পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধের স্থায়ী সমাধানের দাবিতে ২৩ নাগরিকের বিবৃতি

পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের ৭ সেপ্টেম্বরের সভা স্থগিত হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন দেশের ২৩ জন মানবাধিকার কর্মী ও নাগরিক অধিকার কর্মী।
ছবি: জারীন তাসনিম/ স্টার

পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের ৭ সেপ্টেম্বরের সভা স্থগিত হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন দেশের ২৩ জন মানবাধিকার কর্মী ও নাগরিক অধিকার কর্মী।

বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে তারা বলেন, 'আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, পার্বত্য চুক্তির পর ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি নিষ্পত্তি কমিশন গঠিত হলেও গত ২১ বছরে এ কমিশন একটিও ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি করতে পারেনি। তবে ২০১৬ সালে পার্বত্য ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইনের সংশোধনের পর ভূমি কমিশনের কয়েকটি সভা অনুষ্ঠিত হয় এবং বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়, যা বাস্তবায়নের অপেক্ষায় রয়েছে।' 

'ইতোমধ্যে ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনে ২৬ হাজারের বেশি ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির আবেদন জমা পড়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সঙ্গে পার্বত্য চুক্তি সম্পাদন করেছেন। ২০০৮ সালে দ্বিতীয় বার প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সরকার ক্ষমতায় আসার পর পাহাড়িরা আশায় বুক বেঁধেছিলেন, ভূমি বিরোধের স্থায়ী সমাধান হবে। সে সময় নির্বাচনী ইশতেহারেও এ বিষয়ে অনেক প্রতিশ্রুতি ছিল। প্রধানমন্ত্রীর সদিচ্ছায় আইনটি সংশোধন হলেও এ আইনের বিধি এখনও প্রণয়ন করা হয়নি। সেইসঙ্গে কমিশন পরিচালনার জন্য যথাযথ লোকবল এবং প্রয়োজনীয় বাজেটসহ অন্যান্য ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয়নি', যোগ করেন তারা।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, 'পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ নামে একটি চুক্তিবিরোধী মহল এই বাস্তবায়নের পথে নানা বাধা সৃষ্টি করে চলেছে। এটাও লক্ষ্যনীয়, সরকারের ভেতরের একটি প্রতিক্রিয়াশীল মহল প্রচ্ছন্নভাবে, কখনো কখনো প্রকাশ্যে এই চুক্তি বিরোধীদের সহিংস ও ধ্বংসাত্মক তৎপরতায় ইন্ধন যুগিয়ে আসছে। তাদেরই মদদে এই কথিত নাগারিক পরিষদ সম্প্রতি পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের নির্ধারিত সভা বাতিলের জন্য ৩২ ঘণ্টা ধর্মঘট ঘোষণা করে এবং হরতালের নামে বিভিন্ন স্থানে নাশকতা চালায়। আর এই অছিলায় ৭ সেপ্টেম্বর পার্বত্য ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের পূর্ব নির্ধারিত সভা স্থগিত করা হয়েছে।'

'আমরা চুক্তি বিরোধী তথাকথিত নাগরিক পরিষদের নাশকতাপূর্ণ তৎপরতা এবং  ভূমি কমিশনের সভা স্থগিত রাখার সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাই। একইসঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রাম প্রশাসনের চুক্তি বিরোধীদের ব্যাপারে নমনীয় ও নিরব ভূমিকারও প্রতিবাদ জানাই', বিবৃতিতে বলা হয়।

এতে আরও বলা হয়, 'ভূমি বিরোধের জেরে একের পর এক পাহাড়ি গ্রামে সাম্প্রদায়িক হামলা, বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, পাহাড়ি নারীদের নির্যাতন, ধর্ষণসহ পাহাড়িদের হত্যা, অপহরণ, মিথ্যা মামলা, হয়রানি ক্রমেই এই জনপদকে নিরাপত্তাহীনতা ও শঙ্কার বিভীষিকার মধ্যে ঠেলে দিয়েছে। দেশের অন্যান্য যে কোনো অংশের চাইতে নিরাপত্তার ক্ষেত্রে পার্বত্য চট্টগ্রামে জনবল ও বরাদ্দ কয়েকগুণ বেশি হওয়া সত্ত্বেও এই অঞ্চলে নিরাপত্তাহীনতা ও শঙ্কার মাত্রা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।'

'এটি দিবালোকের মতো পরিষ্কার, পার্বত্য চট্টগ্রামের মূল সমস্যা ভূমি বিরোধের স্থায়ী সমাধান না করে এবং অপরাধীদের বিচার নিশ্চিত না করে দিনের পর দিন নিরাপত্তার চশমায় পার্বত্য চট্টগ্রামকে দেখলে বিরোধের মাত্রা বাড়তেই থাকবে। জাতিগত বৈরিতার গতিপ্রকৃতি জটিল থেকে জটিলতর হবে। সুতরাং জাতীয় স্বার্থে তথাকথিত হরতাল ডেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের নির্ধারিত সভা বানচালের ঘটনায় যুক্ত ও ইন্ধনদাতাদের চিহ্নিত করা জরুরি। তাদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ এবং সর্বোপরি পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনকে কার্যকর করে ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির মাধ্যমে অনতিবিলম্বে পার্বত্য ভূমি বিরোধের স্থায়ী সমাধানের জোর দাবি জানাচ্ছি', বিবৃতিতে যোগ করা হয়।

বিবৃতিতে সই করেছেন—বাপা সভাপতি ও মানবাধিকার কর্মী এড. সুলতানা কামাল, মানবাধিকার কর্মী ড. হামিদা হোসেন, নিজেরা করির সমন্বয়কারী ও এএলআরডির চেয়ারপার্সন খুশী কবির, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও এইচডিআরসির উপদেষ্টা ড. আবুল বারকাত, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম, বেলার প্রধান নির্বাহী রেজওয়ানা হাসান, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের চেয়ারপার্সন জেড আই খান পান্না, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সারা হোসেন, রিবের নির্বাহী পরিচালক ড. মেঘনা গুহঠাকুরতা, এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জোবাইদা নাসরীন কণা, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী এ্যাড. তবারক হোসেন, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী এ্যাড. সুব্রত চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনি বিভাগের অধ্যাপক সুমাইয়া খায়ের, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য কাজল দেবনাথ, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. রাণা দাশগুপ্ত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তাসনীম সিরাজ মাহবুব, বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের সাবেক সদস্য নিরূপা দেওয়ান, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং, মানবাধিকার কর্মী হানা শামস আহমেদ, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের প্রচার সম্পাদক দীপায়ন খীসা।

Comments

The Daily Star  | English

Of Hilsa and its hunters

On the corner of a crowded and noisy floor, a bespectacled man was calling out bids for a basket of Hilsa fish. He repeated the prices quoted by traders in a loud, rhythmic tone: “1,400-1,420-1,450…”

13h ago