বাংলাদেশ

ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের ভূমি রেজিস্ট্রেশনের দাবি

দেশের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী জনগণের ভূমি রেজিস্ট্রেশন করে মালিকানা নিশ্চিত করা ও সংখ্যালঘু কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছে বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও নাগরিক সমাজ। 
সোমবার দ্য ডেইলি স্টার ভবনে আয়োজিত ‘আদিবাসীদের ভূমি সমস্যা ও করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভা। ছবি: স্টার

দেশের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী জনগণের ভূমি রেজিস্ট্রেশন করে মালিকানা নিশ্চিত করা ও সংখ্যালঘু কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছে বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও নাগরিক সমাজ। 

সোমবার দুপুরে রাজধানীর ডেইলি স্টার ভবনে 'বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম' আয়োজিত 'আদিবাসীদের ভূমি সমস্যা ও করণীয়' শীর্ষক আলোচনা সভায় এ দাবি জানানো হয়।

এ সময় বক্তারা বলেন, কাপ্তাই বাধ নির্মাণ, ন্যাশনাল পার্ক নির্মাণ, ইকোপার্ক, সংরক্ষিত বনাঞ্চল, চা বাগান, সামাজিক বনায়নসহ বিভিন্ন প্রকল্পের কারণে ভূমি হারিয়েছে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীরা। 'পপুলেশন ট্রান্সফারের' ফলে সংখ্যালঘুতে পরিণত হয়েছেন তারা।

পার্বত্য চট্টগ্রাম, গারো পাহাড়, উত্তরবঙ্গ, গাজীপুর, মধুপুর বনাঞ্চল, পটুয়াখালী, বরগুনায় অনেকে ভূমি হারিয়েছে বলে বক্তারা জানান।

আলোচনা সভায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও সংখ্যালঘু বিষয়ক সংসদীয় কমিটির কো-অর্ডিনেটর অধ্যাপক ড. মেসবাহ কামাল বলেন, 'বান্দরবান জেলায় কৃষিভিত্তিক শিল্পের নামে বিশেষ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সাবেক সরকারি কর্মকর্তা, শিক্ষক, সাংবাদিক, চিত্রনায়কদের জমি বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। এজন্য সেখানকার স্থানীয় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী জনগণ তাদের জমি থেকে উচ্ছেদ হয়েছে। এতে তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি নিয়ে টিকে থাকা কঠিন হয়ে গেছে।'

এ অবস্থায় ভূমি সংক্রান্ত মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য একটি স্বতন্ত্র ল্যান্ড সেটেলমেন্ট ট্রাইব্যুনাল গঠন কিংবা স্পেশাল কোর্ট অ্যাসাইন করা জরুরি বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সভায় বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির (বেলা) নির্বাহী পরিচালক রিজওয়ান হাসান বলেন, 'মানবাধিকার কমিশনে একটি নতুন উইং গঠন করা দরকার। যেখানে আদিবাসীদের ভূমি সমস্যা নিষ্পত্তি করা হবে।'

বছরের পর বছর কোনো রাজনৈতিক দলের ভোট ব্যাংক না হয়ে অধিকার আদায়ে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন, 'আদিবাসীদের ভূমি সমস্যা সমাধান করতে আওয়ামী লীগ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ২০০৮ ও ২০১৪ সালের নির্বাচনী ইশতিহারে। কিন্তু ২০১৮ সালের নির্বাচনী ইশতিহারে এ প্রতিশ্রুতি সরিয়ে দেওয়া হয়। তাদের এ প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করা উচিত।'

এ সময় সিনিয়র সাংবাদিক সোহরাব হোসেন বলেন, 'রাষ্ট্রের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করে আদিবাসী জনগণকে নির্যাতন করছে। তাদের ভূমি কেড়ে নিয়ে উচ্ছেদ করা হচ্ছে। এমনকি এসব কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের সরকার প্রশ্রয় দিচ্ছে। এ সবের জন্য আদিবাসীদের পাশে নাগরিক সমাজের পাশাপাশি দেশের জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে।'

বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং বলেন, 'আদিবাসীদের ভূমি থেকে উচ্ছেদের সম্মুখীন হতে হয়, এমন প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নের আগে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে জানাতে হবে। আদিবাসীদের ভূমি চিহ্নিত করার জন্য ডিজিটাল সার্ভের উদ্যোগ নিতে হবে। মধুপুর বন, খাসিয়া, গারোসহ যেসব বন ভূমিতে আদিবাসীরা বসবাস করছে তদের ভূমি দলিল করতে হবে।'

'আদিবাসীদের স্বাধীন সম্মতি ছাড়া সরকার কোনোভাবেই তাদের উচ্ছেদের উদ্যোগ নিতে পারবে না,' বলেন তিনি।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন কাপেং ফাউন্ডেশন নির্বাহী পরিচালক পল্লব চাকমা। লিখিত দাবিগুলো উপস্থাপন করেন 'বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের' ইয়ুথ ভলান্টিয়ার হেলেনা তালাং।

Comments