও গাজীপুরে যেতে আমরা ট্রেন পছন্দ করি। কাজ শেষ করে অল্প সময়ে বাড়ি ফেরা যায়। হঠাৎ ট্রেন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমরা এখন বাসে যাব। একদিকে যেমন বাড়তি টাকা খরচ হবে, আবার সময়ও বেশি লাগবে।'

এদিকে ময়মনসিংহ রেলওয়ে স্টেশনে ট্রেন রেখে পালিয়েছেন লোকোমাস্টার।

এদিন সকাল পৌনে ১১টার দিকে নেত্রকোণার মোহনগঞ্জ থেকে ঢাকাগামী হাওর এক্সপ্রেস প্রায় ৫০০ যাত্রী নিয়ে ময়মনসিংহ স্টেশনে পৌঁছায়। এরপরই ট্রেনের স্টাফরা পালিয়ে যান।

এ ঘটনায় যাত্রীরা প্রতিবাদ শুরু করলে রেল পুলিশ ও কর্মকর্তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

Comments

The Daily Star  | English
child victims of July uprising Bangladesh

Child victims of July uprising: Of abandoned toys and unlived tomorrows

They were readers of fairy tales, keepers of marbles, chasers of kites across twilight skies. Some still asked to sleep in their mother’s arms. Others, on the cusp of adolescence, had just begun to dream in the language of futures -- of stethoscopes, classrooms, galaxies. They were children, dreamers of careers, cartoons, and cricket.

11h ago