পরিবহন সেবার ফি বাড়াতে যাচ্ছে সরকার
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) বেশিরভাগ সেবার খরচ বাড়াতে যাচ্ছে সরকার। যার ফলে ব্যক্তিগত ও বাণিজ্যিক পরিবহন মালিকদের ওপর বাড়তি আর্থিক চাপ পড়বে।
যানবাহনের নিবন্ধন ও ফিটনেস সনদ, রুট পারমিট ও ড্রাইভিং লাইসেন্সের মতো ৭৫টি সেবার খরচ সর্বোচ্চ ২৩৩ শতাংশ পর্যন্ত বাড়বে।
বিআরটিএর সূত্রদের মতে, ২ সপ্তাহের মধ্যে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হতে পারে এবং সেক্ষেত্রে মানুষকে বাড়তি খরচের বোঝা বইতে হবে।
বিআরটিএ মোটর ওয়ার্কশপের নিবন্ধন ও কন্ডাক্টরদের লাইসেন্সসহ মোট ৯টি সেবার ওপর নতুন করে ফি বসাবে।
৩ সেবার খরচ অপরিবর্তিত থাকবে, যার মধ্যে আছে ২ ধরনের মোটরসাইকেলের নিবন্ধন। সড়ক দুর্ঘটনা ও মৃত্যুর ঘটনার পেছনে ২ চাকার যান বড় আকারে দায়ী হওয়া সত্ত্বে এই বিধির মাধ্যমে সরকারের এ ধরনের পরিবহন ব্যবস্থার প্রতি ইতিবাচক মনোভাবের প্রকাশ ঘটেছে।
২০১৮ সালে সরকার সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ প্রণয়ন করলেও প্রায় ৪ বছর পর ২০২২ সালের ২৭ ডিসেম্বর একটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এ সংক্রান্ত বিধিমালা প্রকাশ করে।
সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বাড়তি ফি'র পাশাপাশি সড়ক দুর্ঘটনার শিকার ব্যক্তিদের সহায়তায় তহবিল গঠনের জন্য পরিবহন মালিকদের একটি সুনির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দিতে হবে।
বাস, ট্রাক, লরি ও আরটিকুলেটেড লরির মালিকরা এই তহবিলে বছরে দেড় হাজার টাকা করে দেবেন। এই পরিমাণ মিনিবাস, মিনি ট্রাক ও পিকআপের জন্য ৭৫০; গাড়ি, এসইউভি ও মাইক্রোবাসের জন্য ৫০০ এবং থ্রি হুইলারের জন্য ৩০০ টাকা হবে।
এ ক্ষেত্রে মোটরসাইকেল মালিকরা এককালীন ১ হাজার টাকা দেবেন।
১০০ সিসি পর্যন্ত ৩ চাকার পরিবহনের নিবন্ধন খরচ ৬৩৫ টাকা থেকে বেড়ে ১ হাজার টাকা হবে। ১০০ সিসির চেয়ে বেশি সক্ষমতার সব ৩ চাকার পরিবহনের ক্ষেত্রে নিবন্ধন ফি ১ হাজার ১৫০ থেকে বেড়ে ১ হাজার ৮০০ টাকা হবে।
১০০ সিসি ও ১০০ সিসির চেয়ে বেশি সক্ষমতার মোটরসাইকেলের নিবন্ধন খরচ যথাক্রমে ২ হাজার ও ৩ হাজার টাকা, যা অপরিবর্তিত থাকছে। এছাড়াও শারীরিক প্রতিবন্ধীদের জন্য নির্মিত বিশেষ পরিবহনের নিবন্ধন খরচও ২৫ টাকা থেকে বাড়ানো হয়নি।
ড্রাইভিং স্কুলগুলোকে লাইসেন্সের জন্য ১৫ হাজারের পরিবর্তে ২৩ হাজার টাকা দিতে হবে। প্রশিক্ষকের লাইসেন্স খরচ ৭৫০ থেকে বেড়ে ২ হাজার করা হবে।
বিআরটিএ'র চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার জানান, সরকারি প্রজ্ঞাপন প্রকাশের পরপরই নতুন ফি ও আইনের ধারাগুলো কার্যকর হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার তিনি ডেইলি স্টারকে জানান, নতুন হারে ফি সংগ্রহের জন্য বিআরটিএ তাদের সিস্টেমকে প্রস্তুত করার জন্য কয়েকদিন সময় নিতে পারে।
তবে বিআরটিএর অপর এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, সংস্থাটি আগামী রোববার থেকে তহবিলের জন্য অর্থ সংগ্রহ করা শুরু করবে এবং ২ সপ্তাহের মধ্যে নতুন হারে ফি সংগ্রহ করবে।
বিআরটিএর নথি অনুযায়ী, বিগত অর্থবছরে সংস্থাটি ৫ লাখ ২৩ হাজার পরিবহণের নিবন্ধন করে এবং ৭ লাখ ৮৪ হাজার ড্রাইভিং লাইসেন্স, ৫ লাখ ৬৪ হাজার ফিটনেস সনদ ও ২ লাখ ৫ হাজার রুট পারমিট দিয়েছে।
সর্বশেষ ২০১৪ সালে বিআরটিএর ফি বাড়ানো হয়েছিল। ২০২১ এর শুরুতে মোটরসাইকেল নিবন্ধন ফি অর্ধেক করা হয়।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহর সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, জ্বালানি ও যন্ত্রাংশের মূল্য বৃদ্ধি ও সেতুতে টোলের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় ইতোমধ্যে পরিবহণ রক্ষণাবেক্ষণের খরচ ৪০ শতাংশ বেড়েছে। নতুন ফি চালু হলে গণপরিবহনের ভাড়া বেড়ে যেতে পারে বলে ইঙ্গিত দেন তিনি।
'এই পরিস্থিতিতে, যদি কর্তৃপক্ষ ফি বাড়ায়...তাহলে পরিবহন মালিকরা পরিবহণ ভাড়া সমন্বয় না করা পর্যন্ত বাস সেবা পরিচালনা করতে রাজি হবে না', বলেন তিনি।
সংক্ষেপিত: ইংরেজিতে পুরো প্রতিবেদন পড়তে ক্লিক করুন
অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান
Comments