বিআরটি প্রকল্প

প্রাণঘাতী দুর্ঘটনার পরও নিরাপত্তাব্যবস্থা বেহাল, ঝুঁকি নিয়েই চলাচল

সম্প্রতি ঘটে যাওয়া প্রাণঘাতী দুর্ঘটনার পরও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের কাজ চলছে কোনো ধরনের নিরাপত্তাব্যবস্থা ছাড়াই। যানবাহনসহ সাধারণ মানুষকে আগের মতোই ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে এই প্রকল্প এলাকার ভেতর দিয়ে।
গত রোববার ও সোমবার টঙ্গী বোর্ডবাজার থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকা ঘুুরে বিআরটি প্রকল্পের নিরাপত্তা ব্যবস্থার এমন বেহাল দশাই চোখে পড়েছে। ছবি: স্টার

সম্প্রতি ঘটে যাওয়া প্রাণঘাতী দুর্ঘটনার পরও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের কাজ চলছে কোনো ধরনের নিরাপত্তাব্যবস্থা ছাড়াই। যানবাহনসহ সাধারণ মানুষকে আগের মতোই ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে এই প্রকল্প এলাকার ভেতর দিয়ে।

ঢাকার আব্দুল্লাহপুর থেকে গাজীপুরের শিববাড়ী মোড় পর্যন্ত চলছে বিআরটি প্রকল্পের কাজ। এই পথে প্রতিদিন হাজার হাজার যানবাহন ও মানুষের চলাচল থাকলেও নেই কোনো নিরাপত্তাবেষ্টনী। সুরক্ষাব্যবস্থা ছাড়াই ভারী যন্ত্রপাতি ওঠানো–নামানোর পাশাপাশি চলছে রেলিং স্থাপনের কাজ। চলমান এসব কাজের মধ্যে নিচ দিয়ে চলাচল করছে গণপরিবহন ও সাধারণ মানুষ।

গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় গত ১৫ জুলাই উড়ালসড়কের লঞ্চিং গার্ডার পড়ে এক নিরাপত্তাকর্মী নিহত ও দুজন আহত হন।

সর্বশেষ ১৫ আগস্ট উড়ালসড়কের গার্ডারের চাপায় রাজধানীর উত্তরায় প্যারাডাইস টাওয়ারের সামনে একটি প্রাইভেট কারের ৫ আরোহী নিহত ও ২ জন আহত হন। ওই দিন বিকেলে ব্যস্ত সড়কে গার্ডার ওঠানোর কাজ করার সময় একটি ক্রেন কাত হয়ে গেলে ওই দুর্ঘটনা ঘটে।

এর পরিপ্রেক্ষিতে আবার এই প্রকল্পের নির্মাণকাজের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার ঘাটতির বিষয়টি আলোচনায় আসে।

ছবি: স্টার

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্য অনুসারে, প্রতি ২৪ ঘণ্টায় গাজীপুরের ভেতরে ও সড়ক-মহাসড়ক ব্যবহার করে কমপক্ষে ৫৫ হাজার যানবাহন চলাচল করে। এর অর্ধেকের বেশি যান চলাচল করে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক দিয়ে।

গত রোববার ও সোমবার টঙ্গী বোর্ডবাজার থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত মহাসড়কের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, গার্ডার ও স্ল্যাব সড়কের পাশে উম্মুক্তভাবে ফেলে রাখা। ইট, বালু, সিমেন্ট, রডসহ বিভিন্ন নির্মাণসামগ্রীর অবস্থাও একইরকম।

এভাবে টঙ্গী স্টেশন রোড থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত মিল গেট, চেরাগ আলী, টঙ্গী কলেজ গেট, হোসেন মার্কেট, কুনিয়া তারগাছ, বোর্ডবাজার, বাসন সড়ক, ভোগরা বাইপাস পর্যন্ত কমপক্ষে ১৫টি জায়গায় ঝুঁকিপূর্ণভাবে কাজ চলছে।

এর বেশিরভাগ জায়গাতেই নিরাপত্তা বেষ্টনী ব্যবহার করা হয়নি। বাঁশ, টিন ও কাঠের বেড়া দিয়ে কোনো কোনো জায়গায় নামমাত্র বেষ্টনী দেওয়া হয়েছে।

ছবি: স্টার

ঢাকা-নালিতাবাড়ী সড়কে চলাচলকারী এম এস পরিবহনের চালক তাজুল ইসলামের ভাষ্য, 'নির্মাণকাজ আগের মতোই চলছে। কোথাও ডিভাইডার শুরু হয়ে এমন জায়গায় শেষ করা হয়েছে যেখানে দুর্ঘটনার আশঙ্কা আছে।'

ঢাকা থেকে গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় চলাচলকারী প্রভাতী-বনশ্রী পরিবহনের চালক কামরুল ইসলাম বলেন, 'প্রথম দিকে এই মহাসড়কে টঙ্গীসহ কয়েকটি জায়গায় টিনের ঘেরাও দিয়ে পিলার নির্মাণের কাজ চলছিল। কিন্তু বেশিদিন এটা থাকেনি। এখন কোথাও কোথাও যানবাহন চলাচলে ভারী জিনিস ফেলে চলাচলের গতি নির্দেশ করা হয়েছে। আবার কোথাও কোনো নির্দেশকই নেই।'

গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা মসজিদ মার্কেটের ব্যবসায়ী মোস্তাফিজুর রহমান মার্কেটের তৃতীয় তলা থেকে প্রতিদিন নির্মাণকাজের দৃশ্য দেখেন। তার বক্তব্য, 'ওপর থেকে কেউ এই দৃশ্য দেখলে নিচ দিয়ে যেতে চাইবে না। সব লোহা-লক্করের কাজ। কোনো একটি লোহার দণ্ড নিচে পড়ে গেলে নিশ্চিত দুর্ঘটনা ঘটবে। এসবের নিচে কোনো পাটাতন রাখা হয়নি।'

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রকল্প কর্মকর্তারা বিভিন্ন বৈঠকে ঝুঁকি প্রতিরোধের আশ্বাস দিলেও তার বাস্তবায়ন পর্যাপ্ত নয়। তারা বিকল্প রাস্তার কথা বলেও করেনি।'

গাজীপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. নয়ন মিয়ার ভাষ্য, 'নিরাপত্তা বেষ্টনী না থাকা, ধুলোবালি নিয়ন্ত্রণে পানি না ছিটানো, ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশ মোকাবিলার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না রাখার কারণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বেশ কয়েকবার জরিমানা করা হয়েছে।'

তবে বিআরটি প্রকল্প পরিচালক এ এস এম ইলিয়াস শাহের দাবি, 'নো সেফটি নো ওয়ার্ক—এই ব্যবস্থা কাজের শুরু থেকেই ছিল। এখনো আছে।'

ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, 'তবে বাড়তি সুরক্ষার জন্য ঠিকাদারদের সঙ্গে কথা বলে অধিকতর সুরক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করার প্রক্রিয়া চলছে।'

 

Comments

The Daily Star  | English
DHL Daily Star Bangladesh Business Awards 2023

DHL, Daily Star honour five business luminaries for outstanding achievements

The theme of this year's event is "Bangladesh on the rebound".

9h ago