রেলওয়ে স্টেশনে প্রতিবন্ধী যাত্রীদের র্যাম্প দখল করে মোটরসাইকেল পার্কিং
লালমনিরহাট রেলওয়ে স্টেশনে প্রতিবন্ধীব্যক্তিদের জন্য তৈরি র্যাম্পটি (ঢালুপথ) মোটরসাইকেল পার্কিংয়ের কাজে ব্যবহৃত হওয়ায় প্রতিবন্ধী যাত্রীদের সিঁড়ি বেয়ে স্টেশন প্লাফর্মে ওঠানাম করতে হচ্ছে।
এ ছাড়া শারীরিক প্রতিবন্ধী ট্রেন যাত্রীদের জন্য ৩টি হুইল চেয়ার বরাদ্দ দেওয়া হলেও সেগুলোর খোঁজ মিলছে না। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জানার পরও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
পাটগ্রাম উপজেলার সরকারেরহাট এলাকার দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মিলন ইসলাম (২৮) দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত ৮ বছর ধরে আমি লালমনিরহাট-পাটগ্রাম ট্রেনে যাতায়াত করি কিন্তু কোনোদিন স্টেশন প্লাটফর্মে র্যাম্প ব্যবহারের সুযোগ পাইনি। শুধু শুনেছি লালমনিরহাট স্টেশনে র্যাম্প রয়েছে।'
তিনি বলেন, 'যেহেতু রেলওয়ে স্টেশনের র্যাম্পটিতে মোটরসাইকেল পার্কিং করা হয়, সেজন্য আমাকে কষ্ট করে সিঁড়ি বেয়ে স্টেশন প্লাটফর্মে ওঠানামা করতে হয়। এ সময় অন্য যাত্রীদের সহযোগিতা নিতে হয়।'
লালমনিরহাট সদর উপজেলার তিস্তা এলাকার দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী আতিয়ার রহমান (৫৫) দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, তিনি প্রায়ই ট্রেনে করে লালমনিরহাট আসেন কিন্তু প্রতিবন্ধীদের জন্য নির্মিত র্যাম্পটি ব্যবহারের সুযোগ পাননি।
তিনি বলেন, 'শুনেছি প্রতিবন্ধী ট্রেনযাত্রীদের জন্য নির্মিত র্যাম্পে মোটরসাইকেল রাখা হয়। সিঁড়ি বেয়ে স্টেশন প্লাটপর্মে ওঠানামা করতে খুব কষ্ট হয়।'
কালীগঞ্জ উপজেলার কাশিরাম গ্রামের শারিরীক প্রতিবন্ধী মনসের আলী (৫০) দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রতিবন্ধী যাত্রীদের জন্য তৈরি র্যাম্পে শুধু মোটরসাইকেল রাখা হয়। এজন্য তাকে কষ্ট করে সিঁড়ি বেয়ে স্টেশন প্লাটফর্মে ওঠানামা করতে হয়। আমি হুইল চেয়ারের কথা শুনেছি কিন্তু তা কোনোদিন দেখিনি।'
লালমনিরহাট স্টেশনের ট্রেনযাত্রী মিরাজুল ইসলাম (৪৫) দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, তিনি প্রতিদিনই ট্রেনে লালমনিরহাট স্টেশনে আসেন কিন্তু প্রতিবন্ধী যাত্রীদের জন্য তৈরি র্যাম্পটি তাদের কোনোদিনই ব্যবহার করতে দেখিনি। র্যাস্পটিতে সবসময় মোটরসাইকেল পার্কিং করতে দেখা যায়।
৭ বছর আগে লালমনিরহাট রেলওয়ে স্টেশনে নতুন স্টেশন বিল্ডিং নির্মাণ করা হয়। সে সময় স্টেশন প্লাটফর্মের প্রধান প্রবেশ পথের দক্ষিণপ্রান্তে প্রতিবন্ধী যাত্রীদের জন্য র্যাম্পটি নির্মিত হয়। শারিরীক প্রতিবন্ধী যাত্রীদের জন্য বরাদ্দ দেওয়া ৩টি হুইল চেয়ার।
লালমনিরহাট রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার নুরুন্নবী ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'তিনি স্টেশন মাস্টার হিসেবে নতুন। তাই হুইল চেয়ার সম্পর্কে জানেন না। প্রতিবন্ধী যাত্রীদের ব্যবহারের জন্য নির্মিত র্যাম্পটিতে মোটরসাইকেল পার্কিং করার বিষয়টি স্বীকার করেন তিনি বলেন, 'কিছু রেলওয়ে স্টাফ ও আগন্তুক র্যাম্পে মোটরসাইকেল পার্কিং করেন। এ ব্যাপারে সতর্ক করার পরও তারা কথা শুনছেন না।'
লালমনিরহাট বিভাগীয় রেলওয়ে ম্যানেজর (ডিআরএম) আব্দুস সালাম দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, প্রতিবন্ধী যাত্রীদের র্যাম্পে মোটরসাইকেল পার্কিং করার বিষয়টি তিনি নিজের চোখে দেখেছেন। তবে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়নি।
তিনি বলেন, 'আমি এ ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা নেব। প্রতিবন্ধী যাত্রীরা যাতে র্যাম্পটি ব্যবহার করতে পারেন, সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বরাদ্দ দেওয়া হুইল চেয়ারগুলো ব্যবহার উপযোগী করা হবে।'
Comments