‘সরকার চালের দাম কমাক, মিনিকেট বিক্রি বন্ধে কাজ হবে না’

বাজারে মিনিকেট নামে কোনো চাল বিক্রি করা যাবে না বলে সরকারের পক্ষ থেকে যে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে তা বাস্তবায়ন কঠিন বলে জানিয়েছেন চাল ব্যবসায়ীরা।
মিনিকেট চাল

বাজারে মিনিকেট নামে কোনো চাল বিক্রি করা যাবে না বলে সরকারের পক্ষ থেকে যে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে তা বাস্তবায়ন কঠিন বলে জানিয়েছেন চাল ব্যবসায়ীরা।

তারা বলছেন, ঘোষণা দেওয়া হলেও মিনিকেট চাল ঠিকই বিক্রি হবে। হয়তো তখন নামটি পরিবর্তন হবে। এই নাম পরিবর্তন করা বা বিক্রি বন্ধ করাটা কোনো বাহাদুরির কাজ নয়। বরং, চালের দাম কমাতে পারলে সেটা হবে বাহাদুরির কাজ।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম গতকাল বুধবার গাজীপুরের বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের বলেছেন, বাজারে মিনিকেট নামে কোনো চাল বিক্রি করা যাবে না। মিলে বস্তায় চাল ভরার সময় তাতে জাতের নাম লিখতে হবে। এর ব্যত্যয় হলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এর আগে গত ৬ সেপ্টেম্বর জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের (ডিএনসিআরপি) মহাপরিচালক এ এইচ এম শফিকুজ্জামান বলেছেন, মিনিকেট প্রকৃতপক্ষে চালের কোনো জাত নয়। বাজারে মিনিকেট চাল বিক্রি বন্ধ করতে আমরা অভিযান শুরু করবো।

আজ রাজধানীর কারওয়ান বাজারে সরেজমিনে দেখা যায়, মিনিকেট চাল প্রতি কেজি ৭২ থেকে ৭৪ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

কারওয়ান বাজারের 'জনপ্রিয় রাইছ এজেন্সি'র স্বত্বাধিকারী ও কিচেন মার্কেট সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. লোকমান হোসেন বলেন, 'সরকারের কোনো নির্দেশনা এখনো আমাদের কাছে আসেনি। তবে গণমাধ্যম থেকে জেনেছি, মিনিকেট চাল নাকি বিক্রি করা যাবে না।'

তিনি বলেন, 'চাল আমরা তৈরি করি না। কোনো নির্দেশনা দিতে হলে মিল মালিকদের দিতে হবে। আমরা তাদের কাছ থেকেই চাল কিনি। বর্তমানে বাজারে যে পরিমাণ মিনিকেট চাল মজুদ আছে, তা দিয়ে আগামী বৈশাখ মাস পর্যন্ত খাওয়া যাবে। সরকার যদি মিনিকেট চাল বিক্রি বন্ধ করে দেয় তাহলে এই চালগুলোর কী হবে? এই চালের ব্যবস্থা না করে যদি অভিযান পরিচালনা করে, তাহলে বাজারে চালের কৃত্রিম সংকট তৈরি হবে। এতে ক্রেতা-বিক্রেতা সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।'

মিনিকেট চাল বিক্রি বন্ধের বিষয়টি অযৌক্তিক দাবি করে এই চাল ব্যবসায়ী বলেন, 'মোটা চাল কেটে চিকন চাল করা হয়, এটি সত্য নয়। তবে চাল পলিশ করা হয়। তাছাড়া, এসব মেশিন আমদানির বিষয়ে সরকার অবগত। তখন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না কেন? এ ছাড়া, ভারত থেকে মিনিকেট চাল আমদানি করা হয়। সেগুলোর কী হবে? সবার সঙ্গে আলোচনা করে তারপর সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এভাবে হুটহাট সিদ্ধান্ত নিলে তা নেওয়া অযৌক্তিক ও অকার্যকর হবে।'

ঢাকা রাইস এজেন্সির স্বত্বাধিকারী মো. সায়েম বলেন, 'আমরা চাই সরকার চালের দাম কমাক। দাম না কমিয়ে মিনিকেট বিক্রি বন্ধ করে কাজ হবে না। মিনিকেট তখন অন্য কোনো নামে বিক্রি হবে।'

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিক্রেতা বলেন, 'যারা মিনিকেট চালের ক্রেতা, তারা বাজারে মিনিকেটের খোঁজ করবেন। তখন বিক্রেতারা এখন মিনিকেট নামে যে চাল বিক্রি করছেন সেটাই দেবেন। এই নাম পরিবর্তন করাটা বা মিনিকেট নামে চাল বিক্রি বন্ধ করা কোনো বাহাদুরির কাজ না। বরং, চালের দাম কমাতে পারাটাই বাহাদুরির কাজ।'

জাতীয় ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মিনিকেট নামে কোনো চাল বিক্রি করা যাবে না, এ বিষয়ে আমরা মিলমালিক, ক্রেতা-বিক্রেতা সবার সঙ্গে আলোচনা করেছি। আমাদের কাছে নির্দেশনা আসলেই অভিযান শুরু করবো। মিল থেকে শুরু করে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, সব জায়গায় অভিযান পরিচালনা করবো।'

যেসব মিল থেকে মিনিকেট চাল সরবরাহ করা হয় সেখানে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানতে চাইলে মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, 'আমরা মিলমালিকদের আগেই সতর্ক করেছি। তারা বলেছেন, কোনো চাল কেটে চিকন করা হয় না। তারা নাকি শুধু চাল পলিশ করেন। তবে তারা যাতে মিনিকেট চাল বাজারে সরবরাহ না করে, এর জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

ভারত থেকে মিনিকেট চাল আমদানি ও আগামী বৈশাখ পর্যন্ত সরবরাহ করার মতো মিনিকেটের মজুদ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'চালের সরবরাহে যাতে কোনো ঘাটতি না হয়, সেই অনুযায়ী আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

Comments

The Daily Star  | English

DHL, The Daily Star honour 3 individuals, 2 organisations for outstanding achievement in business

The 22nd edition of the annual flagship event of the leading global logistics service provider and the most circulated English daily of Bangladesh is now taking place at the Radisson Blu Dhaka Water Garden in the capital.

2h ago