পিরোজপুরে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব সেতু উদ্বোধন আজ
পিরোজপুরের ৭ উপজেলার সবগুলোই নদীর কারণে বিচ্ছিন্ন। এর মধ্যে ৫ উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে নদী। ইতোমধ্যে ৩ উপজেলা সেতুর মাধ্যমে সংযুক্ত হলেও এখনো বিচ্ছিন্ন আছে কাউখালী ও নেছারাবাদ উপজেলা।
নদীমাতৃক এ জেলায় সরাসরি সড়কপথে যোগাযোগের সবচেয়ে বড় বাধা কঁচা নদী। নদীর ২ প্রান্তে ৩টি করে মোট ৬টি উপজেলা। নেছারাবাদে যেতে পার হতে হয় আরও এক নদী।
জেলা সদর থেকে পিরোজপুরের অন্য ৪ উপজেলায় যেতে হলে ফেরি কিংবা খেয়ায় পার হতে হয় কঁচা নদী।
খুব জরুরী না হলে, ৪ উপজেলার মানুষ জেলা শহরে আসেন না বা জেলা শহর থেকেও কেউ অতি প্রয়োজন ছাড়া ওই ৪ উপজেলায় যাতায়াত করেন না। বরিশাল থেকে দেশের অন্যান্য প্রান্তে সরাসরি যাতায়াতে বড় বাধা কঁচা নদী।
এ ছাড়া, দক্ষিণাঞ্চল থেকে দেশের কোথাও পণ্য পরিবহন বেশ সময় সাপেক্ষ ও কষ্টসাধ্য। প্রশস্ত এ নদী পার হতে কমপক্ষে ৪৫ মিনিট সময় লাগে। কখনো দেড় থেকে ২ ঘণ্টা লেগে যায়। তাই বরিশাল-পিরোজপুর-খুলনা কিংবা পাথরঘাটা-মঠবাড়িয়া-পিরোজপুর-খুলনা সড়কে যাতায়াত এক দুর্বিষহ অভিজ্ঞতা।
কঁচা নদীর ওপর সেতু নির্মাণ এ অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল। এ দাবিতে তারা বছরের পর বছর মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছেন।
সর্বশেষ ২০১৩ সালের ১৯ মার্চ পিরোজপুর শহরে জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কঁচা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন। এরপর সদর উপজেলার কুমিরমারা ও কাউখালী উপজেলার বেকুটিয়া প্রান্তকে সংযুক্ত করে কঁচা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের জন্য ২০১৬ সালের এপ্রিলে বাংলাদেশ ও চীন চুক্তি করে।
২০১৮ সালের ১ নভেম্বর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সেতু নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২১ সালের ৩১ জানুয়ারি।
চীন সরকারের আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতায় তৈরি সেতুটির দৈর্ঘ্য ১ হাজার ৪৯৩ মিটার। মূল সেতুর দৈর্ঘ্য ৯৯৮ মিটার ও প্রশস্ত ১৩ দশমিক ৪০ মিটার।
২০২০ সালের প্রথম দিকে দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় সেতুর নির্মাণ কাজ বিলম্বিত হয়। চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে ১৭তম ব্যুরো গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেড গত জুনে সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ করে। এর ২ মাস পর এটি চলাচলের জন্য আজ রোববার খুলে দেওয়া হচ্ছে।
আজ সকাল ১০টায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব সেতু বা ৮ম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু উদ্বোধন করবেন। এ উপলক্ষে সেতুর ২ প্রান্তে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
সেতুটি খুলে দেওয়া হলে বরিশাল বিভাগের ৫ জেলার সঙ্গে দেশের অন্যান্য জেলার সরাসরি সড়ক যোগাযোগ সম্ভব হবে। এ সেতু দিয়ে পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে পণ্য পরিবহন করা যাবে। মংলা সমুদ্রবন্দর থেকেও বরিশাল বিভাগের ৫ জেলায় পণ্য পরিবহন করা যাবে।
শুরুতে সেতুর নির্মাণ খরচ প্রায় ৮২২ কোটি ধরা হলেও, এটি নির্মাণে ৮৯৪ কোটি টাকার বেশি খরচ হয়েছে। প্রায় ৬৫৫ কোটি টাকা দিয়েছে চীন সরকার।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের বাস্তবায়নে নির্মিত সেতুটিতে বাংলাদেশ সরকার খরচ করেছে ২৩৯ কোটি টাকার বেশি।
যা আছে সেতুতে
পিসি বক্স গার্ডার ধরনের সেতুটিতে ৮টি পিআর এর ওপর ৯টি স্প্যান আছে। সেতুটির কাস্ট-ইন-সিটু ধরনের পাইলের সর্বোচ্চ গভীরতা ১১৭ মিটার। এর ডায়া ২ মিটার। সেতুটির ভায়াডাক্ট এর দৈর্ঘ্য ৪৯৫ মিটার। ১৫টি পিআর এর ওপর স্প্যান ১৫টি।
সেতুটির অ্যাবাটমেন্ট সংখ্যা ২টি। সেতুটির ২ প্রান্তে সংযোগ সড়ক রয়েছে ১ হাজার ৪৬৭ মিটার। এর ১ হাজার ২৩ মিটার পিরোজপুর প্রান্তে ও বাকি অংশ বরিশাল প্রান্তে।
সেতুর ভার্টিক্যাল ক্লিয়ারেন্স আছে ১৮ দশমিক ৩০ মিটার ও হরাইজন্টাল ক্লিয়ারেন্স ১২২ মিটার।
বরিশাল প্রান্তে নদীরক্ষা কাজ করা হয়েছে ২২০ মিটার অংশে। সেতু নির্মাণে জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে ১৩ দশমিক ৩২ হেক্টর।
১২ মিটার দৈর্ঘ্যর আরসিসি সেতু ও ৪ দশমিক ৫০ মিটার দৈর্ঘ্যর বক্স কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। নদী-শাসন অংশে বিনোদন কেন্দ্র তৈরি করা হয়েছে।
সেতু নির্মাণে দুর্ঘটনা
২০২০ সালের ৭ অক্টোবর চীনের টেকনিশিয়ান প্যান ইয়ানজুন (৫৮) প্রকল্প এলাকায় ছুরিকাঘাতে নিহত হয়। পুলিশ ওই বছরই অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করে।
এ ছাড়া, গত মে মাসে বিয়ের বরযাত্রী বহনকারী গাড়ির বহর সেতু অতিক্রম করায় এর তীব্র সমালোচনা হয়।
Comments