‘পুলিশ-ছাত্রলীগের অধিকার নেই মানুষের ফোন চেক করার’

‘পুলিশ-ছাত্রলীগের অধিকার নেই মানুষের ফোন চেক করার’

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) সমাবেশকে কেন্দ্র করে রাজধানীর প্রবেশপথগুলোতে চেকপোস্ট বসিয়ে গাড়িতে তল্লাশির পাশাপাশি সাধারণ মানুষের ফোন চেক করা অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশমুখ নীলক্ষেতের মুক্তি ও গণতন্ত্র তোরণের সামনে ফোন চেক করে ১০ থেকে ১২ জনকে মারধর করে পুলিশে দিয়েছে ছাত্রলীগ।

১৯৪৮ সালে ঘোষিত জাতিসংঘ মানবাধিকার ঘোষণার ১২ নম্বর আর্টিকেলে বলা হয়েছে, 'কারো ব্যক্তিগত গোপনীয়তা কিংবা তার গৃহ, পরিবার ও চিঠিপত্রের ব্যাপারে খেয়াল-খুশিমতো হস্তক্ষেপ কিংবা তার সুনাম ও সম্মানের ওপর আঘাত করা চলবে না। এ ধরনের হস্তক্ষেপ বা আঘাতের বিরুদ্ধে আ‌ইনের আশ্রয় লাভের অধিকার প্রত্যেকের‌ই রয়েছে।'

বাংলাদেশের সংবিধানের ৪৩ অনুচ্ছেদেও বলা হয়েছে, 'রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, জনশৃঙ্খলা, জনসাধারণের নৈতিকতা বা জনস্বাস্থ্যের স্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ-সাপেক্ষে প্রত্যেক নাগরিকের চিঠিপত্রের ও যোগাযোগের অন্যান্য উপায়ের গোপনতা রক্ষার অধিকার থাকিবে।'

পুলিশ বা ছাত্রলীগ কি সাধারণ মানুষের ফোন চেক করতে পারে? এ বিষয়ে দ্য ডেইলি স্টার কথা বলেছে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জেড আই খান পান্না, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের বিদায়ী কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনের সঙ্গে।

জেড আই খান পান্না বলেন, 'আমার নিজের একটা প্রশ্ন আছে। সেটি হলো, পুলিশ ও ছাত্রলীগকে সাধারণ মানুষের ফোন চেক করার অধিকার দিলো কে? ফোন মানুষের সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত বিষয়। এখানে কারো হস্তক্ষেপ করার অধিকার নেই। আমার জানা মতে দেশে এমন কোনো আইন নেই, যার দ্বারা পুলিশ সাধারণ মানুষের ফোন চেক করতে পারবে।'

ছাত্রলীগের ফোন চেক করার বিষয়ে তিনি বলেন, 'আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলেই ছাত্রলীগ এখন সাধারণ মানুষের ফোন চেক করতে পারছে। তাদের কোনো অধিকার নেই এভাবে ফোন চেক করার। এটা তাদের মাস্তানি।'

পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) শহীদুল হক বলেন, 'পুলিশ ও ছাত্রলীগ কেউই সাধারণ মানুষের ফোন চেক করতে পারে না। পুলিশ সেই ব্যক্তির ফোন চেক করতে পারে, যে কোনো মামলার আসামি। কেউ যদি গ্রেপ্তার হন, তখন তার কাছে কোনো সাক্ষী বা প্রমাণ পাওয়ার জন্য ফোন চেক করা যেতে পারে। কিন্তু সাধারণ মানুষ, যারা আসামি না, যাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই, কোনো তদন্ত হচ্ছে না, তাদের ফোন চেক করতে পারবে না পুলিশ। এমন কিছু হয়ে থাকলে সেটি বেআইনি কাজ।'

ছাত্রলীগের ফোন চেক করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'পুলিশ বা গোয়েন্দা সংস্থার কোনো সদস্য ছাড়া অন্য কারো এমন অধিকার নেই।'

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক বলেন, 'ছাত্রলীগের সদস্যরা কারো ফোন চেক করেছে কি না, তা আমার জানা নেই। তারা কেন এই কাজ করবে? তাদের তো সাধারণ মানুষের ফোন চেক করার কথা না।'

ছাত্রলীগ সাধারণ মানুষের ফোন চেক করতে পারে কি না এবং কেন গতকাল ফোন চেক করেছে, তা জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের বিদায়ী কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বলেন, 'গতকাল শুধুমাত্র রাজনৈতিক অবস্থান, মিছিল-মিটিং ও রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ড। এর বাইরে ছাত্রলীগ আর কোনোকিছুর সঙ্গে সম্পৃক্ততা ছিল না। ফোন চেক করার মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি।'

কয়েকটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে ও ভিডিওতে দেখা গেছে ছাত্রলীগের সদস্যরা সাধারণ মানুষের ফোন চেক করেছেন এবং তাদের মারধর করেছেন। বিষয়টি উল্লেখ করে সাদ্দামের কাছে জানতে চাওয়া হয়, ছাত্রলীগে কোনো ধরনের সমন্বয়হীনতা আছে কি না। এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ড ছিল রাজনৈতিক অবস্থান। আমাদের কর্মকাণ্ড বিষয়ে আমি অবগত আছি। এর বাইরে কী হয়েছে আমি জানি না।'

Comments

The Daily Star  | English

Scorched at work: Global report revealed dire heat risks for workers

A joint report released by the World Health Organisation (WHO) and the World Meteorological Organisation (WMO) exposed the growing dangers of extreme heat on workers’ health and productivity worldwide.

34m ago