চুল বেণি করায় শিক্ষার্থীদের ‘মারধর’, প্রতিবাদে মাথা ন্যাড়া করলেন শিক্ষক

চট্টগ্রাম
স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

বেণি করে চুল বাঁধার কারণে চট্টগ্রামের একটি বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের নিয়ে গঠিত কাবাডি দলের খেলোয়াড়দের মারধর করার অভিযোগ উঠেছে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে।

এর প্রতিবাদে বিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষা বিভাগের সহকারী শিক্ষক ও কাবাডি দলের কোচ জাহিদা পারভীন নিজের মাথা ন্যাড়া করে প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

বন্দরনগরীর কোতোয়ালি এলাকার ইয়াকুব আলী দোভাষ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে গত ৭ সেপ্টেম্বর এই ঘটনা ঘটে।

শিক্ষার্থীদের মারধর করার প্রতিবাদ জানিয়ে সহকারী শিক্ষক জাহিদা পারভীন নিজের ফেসবুক পেজে একটি পোস্টও করেছেন। পোস্টটি এরমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে জানা যায়, ৪৯তম জাতীয় গ্রীষ্মকালীন ক্রীড়া প্রতিযোগিতার জন্য ১২ জন ছাত্রী নিয়ে গঠিত কাবাডি দলকে মাসখানেকেরও বেশি সময় ধরে প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছিলেন জাহিদা পারভীন।

জাহিদা পারভীন দাবি করেন, ঘটনার দিন খেলোয়াড়দের নিয়ে একটি গ্রুপ ছবি তোলার প্রস্তুতি চলছিল। নিয়ম অনুযায়ী কাবাডি খেলার সময় চুল খোলা রাখা যায় না। এজন্য তিনি মেয়েদের চুল বেণি করতে বলেন। কিন্তু প্রধান শিক্ষক নিপা চৌধুরী চুল বেণি করা দেখে ক্ষুব্ধ হয়ে শিক্ষার্থীদের চুল ধরে টানাটানি করার পাশাপাশি কয়েকজনকে মারধরও করেন।

এই অভিযোগ অস্বীকার করে নিপা চৌধুরী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি ওইদিন শিক্ষার্থীদের মারধর বা বকাবকি কোনোটাই করিনি; বরং তাদের সঙ্গে আমিও ছবি তুলেছিলাম।'

এই ঘটনার পর খেলোয়াড়দের নিয়ে গত ৮ সেপ্টেম্বর প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে গিয়েছিলেন ওই জাহিদা পারভীন। তবে স্কুলে মডেল টেস্ট থাকায় তাদের পৌঁছাতে বিলম্ব হওয়ায় খেলায় অংশ নিতে পারেনি বিদ্যালয়ের কাবাডি দল।

এ বিষয়ে জাহিদা পারভীন বলেন, 'খেলার দিন প্রধান শিক্ষিকা শিক্ষার্থীদের মডেল টেস্টে অংশ নিতে বাধ্য করেন। এজন্য ভেন্যুতে যেতে দেরি হয়েছে। তাই প্রতিযোগিতার কো-অর্ডিনেটর শিক্ষার্থীদের মাঠে নামতে দেননি।'

তবে প্রধান শিক্ষক নিপা চৌধুরীর ভাষ্য, 'এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা। বরং আমি বলেছি যে, মডেল টেস্ট না দিলে কিছু হবে না।'

ভ্যেনুতে পৌঁছাতে দেরি হওয়ায় খেলতে না দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানার শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জিয়াউল হুদা ছিদ্দিকী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দেরি যে হতে পারে সে বিষয়টি আমাদের জানায়নি ওই বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তাই নিয়ম অনুযায়ী টুর্নামেন্টে চালিয়ে যেতে হয়েছে।'

সহকারী শিক্ষক জাহিদা পারভীন দাবি করেন, সবমিলিয়ে এসব ঘটনার জেরে রাগে-ক্ষোভে গত ১৩ সেপ্টেম্বর নিজের মাথা ন্যাড়া করে ফেলেন তিনি। এরপর২২ সেপ্টেম্বর বিকেলে ওই ঘটনার বর্ণনা তুলে ধরে ফেসবুকে দেওয়া একটি পোস্টে তার ন্যাড়া মাথার একটি ছবিও সংযুক্ত করেন।

ওই পোস্টে জাহিদা পারভীন লেখেন, 'স্কুলের মেয়েদের মাসখানেক কষ্ট করে খেলা শিখিয়ে মাঠে নিতে যাওয়ার আগের দিন তাদের ফ্রেন্স বেনী করে ছবি তোলা হয়। খেলতে যাওয়ার অপরাধে আমার স্কুলে হেড মাস্টার মেয়েদের চুল ধরে মারে। ও বকা দেয়। এর প্রতিবাদে নিজের মাথার চুল ফেলে দিয়েছি। খুব কি খারাপ দেখা যাচ্ছে???'

সার্বিক বিষয়ে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ফরিদুল আলম বলেন, 'কেউ নিয়ম ভঙ্গ করলে সেটি তদন্ত করা হবে। তদন্তে কেউ দোষী সাব্যস্ত হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

Comments

The Daily Star  | English

Expatriates' remittance helps Bangladesh make turnaround: Yunus

It is the expatriates who help sustain the country, says the chief adviser

4h ago