৫ বছরেও শেষ হয়নি মিত্র বাহিনীর শহীদ স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণকাজ

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতীয় মিত্র বাহিনীর শহীদ সদস্যদের অবদান স্মরণ রাখতে সরকার ২০১৭ সালে একটি শহীদ মিনার নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়। 

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতীয় মিত্র বাহিনীর শহীদ সদস্যদের অবদান স্মরণ রাখতে সরকার ২০১৭ সালে একটি শহীদ মিনার নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়। 
  
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে ১৬ কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে স্মৃতিসৌধটি নির্মাণ প্রকল্প নেওয়া হয়। ২০১৯ সালের জুন মাসের মধ্যে প্রকল্পটির কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল।

তবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ না হওয়ায় ২০২৩ সালের জুন মাস পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়। এতে প্রকল্প ব্যয় প্রায় দ্বিগুণেরও বেশি বেড়ে ৪৬ কোটি ৮০ লাখ টাকায় পৌঁছায়। ব্যয় বৃদ্ধির কারণ হিসেবে নির্মাণ সামগ্রির দাম বাড়ার কথা বলা হয়েছে। 

চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসের প্রথমার্ধ পর্যন্ত ২৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে উল্লেখ করে প্রকল্পের কর্মকর্তারা দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, কাজটি শেষ করার জন্য তাদের বর্তমান সময়সীমা ২০২৩ সালের জুন থেকে আরও এক বছরের জন্য বাড়ানোর প্রস্তাব করা হবে। 

জমি অধিগ্রহণকে মেয়াদ বাড়ার কারণ হিসেবে উল্লেখ করে প্রকল্প পরিচালক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, 'আমরা মার্চ মাসে টেন্ডার দিয়েছিলাম এবং মে মাসে নির্মাণ শুরু করি।'

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপসচিব জাহাঙ্গীর দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা ২০২৪ সালের জুন মাসে স্মৃতিসৌধের নির্মাণ কাজ শেষ করতে পারব। এ জন্য আমরা প্রকল্পের মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ানোর চেষ্টা করব।'

প্রকল্প পরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, 'প্রাথমিকভাবে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক আশুগঞ্জ উপজেলার চৌরাস্তার মোড়ে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের জন্য স্থান নির্বাচিত করা হয়। পরবর্তীতে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কটি ৪ লেনে রূপান্তরের বিষয়টি ২০১৮ সালের জুলাই মাসে অনুমোদিত হয়। প্রাথমিকভাবে প্রকল্পের নির্বাচিত স্থানটিতে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। বিকল্প স্থান নির্বাচন ও জমি অধিগ্রহণে অনেকটা সময় ক্ষেপণ হয়। অবশেষ ২০২১ সালের ১২ আগস্ট জমি হস্তান্তর হয়। স্থান নির্বাচন ও জমি অধিগ্রহণের দীর্ঘ সময় ব্যয় হওয়ায় নির্মাণ কাজের দরপত্র চূড়ান্ত করতে বিলম্ব হয়েছে বলে মনে হয়েছে।'
 
মুক্তিযুদ্ধ গবেষক ও স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) কাজী সাজ্জাদ আলী জহির বীরপ্রতীক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ভারতীয় সৈনিকদের স্মরণে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ একটি 'ঐতিহাসিক প্রয়োজন।'

তিনি আরও বলেন, 'বাংলাদেশি মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি অগাধ শ্রদ্ধা দেখিয়েছে ভারতীয় জনগণ, আমাদেরও উচিৎ জীবন উৎসর্গ করা ভারতীয়দের সম্মান দেখানো।'

২০২১ সালের মার্চ মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের সময় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং নরেন্দ্র মোদি যৌথভাবে স্মৃতিসৌধের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

প্রকল্পের কর্মকর্তারা দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, মুক্তিযুদ্ধে সর্বোচ্চ আত্মত্যাগকারী ভারতীয় সৈন্যদের প্রতি সম্মান জানাতে এই প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। ১৯৭১ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ১ হাজার ৬৬১ জন ভারতীয় অফিসার ও সৈন্য শহীদ হন।

যে মুক্তিযোদ্ধারা ধীর্ঘ ৯ মাস বীরত্বের সঙ্গে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন; ভারতীয়রা সেই মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দেওয়ার পাশাপাশি প্রশিক্ষণ, অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহ করেছিল।

মুক্তিবাহিনী এবং ভারতীয় সেনাবাহিনীর যৌথ কমান্ড ৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যা থেকে অভিযান শুরু করে। পরিকল্পিত আক্রমণের ফলে দখলদার পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ১৬ ডিসেম্বর আত্মসমর্পণ করে এবং বাংলাদেশ রাষ্ট্র হিসেবে জন্ম নেয়। 

আত্মসমর্পণের আগে পাকিস্তানি বাহিনী গণহত্যা চালিয়ে ৩০ লাখ মানুষকে হত্যা করে, ৩ লাখের বেশি নারীকে ধর্ষণ করে এবং হাজার হাজার বুদ্ধিজীবীকে অপহরণ ও হত্যা করে।

পরিকল্পনা কমিশনের ইমপ্লিমেন্টেশন মনিটরিং অ্যান্ড ইভালুয়েশন ডিভিশনের (আইএমইডি) সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারত সরকারের, বিশেষ করে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর অবদান অবিস্মরণীয়।

অন্তত ১ কোটি অসহায় নারী-পুরুষ ও শিশু বাংলাদেশ থেকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরা সহ বিভিন্ন রাজ্যে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নেয়। ভারত সরকার এবং দেশটির জনগণ এই উদ্বাস্তুদের খাদ্য, বস্ত্র ও চিকিৎসা সেবা প্রদান করে।

আশুগঞ্জে নির্মাণাধীন এই প্রকল্পের অধিনে শিশুদের রাইড, শপিং মল, প্রার্থনা কক্ষসহ একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

 

Comments