খাদ্য নিরাপত্তায় আগামী বছর বাংলাদেশ বিশ্বে মডেল হবে: আতিউর রহমান

আগামী বছর খাদ্য নিরাপত্তার দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বে মডেল হিসেবে উপস্থাপিত হবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান।
খাদ্য নিরাপত্তায় আগামী বছর বাংলাদেশ বিশ্বে মডেল হবে: আতিউর রহমান
ঠাকুরগাঁওয়ের ইএসডিও কার্যালয়ে ‘মানব উন্নয়ন ভাবনা’ শীর্ষক এক আলোচনায় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান। ছবি: স্টার

আগামী বছর খাদ্য নিরাপত্তার দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বে মডেল হিসেবে উপস্থাপিত হবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান।

আজ সোমবার বিকেলে ঠাকুরগাঁওয়ের ইএসডিও কার্যালয়ে 'মানব উন্নয়ন ভাবনা' শীর্ষক এক আলোচনায় এ কথা বলেন তিনি।

তিনি জানান, চলতি মৌসুমে আমনের আবাদ ভালো হয়েছে। শীত মৌসুমে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি ভালো থাকে। আগামী ডিসেম্বর মাসে ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ হওয়ার কথা রয়েছে। ফলে বোরো মৌসুমে রাতের বেলায় নিরবিচ্ছিন্নভাবে সেচ কাজে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা গেলে এবং স্বার্থান্বেষী দুষ্ট চক্রের কারসাজী মোকাবেলা করে কৃষকের কাছে সার পৌঁছাতে পারলে বোরোতেও বাম্পার ফলন পাওয়া যাবে। ফলে দেশে খাদ্য সংকট হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।   

স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশের ভঙ্গুর অবস্থা থেকে উন্নয়নের অর্থনীতির ইতিহাস স্মরণ করে তিনি বলেন, 'বঙ্গবন্ধু কৃষিকে গুরুত্ব দিয়ে প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার মোট বরাদ্দের ২৪ শতাংশ কৃষিতে, ২১ শতাংশ শিল্পে এবং ১৬ শতাংশ শিক্ষায় বরাদ্দ দিয়েছিলেন।'

'কারণ কৃষিতে ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি বাড়লে ৪ শতাংশ কর্মসংস্থান বাড়ে। এই কৃষি খাতের সঙ্গে অকৃষি খাত যেমন পরিবহন, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, শ্রমিক জড়িত,' বলেন তিনি।    

এছাড়া বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতির ভিত্তি অত্যন্ত শক্তিশালী উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'আজকাল বিভিন্ন গুজব ছড়ানো হচ্ছে, বলা হচ্ছে বাংলাদেশ নাকি শ্রীলংকা হয়ে যাবে। কিন্তু কখনোই বলা হচ্ছে না যে, শ্রীলংকার বর্তমান মুদ্রস্ফীতি ৬৬ শতাংশ, যেখানে বাংলাদেশের মুদ্রস্ফীতি ৮ শতাংশ। দেশের বর্তমান যে রিজার্ভ রয়েছে তা দিয়ে আমদানি ব্যয়সহ অনায়াসে ৫ মাসের প্রয়োজনীয় ব্যয় নির্বাহ করা যাবে। এসময়ে প্রাপ্ত রেমিটেন্স, আমদানি ব্যয়ে সঙ্কোচনসহ নানবিধ পদক্ষেপে দেশের যে চলমান সংকট তা থেকে উত্তরণে খুব একটা বেগ পেতে হবে না। ডলার সংকটেরও অবসান হবে অল্প সময়েই, যা ইতোমধ্যেই কাটতে শুরু করেছে।'

সামাজিক ও মানবিক উন্নয়নের জন্য নিম্নস্তরে অর্থনীতির চাকা সচল করার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, 'বাজারে নিম্ন আয়ের মানুষের প্রবেশ যত সহজ হবে অর্থনীতির চাকা ততোটাই সচল হবে। নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে অর্থনৈতিক প্রবাহ বাড়াতে এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে তাদের বেশি বেশি করে সম্পৃক্ত করতে তাদের জন্য সহজ শর্তে ঋণ নিশ্চিত করতে হবে,' বলেন তিনি।   

বিশ্ব পরিস্থিতির কারণে সামনের দিনগুলো হবে অত্যন্ত চ্যালেঞ্জের উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'সরকারের সঙ্গে সম্পৃক্ত যারা অতিমাত্রায় আত্মতৃপ্তিতে ভুগছেন, এখনই সতর্ক না হলে আগামীর চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করা দূরহ হবে, ব্যহত হবে অর্থনৈতিক মুক্তির আন্দোলন।'

বাংলাদেশ রিসার্চ ডেভেলপমেন্ট ইন্সটিটিউট ফর ডেভেলপমেন্ট (বিআরআইডি) ও ইকো সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ইএসডিও) যৌথভাবে আয়োজিত সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন ইএসডিও'র নির্বাহী পরিচালক ড. মুহম্মদ শহীদ উজ জামান।

সেমিনারে শিক্ষক, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ অংশ নেন।

Comments