পাটকল বন্ধ: একদা কর্মচঞ্চল খালিশপুর এখন জনশূন্য

মানুষের কোলাহলে ২ বছর আগেও মুখর ছিল খুলনার সবচেয়ে বড় পাটকল ক্রিসেন্ট ও প্লাটিনাম জুট মিলের শ্রমিক কলোনি। বর্তমানে এই কলোনির ভবনগুলো অযত্ন-অবহেলায় ঝোপঝাড়ে ভরে গেছে।
খালিশপুর শিল্প এলাকা
খালিশপুর শিল্প এলাকা। ছবি: স্টার

মানুষের কোলাহলে ২ বছর আগেও মুখর ছিল খুলনার সবচেয়ে বড় পাটকল ক্রিসেন্ট ও প্লাটিনাম জুট মিলের শ্রমিক কলোনি। বর্তমানে এই কলোনির ভবনগুলো অযত্ন-অবহেলায় ঝোপঝাড়ে ভরে গেছে।

সম্প্রতি, সরেজমিনে খুলনা মহানগরীর বিআইডিসি সড়কের পাশে প্লাটিনাম জুট মিলের শ্রমিক কলোনিতে দেখা গেছে, সারি সারি দ্বিতল ভবনগুলো একেবারেই ফাঁকা।

১ নম্বর গেট দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে ডান পাশে জননী হেয়ার কাটিং সেলুন দেখা যায়। সেলুনের মালিক আবুল কালামের সঙ্গে আলাপ করছিলেন মিন্টু খলিফা। ১৯৮৮ সালে প্লাটিনাম মিলের হাত সেলাই বিভাগে কাজ শুরু করেন তিনি। থাকতেন উত্তর কাঁচা কলোনি লাইনে।

দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, 'মিল বন্ধের আগে কলোনিতে প্রায় ৫-৬ হাজার মানুষ থাকতো। বন্ধ হওয়ার পর অন্তত ৬০ শতাংশ শ্রমিক তাদের পরিবার নিয়ে গ্রামে চলে গেছেন।'

জননী হেয়ার কাটিংয়ের মালিক আবুল কালাম যোগ করেন, 'মিল চালুর সময় আমার দোকানেই ৩ জন কাজ করতো। মিল বন্ধের পর শ্রমিকরা গ্রামে চলে যায়। কাজ না থাকায় কর্মচারী ছাঁটাই করতে হয়েছে।'

একই দৃশ্য খুলনার সবচেয়ে বড় পাটকল ক্রিসেন্টের শ্রমিক কলোনিতে। প্রধান ফটক দিয়ে প্রবেশ করে কথা হয় সেখানকার নিরাপত্তা রক্ষীর সঙ্গে।

কলোনিতে এক সময় ৫-৬ হাজার মানুষ থাকতেন উল্লেখ করে তিনি জানালেন, প্রায় ৮০ ভাগ শ্রমিকই পরিবার নিয়ে বাড়িতে চলে গেছেন। বাকিরা শহরের বিভিন্ন এলাকায় বসবাস করছেন।

তিনি বলেন, 'অনেক শ্রমিক এখন রিকশা বা ইজিবাইক চালান। অনেকে নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করেন। মিল কলোনিতে এখন ১০-১২টি পরিবার থাকে।'

২০২০ সালের ১ জুলাই বন্ধ হয়ে যায় খুলনার খালিশপুর শিল্পাঞ্চলের ৪ পাটকল। কর্মহীন হয়ে পড়েন প্রায় ২৬ হাজার শ্রমিক।

কাজের অভাবে শহরছাড়া শ্রমিকের প্রভাব পড়েছে জনগণনার ফলাফলে।

গণনার প্রাথমিক ফলাফলে দেখা গেছে, খুলনা মহানগরীতে বর্তমান জনসংখ্যা ৭ লাখ ১৮ হাজার ৭৩৫। ২০১১ সালের শুমারির চূড়ান্ত ফলাফলে জনসংখ্যা ছিল ৬ লাখ ৯৪ হাজার ৯৩৩। অর্থাৎ গত ১০ বছরে জনসংখ্যা বেড়েছে মাত্র ২৩ হাজার ৮০২ জন।

যাচাই করে দেখা গেছে, প্রতিটি এলাকায় জনসংখ্যা বাড়লেও গত ১০ বছরে খালিশপুর শিল্পাঞ্চল এলাকায় কমেছে ১৩ হাজার ৬১৫ জন।

পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুসারে, ২০১১ সালের গণনায় খালিশপুর থানা এলাকার জনসংখ্যা ছিল ১ লাখ ৬৫ হাজার ২৯৯। ২০২২ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৫১ হাজার ৬৮৪ জনে। এর প্রভাব পড়েছে মহানগরীর মোট জনসংখ্যায়।

খুলনা বিভাগীয় পরিসংখ্যান কার্যালয়ের যুগ্ম-পরিচালক মো. আশরাফুল আলম সিদ্দিকী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত ১০ বছরে সাড়ে ১৩ হাজার মানুষ কমেছে—বিষয়টি এমন নয়। খুলনায় প্রতি বছর জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার শূন্য দশমিক ৯৭ শতাংশ।'

Comments